তৈয়ব উল্লাহ নাসিম।।
কোনো দুর্যোগ এলে এর প্রভাব সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভূত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সব মানুষ। বর্তমান করোনা নামক মহামারী দুর্যোগও এর ব্যতিক্রম নয়। এই দুর্যোগের কারণে আল্লাহর ঘর মসজিদগুলো পর্যন্ত একরকম বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
অল্প ক'দিন পরই আসছে মহিমান্বিত রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস পবিত্র রমজানুল কারিম। যে মাসে সবাই স্বচেষ্ট থাকেন নিজেদের সিয়াম সাধনার পাশাপাশি এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রাখতে। রমজানের বিশেষ একটি এবাদত হল তারাবির নামাজ। সব মসজিদে চেষ্টা থাকে তারাবীর নামাজে খতমে কোরআনের সুন্নত জিন্দা রাখতে। আর এই খতমে তারাবীর মূল কারিগর যারা, তাঁরা হলেন সম্মানিত হাফেজ সাহেবগণ।
হাফেজ সাহেবগণ সারাবছর রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকেন, মুসল্লিদের কোরানের সুমধুর তেলাওয়াত শুনিয়ে এই তারাবীর নামাজে নিজেদের হেফজের এয়াদটাকে পাকাপোক্ত করার জন্যে। তারাবীর মধ্যে যদি তেলাওয়াত টা ভালোভাবে মুখস্থ শোনাতে পারেন, তাহলে নিজেরা নিজেদের হেফজ নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হন। কারণ সারা বছর বিভিন্ন ব্যস্ততায় কুরআনে কারীমের হেফজের হক আদায় করা হয়ে উঠে না। এর পাশাপাশি হাফেজ সাহেবরা কিছু হাদিয়াও পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে নিজেদের অনেক প্রয়োজনও গুছিয়ে নিতে পারেন।
তাই সারাদেশের লাখো হাফেজ সাহেব বর্তমানে চিন্তিত। মসজিদ কমিটিগুলোও, যাদের নতুন করে হাফেজ সাহেব দরকার, তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে কি করবে এই মুহূর্তে। কারণ একজন ভালো হাফেজ সাহেব নির্ধারণ করতে ইন্টারভিউ নিয়োগ ইত্যাদির অনেক ঝামেলা থাকে। যাদের পুরনো হাফেজ নির্ধারিত আছে, তাদের হয়ত বাড়তি চাপ নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুরো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মসজিদগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না আনার ব্যাপারে নির্দেশনা দিবে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ওলামায়ে কেরামের সাথে সমন্বয় করে শেষ সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি ও দৈনন্দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী খুব দ্রুত অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।
তাই প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করে প্রয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রেখে লাখো হাফেজ সাহেব এবং মসজিদ কমিটি গুলোর উদ্দেশ্যে একটা দিক নির্দেশনা জারি করতে পারেন। এই নির্দেশনায় তাঁরা মসজিদ কমিটিগুলো এবং হাফেজ সাহেবদেরকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রেখে প্রস্তুত থাকার জন্য বলতে পারেন। পাশাপাশি আল্লাহর কাছে যেন সবাই দোয়া করতে থাকেন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারাবি পড়াতে যেন কোন বিঘ্ন না ঘটে।
সাথে সাথে হাফেজ সাহেবদের হাদিয়ার ব্যাপারেও একটা দিক নির্দেশনা ওলামায়ে কেরাম দিতে পারেন। যেহেতু এটা হাদিয়া, হাদিয়ার মধ্যে নির্দিষ্ট অংক হয় না। সুতরাং তারাবি হোক বা না হোক, হাফেজ সাহেবদের কে হাদিয়া থেকে যেন বঞ্চিত না হতে হয়। মহামহিম আল্লাহ তাআলা তার ঘর মসজিদগুলোকে আবাদ করার ব্যবস্থা করে দিন। আমাদের সবাইকে এ মহামারী থেকে হেফাজত করুন।
-এ