মাওলানা ইমদাদুল হক।।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বিধি-৪ শাখা) হতে গত ১০ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা ও জনসচেতনতামূলক প্রজ্ঞাপনটি আমরা অনেকেই অনলাইনে দেখেছি। বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের একজন নাগরিক হিসেবে, সরকারের এ নির্দেশনামূলক প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা আমাদের জন্য অতিব জরুরি।
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিকালীন সময় পবিত্র রমজান মাসে আমরা যারা পবিত্র কুরআন শিক্ষার খেদমত বা প্রশিক্ষণ (বিশেষ কোর্স) পরিচালনা করে থাকি, এ প্রজ্ঞাপনের ৩ ও ৪ বিধি আমাকে কিছুটা আশাবাদী করে তুলেছে। আশাকরি আসন্ন রমজানে মসজিদে মসজিদে খতমে তারাবীহ, মাদ্রাসাগুলোতে হিফযুল কুরআন বিভাগ খোলা এবং নির্দিষ্ট একটি ফর্মেটে আমরা "ক্বিরাআত প্রশিক্ষণ" চালু করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
প্রজ্ঞাপনের ১ নং ধারায় উল্লেখিত সাধারণ ছুটির ভেতরে ৩ নং ধারায় সম্মতি আকারে বলা হয়েছে, "প্রয়োজনে রপ্তানিমুখি শিল্পকারখানা চালু রাখতে পারবে। একিভাবে ৪ নং ধারায় "সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখতে, বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে বলা হয়েছে।" জীবনের তাগিদে সরকারের এ সিদ্ধান্তগুলো যথার্থ হলে, ঈমান-আকীদার টানে সম্পূরক কিছু প্রস্তাব বা আশাতো আমরা করতেই পারি! সে হিসেবে যুগযুগ ধরে চলে আসা আমাদের কুরআনিক কার্যক্রম নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
জনসমাগম ও সামাজিক দূরত্বের ক্ষেত্রে ৩ নং ধারার যৌক্তিকতায় আমি প্রশ্ন তুলছি না। এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য ও বিতর্কও করতে চাই না। সর্বশেষ সাধারণ ছুটির পর ১লা রমজান হতে আমরা আমাদের কুরআন শিক্ষার কার্যক্রম চালু রাখতে পারলেই হলো। আমরা বিশ্বাস করি, সতর্কতার সাথে কুরআনের তা'লীম চালিয়ে যেতে পারলে, চলমান মহামারি হতে আমাদের উত্তোরণ সম্ভব। কুরআনের চর্চা বন্ধ রাখলে, বলা যায়না হিতে বিপরীতও হতে পারে। চোখ খুলে দেখুন- এই বিপদ, সংকটে অমুসলিমরাও আজ ইসলাম ও কুরআনের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। কেননা, কুরআন হচ্ছে, "শিফাউল লিন নাস"। মানবতার মুক্তির একমাত্র ঠিকানা। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থেই, এখান থেকে আমাদেরে ভাবনা ও চিন্তার খোরাক নেওয়া উচিৎ। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মহিমান্বিত মাহে রমজানুল মুবারক কুরআন নাযিলের মাস। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে আসা এ পবিত্র মাসে মুসলমানরা তুলনামূলক ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি মনোযোগী হয়ে থাকে। ঘরে ঘরে হয় কুরআনের চর্চা। স্থানে স্থানে শিশু-কিশোর, বালক-বালিকা, যুবা-তারুণ্য, বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের মাঝে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে কুরআন ও মাসআলা মাসাঈলের তা'লীম দেয়া হয়। হাফেজে কুরআনদের তিলাওয়াতে মুখরিত হয় মসজিদের দেশ প্রিয় বাংলাদেশ। ক্বারী সাহেবানদের সুললিত কন্ঠে, মাশক্বের আওয়াজে এক অনাবিল শান্তি, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয় গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে। এ এক জান্নাতি আমেজ।
আমরা আশাবাদী মাহে রমজান ও পবিত্র কুরআনের বদৌলতে আমাদের দেশসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। মাগফিরাতের মাসে আল্লাহপাক অবারিত রহমত বর্ষণ করে আমাদের সকল কাজে বরকত দান করবেন ইনশাআল্লাহ। তাই মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে- ২৩ এপ্রিলের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ের পালস, ভাষা, আকুতি বুঝে, নিরাপদ পরিবেশে কুরআন চর্চার ময়দানকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। দেশব্যাপী কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হোক। এতে সর্বোতভাবে কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ চাইলে মুহুর্তেই সবকিছু সম্ভব। "কুন ফায়াকুন"। তাই কুরআন প্রেমিরা বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফারের আমলে নিয়োজিত থাকি। দুয়া করি, রাব্বুল আলামীন যেনো বিশ্ব পরিস্থিতিকে দ্রুত শান্ত করে দেন। আমাদেরকে তাঁর কালামে পাকের খেদমত করার সুযোগ করে দেন। অনুকূল পরিবেশে আমাদের নামাজ, তারাবীহ, কুরআনের প্রশিক্ষণসহ সকল আয়োজন বাস্তবায়নের তাওফিক দান করেন। আমীন।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, আঞ্জুমানে তা'লীমুল কুরআন বাংলাদেশ।
-এটি