শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সারা দেশের ১৬৬টি চা-বাগানে ছুটির দাবিতে মানববন্ধন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম: ।।

সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শ্রমিকদের মজুরিসহ চা-বাগান বন্ধের দাবিতে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে ১৬৬টি চা-বাগানে ১০ মিনিটের ‘বিশেষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

আজ শনিবার কাজে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সকাল ৯টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে চা-বাগানগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সারাদেশে ১৬৬টি চা-বাগানেই শান্তিপূর্ণভাবে চা-শ্রমিকেরা বিশেষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধন শেষে শ্রমিকেরা যার যার বাগানে কাজে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনও এক বিজ্ঞপ্তিতে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চা-বাগানগুলোতেও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় শ্রমিকদের মজুরিসহ চা-বাগান বন্ধের দাবি করেছে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লেবার হাউসে এক সভায় এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করার কথা।

এ ছাড়া প্রতিটি চা-বাগানে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষ থেকে বাগান ব্যবস্থাপকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে প্রথম ২৬ মার্চ এবং দ্বিতীয়বার গত ৬ এপ্রিল মজুরিসহ চা-বাগান বন্ধের আবেদন করা হয়।

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, সারাদেশে ১৬৬ চা-বাগানে শনিবার সকাল ৯টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১০জন প্রতিনিধি ১০ মিনিটের বিশেষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা-বাগান ও আলীনগর চা-বাগানের কর্মসূচিতে অংশ নেন চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী। তিনি দুটি স্থানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

জেলার রাজনগর উপজেলার মাথিউরা, রাজনগর, উদনাছড়া, করিমপুরসহ সব বাগানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ফাঁড়ি চা-বাগানসহ ২৩০টি চা-বাগানে এই কর্মসূচি পালন করার কথা। এসব বাগানে নিয়মিত ১ লাখসহ প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক আছেন। অন্যদিকে চা-বাগানে বসবাসকারী লোকসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।

শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, সারাদেশের প্রায় সব কটি উপজেলার চা-বাগানে বিশেষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ বাধা দেয়নি। মানববন্ধন শেষে তাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে চা-বাগানের কাজে কোনো বাধা হয়নি।

তিনি বলেন, সিলেটে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকেও কর্মসূচি পালনের খবর এসেছে। আমাদের কমিটি বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করি, মালিকপক্ষ মানবিক হবে। অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিল রেখে তারা চা-বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবে।

চা-বাগান বন্ধের দাবী নিয়ে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ চা-সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, চা-বাগানে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। করোনার সংক্রমণ রোধে আগে থেকেই বাগানগুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের মাস্ক-সাবান দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে। আর চায়ের ব্যবসা এমনিতেই খারাপ। ছুটি দিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এর প্রভাব শ্রমিকদের ওপরও পড়বে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে চা-বাগানে ছুটি ঘোষণার কোনো নির্দেশনা নেই। এ ব্যাপারে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা দরকার।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ