ফারুক ফেরদৌস।।
করোনা-মহামারীর সময় মসজিদে জামাত কেমন হবে বা হবে কি না এটি মুজতাহাদ ফীহ বিষয়। এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। এ বিষয়ে এমন কি সাহাবী-তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ যুগের বা অতীতের কোনো সময়কালেরই কোনো দৃষ্টান্ত নেই। করোনা-মহামারীর ধরণ সম্পূর্ণ নতুন এবং এর সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপটও নতুন। সুতরাং এ বিষয়ে নানা মত থাকা স্বাভাবিক এবং কোনো মতের পক্ষের মানুষেরই নিন্দা করা সমীচীন নয়।
কেউ মনে করতেই পারেন জামাত পুরোপুরি বন্ধ থাকা উচিত। কেউ মনে করতে পারেন সীমিত থাকলেই যথেষ্ট। আবার অনেকেই মনে করতে পারেন জামাতে অংশগ্রহণ না করার সুযোগ রেখে অর্থাৎ জামাতে অংশগ্রহণ না করাকে বৈধ ঘোষণা করে মসজিদ খোলা রাখা উচিত। সরকার কোনো এক পক্ষের মত গ্রহণ করতে পারে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু ওই মত পোষণ করতে আপনি সবাইকে বাধ্য করতে পারেন না। নিজের মতের পক্ষে বলার অধিকার থেকেও কাউকে বঞ্চিত করতে পারেন না। অসহনশীলতার যে চর্চাটা আমরা যে কোনো ভিন্নমতের ক্ষেত্রেই দেখি, এ ক্ষেত্রেও কিছু কিছু দেখতে পাচ্ছি।
প্লেগ-মহামারীর সময়ও সব সাহাবীর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-ভাবনা এক রকম ছিল না। ইমাম তাবারী রহ. বর্ণনা করেন, যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়লো, আবু ওবায়দা সেনাবাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বললেন, এই মহামারী তোমাদের ওপর আল্লাহর রহমত। তোমাদের নবী তোমাদের ডাকছেন। এই রোগে তোমাদের নেক ব্যক্তিদের মৃত্যু হবে।
নিশ্চই আমি আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ আমাকেও এই রহমত দান করুন। এরপর প্লেগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হলো এবং মুআয ইবনে জাবাল তার স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বললেন, এই মহামারী তোমাদের ওপর আল্লাহর রহমত। তোমাদের নবী তোমাদের ডাকছেন। এই রোগে তোমাদের নেক ব্যক্তিদের মৃত্যু হবে।
নিশ্চই আমি আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ আমার পরিবারের ওপর এই রহমত বর্ষণ করুন। এই দোয়ার পর তার ছেলে আব্দুর রহমান প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে নিজের জন্যও এই রহমত চাইলেন। এরপর তার হাতে প্লেগের ফোড়া উঠলো। তিনি এটা দেখে বললেন, দুনিয়ার কোনো কিছুই আমার কাছে এর মত প্রিয় নয়। দুনিয়ার কোনো কিছুর বিনিময়েই এই নেয়ামত ত্যাগ করতে আমি রাজি হবো না। তার মৃত্যুর পর আমর ইবনুল আস তার স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বললেন, মহামারী আগুনের মত প্রজ্বলিত হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে। তোমরা পাহাড়ে উঠে এই আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো।
আমাদের মধ্যেও আমর ইবনুল আসের মত চিন্তা-ভাবনার মানুষ যেমন থাকতে পারে, আবু ওবায়দা ও মুআযের মত চিন্তা ভাবনার মানুষও থাকতে পারে। সুতরাং কোনো পক্ষ থেকেই আক্রমণাত্মক সমালোচনা কাম্য নয়।
-এটি