মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী।।
মহামারি করোনা ভাইরাসে গোটা দুনিয়া বিপর্যস্ত। চারিদিকে শুধু লাশ আর বোবাকান্না। গভীর রাতের আঁধারের মতো দিনদুপুরে সর্বত্র পিনপতন নীরবতা আর ভুতুড়ে পরিবেশ। ভয়ভীতি, দুশ্চিন্তায় গোটা মানবজাতি বাকরুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবেতিহাসে ইতোপূর্বে কয়েকবার মহামারি সংঘটিত হলেও গতি, বিস্তৃতি এবং প্রকৃতিতে এটিই সবচেয়ে ভয়ংকর। এ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ এবং আরোও আক্রান্ত রয়েছেন ষোলো লক্ষ পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ।
মহান আল্লাহ তায়ালা কী নিপুণভাবে আমাদেরকে সতর্ক করে দিলেন। পৃথিবীর পরাশক্তিসহ ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শক্তিশালী, ক্ষমতাবানদেরকে বিন্দুপরিমাণ জীবের কাছে অক্ষম করে ফেললেন। ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না, অদৃশ্য জীবাণুর কাছে- শক্তি, সাহস, প্রযুক্তি যা কিছু বলেন সবই- নতজানু, পরাজিত। সকল শক্তি আজ আল্লাহ তায়ালার কাছে দু'হাত জোড় করে আত্মসমর্পিত। আল্লাহু আকবার।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে অবকাশ দিতে থাকেন অতঃপর হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দেন, যাতে করে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকেরা তা থেকে শিক্ষা নেয় এবং মহাপরাক্রমশালী রবের দিকে ফিরে আসে। কোরআন কারিমের ভাষায়- 'জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে।' (সুরা আলে ইমরান : ৭)
সন্দেহ নেই, মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের কৃতকর্ম তথা পাপের ফসল। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।' (সুরা রুম: ৪১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন-'‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজাহ : ৪০১৯)
আলী রা. বলেন- 'মানুষের প্রতিটি বিপদের কারণ হচ্ছে তার গোনাহ, আর তওবা ব্যতীত গোনাহ কোনোভাবেই কাটে না'।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি এবং উপলব্ধি শক্তি দিয়ে মর্যাদাবান করেছেন। আসুন, আমরা করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষা নিই। মহামারিকে নয় বরং এর অধিপতি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি এবং তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহ অর্জনে আত্মনিয়োগ করি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'হে রাসুল, আপনি বলে দিন- হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ- আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা যুমার : ৫৩)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- 'আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া (খোদাভীতি) অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্ৰা।' (সুরা তালাক্ব : ২,৩)
আসুন, যাবতীয় ফরজ-ওয়াজিব আদায়ের পাশাপাশি কোরআন কারিম তেলাওয়াত, তওবা, ইস্তেগফার, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অধিক হারে দুরুদ পাঠ, সাধ্যানুযায়ী দান-সদকা ইত্যাদি নফল ইবাদতে আমরা মনোনিবেশ করি । কুরআন-হাদিসে এসব আমলের ফযিলত বর্ণনায় বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করেন, ক্ষমা করেন, বিপদ-আপদ দূর করেন, রোগমুক্ত করেন, জীবনকে সমৃদ্ধ ও কল্যাণময় করেন, এমনকি একটা পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করে তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, প্রিয় করে নেন এবং সকল প্রয়োজন পূর্ণ করে দেন।
ইরশাদ হচ্ছে- 'তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো অতঃপর তাঁর দিকে মনোনিবেশ করো, নিশ্চয় আমার প্রভু পরম দয়ালু, অতীব ভালোবাসা পোষণকারী।' (সুরা হুদ : ৯০)
মহান রাজাধিরাজ এবং পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সুরক্ষা করুন। বিশ্ববাসীকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ করুন।
-এএ