এস.এম. তাকী (শোয়াইব মুহাম্মদ তাকী)
শবে বরাতের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। বিভ্রান্তও হচ্ছেন অনেক মুসলিম। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, বিজ্ঞ আলেম আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি।
শবে বরাতের ফজিলত ভিত্তিহীন নয়!
শবে বরাতের আমল হাদিস দ্বারা প্রমানীত নয় এমনটি বলা সম্পূর্ণ ভূল। শবে বরাতের ফাজায়েল বর্ণিত বিভিন্ন হাদিস অন্তত দশজন সাহাবা সাহাবায়ে কেরাম রাযি. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য থেকে দু-একটি হাদীস সনদের বিবেচনায় অবশ্যই দুর্বল । যার কারণে কিছু উলামায়ে কেরাম এ রাতের ফযীলতকে ভিত্তিহীন বলেছেন।
কিন্তু মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে বলেছেন: সনদের বিবেচনায় কোনো হাদীস যদি কমজোর হয়, যার সমর্থনে আরো হাদীস পাওয়া যায়, তাহলে সেই হাদীস আর দুর্বল থাকে না। আর দশজন সাহাবা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং যার সমর্থনে দশজন সাহাবার হাদীস রয়েছে, সেই বিষয়টি আর ভিত্তিহীন থাকে না। তাকে ভিত্তিহীন বলা ভুল হবে।
শবেবরাত এবং খায়রুল কুরুন
তিনটি যুগ মুসলিম উম্মাহর নিকট শ্রেষ্ঠ যুগ। সাহাবায়ে কেরামের যুগ, তাবেঈর যুগ, তাবে-তাবেঈর যুগ। এ তিন যুগেও দেখা গেছে, শবে বরাত ফযীলতময় রাত হিসাবে পালন করা হতো। মানুষ এ রাতে ইবাদতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতো। সুতরাং একে বিদআত আখ্যা দেয়া অথবা ভিত্তিহীন বলা উচিত নয়। এ রাত ফযীলতময়; এটাই সঠিক কথা। এ রাতে ইবাদতের জন্য জাগ্রত থাকলে এবং ইবাদত করলে অবশ্যই সওয়াব পাওয়া যাবে। এ রাতের অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
বিশেষ কোনো ইবাদত নির্দিষ্ট নেই
এটা ঠিক যে, এ রাতে ইবাদতের বিশেষ কোনো তরিকা নেই। অনেকে মনে করে থাকে, এ রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে নামায পড়তে হয়। যেমন প্রথম রাকাতে অমুক সূরা এতবার পড়তে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে অমুক সুরা এতবার পড়তে হয়। মূলত এগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা, বরং এ রাতে যত বেশি সম্ভব হয় নফল নামায পড়বে, কুরআন তেলাওয়াত করবে, যিকির করবে, তাসবীহ পড়বে, দুআ করবে, এ সকল ইবাদত এ রাতে করা যাবে। কারণ, এ রাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই।
এ রাতে কবরস্থানে গমন
এ রাতের আরেকটি আমল আছে। একটি হাদীসের মাধ্যমে যার প্রমাণ মিলে। তা হলো এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকীতে তাশরীফ নিয়েছিলেন। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকীতে এ রাতে গিয়েছেন, তাই মুসলমানরাও এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমার আব্বাজান মুফতী শফী (রহ.) বড় সুন্দর কথা বলেছেন, যা সব সময়ে স্মরণ রাখার মতো কথা। তিনি বলেছেন : যে বিষয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেভাবে প্রমাণিত, সেই বিষয়কে ঠিক সেভাবেই পালন করা উচিত। বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবনে এক শবে বরাতে জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেহেতু তিনি একবার গিয়েছেন, অতএব জীবনে যদি এক শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া হয়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি প্রতি শবে বরাতে গুরুত্বের সাথে কবরস্তানে যাওয়া হয়, একে যদি জরুরি মনে করা হয়, একে যদি শবে বরাতের একটি অংশ ভাবা হয় এবং কবরস্থানে গমন করা ছাড়া শবে বরাতই হয় না মনে করা হয়, তাহলে এটা হবে বাড়াবাড়ি।
সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণে জীবনের এক শবে বরাতে কবরস্থানে গমন করলে এটা হবে সওয়াবের কাজ। হ্যাঁ, অন্যান্য শবে বরাতেও যাওয়া যাবে। কিন্তু যাওয়াটা জরুরি ভাবা যাবে না, নিয়ম বানিয়ে নেয়া যাবে না। মূলত দ্বীনকে সহীহভাবে বুঝবার অর্থ এগুলোই। যে জিনিস যে স্তরের, সেই জিনিসকে সেভাবেই মূল্যায়ন করতে হবে। বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
নফল নামায বাড়িতে পড়বে
শুনেছি, অনেকে এ রাতে এবং কদরের রাতে জামাতের সাথে নফল নামায পড়ে। শবিনার মতো এখন সালাতুত তাসবীহকেও জামাতের সাথে পড়া হয়। মূলত সালাতুত তাসবীহর জন্য জামাত নেই। এটি জামাতের সাথে পড়া না-জায়েয। এ প্রসঙ্গে একটি মূলনীতি শুনুন। মুলনীতিটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। তা হলো ফরয নামায এবং যেসব নামায রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের সাথে আদায় করেছেন। যেমন তারাবীহ, বিতর এবং ইসতিসকা ইত্যাদির নামায- এ সকল নামায ছাড়া অবশিষ্ট সব ধরনের নামায বাড়িতে পড়া উত্তম। ফরয নামাযের বৈশিষ্ট্য হলো, জামাতের সাথে আদায় করা।
ফরয নামাযের ক্ষেত্রে জামাত শুধু উত্তমই নয়; বরং ওয়াজিবের কাছাকাছি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর সুন্নাত ও নফল নামাযের বেলায় মূলনীতি হলো, এগুলো আদায় করবে নিজের ঘরে। কিন্তু ফুকাহায়ে কেরাম যখন লক্ষ্য করলেন, মানুষ অনেক সময় ঘরে পৌছে সুন্নাতকে রেখে দেয়। তারা সুন্নাত পড়ে না, ফাঁকি দেয়। ফুকাহায়ে কেরাম তখন ফতওয়া দিলেন, ঘরে চলে গেলে সুন্নাত ছুটে যাবার আশঙ্কা থাকলে মসজিদেই পড়ে নিবে। সুন্নাত যেন ছুটে না যায় তাই এই ফাতওয়া। অন্যথায় মূলনীতি হলো, সুন্নাত ঘরে পড়বে। আর নফল নামাযের বেলায় সকল ফকীহ ঐক্যমত যে, নফল নামায ঘরে পড়া উত্তম। হানাফী মাযহাব মতে নফল নামাজ জামাতের সাথে পড়া মাকরূহে তাহরীমী তথা না-জায়েয। সুতরাং নফল নামায জামাতের সাথে পড়লে সওয়াব তো দূরের কথা; বরং গুনাহ হবে।
নফল নামায একাকী পড়াই কাম্য
পক্ষান্তরে নফল এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা পরওয়ারদেগারের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কের মাঝে থাকবে তুমি আর তোমার প্রভু। গোলাম আর রবের একান্ত বিষয় এটা। যেমন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর ঘটনা । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: আপনি এত নিম্নস্বরে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি উত্তরে বলে ছিলেন, যে পবিত্র সত্ত্বার সাথে আমি চুপিসারে আলাপ করছি, তাকে তো শুনিয়ে দিচ্ছি। সুতরাং অন্য মানুষকে শুনানোর কী প্রয়োজন?
অতএব নফল ইবাদত নির্জনেই পড়া ভালো। যেহেতু এটা গোলাম আর প্রভুর একান্ত বিষয়। তাই এর মধ্যে কোনো অন্তরায় থাকা কাম্য নয়। আল্লাহ চান, বান্দা যেন সরাসরি তার সাথে সম্পর্ক করে। নফল নামায জামাতের সাথে পড়া কিংবা সম্মিলিত ভাবে মাকরূহ এ কারণেই। নফল নামাযের ক্ষেত্রে বিধান হলো, নির্জনে একাকি পড়ো। পরওয়ার দেগারের সাথে সরাসরি সম্পর্ক কায়েম করো । এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার । চিন্তা করুন, বান্দার কত শান।
নেয়ামতের অবমূল্যায়ন
যেমন তুমি কোনো রাজা-বাদশাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে। বাদশাহ বললেন: আজ রাত নয়টা বাজে আমার সাথে দেখা করবে। সঙ্গে কাউকে আনবে না; তোমার সাথে প্রাইভেট আলাপ আছে। যখন রাত নয়টা হলো। তুমি বন্ধু-বান্ধবের একটা দল বাঁধলে। তারপর সবাইকে নিয়ে বাদশাহর দরবারে গেলে। এবার বলো, তুমি বাদশাহর কথার মুল্যায়ন করলে, না অবমূল্যায়ন করলে? বাদশাহ তোমাকে প্রাইভেট সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছিলেন। বিশেষ সম্পর্কের আহ্বান করেছিলো। নির্জনে তোমাকে ডেকেছিলো। আর তুমি দলবদ্ধ হয়ে তার অবমূল্যায়ন করলে।
এজন্য ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলতেন : নফল ইবাদতের সঠিক মূল্য দাও।
নফল ইবাদতের সঠিক মূল্য হলো, তুমি থাকবে আর তোমার আল্লাহ থাকবেন। তৃতীয় কেউ থাকতে পারবে না। এটাই নফল ইবাদতের বিধান। নফল ইবাদত জামাতের সাথে করা মাকরূহে তাহরীমী। আল্লাহর আহ্বানের প্রতি লক্ষ্য করুন। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'আছো কি মাগফিরাতের কোনো প্রত্যাশী যে, তাকে আমি মাফ করতে পারি?" অর্থাৎ একক ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? একক রহমত প্রত্যাশী আছো কি? তাহলে আল্লাহ আমাকে, শুধু আমাকেই নির্জনে ডাকছেন । অথচ আমি শবিনার ইন্তিজাম করলাম, আলোকসজ্জা করলাম, দলবদ্ধ হলাম, তাহলে এটা কি আসলেই সমীচীন হলো? এটা তো আল্লাহর পুরস্কারের অবমূল্যায়ন হলো।
একান্ত মুহূর্তগুলো
এ ফযীলতময় রাতটি শোরগোল করার জন্য নয় কিংবা সিন্নি-মিঠাই বিলি করার জন্য নয় অথবা সম্মেলন করার জন্যও নয়। বরং এ বরকতময় রাত আল্লাহর সঙ্গে একান্তে সম্পর্ক গড়ার রাত, যে সম্পর্কের মাঝে কোনো অন্তরায় থাকবে না। যেমন কবি বলেন- “আশেক আর মাশুকের ভেদ কিরামান কাতিবীনেরও অগোচরে থেকে যায়।”
অনেকে অনুযোগের সুরে বলে, একাকি ইবাদত করতে গেলে ঘুম চলে আসে। মসজিদ যেহেতু লোকজনের সরগরম থাকে, আলো-বাতি থাকে, তাই মসজিদে ইবাদত করলে ঘুম আর কাবু করতে পারে না। বিশ্বাস করো, নির্জন ইবাদতে যে কয়েকটি মুহূর্ত কাটাবে, যে স্বল্প সময়ে আল্লাহর সাথে তোমার প্রেম বিনিময় হবে, তা সারা রাতের ইবাদতের চেয়েও অনেক উত্তম। কারণ, এটা তখন সুন্নাত মতে হবে। ইখলাসের সাথে কয়েক মুহূর্তের ইবাদত সারা রাতের ইবাদতের চেয়েও ফযীলতপূর্ণ হবে।
সময়ের পরিমাণ বিবেচ্য নয়!
আমি সব সময় বলে থাকি, নিজের বুদ্ধির ঘোড়া চালানোর নাম দ্বীন নয়। নিজ বাসনা পূর্ণ করার নাম দ্বীন নয়। বরং দ্বীনের উপর আমল করার নাম দ্বীন। দ্বীনের অনুসরণ করার নাম দ্বীন। তুমি মসজিদে কত ঘণ্টা কাটিয়েছ, আল্লাহ তাআলা এটা দেখেন না। আল্লাহর কাছে ঘন্টার কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ তাআলা মূল্যায়ন করেন ইখলাসের। ইখলাসের সাথে ইবাদত করলে অল্প আমলই ইনশা আল্লাহ নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। সুন্নাহ বিহীন আমল যত বিশালই হোক না কেন, তার কোনো মূল্য নেই।
ইখলাস কাম্য
নির্জন ইবাদতের সময় ঘুম আসে এরূপ চিন্তা করো না। ঘুম এলে ঘুমাও। ইবাদত যতটুকু করবে, সুন্নাত মোতাবেক করবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত হলো, তেলাওয়াতের সময় ঘুমের চাপ হলে ঘুমিয়ে পড়ো। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে তারপর উঠো এবং তেলাওয়াত করো। কারণ, চোখে ঘুম রেখে তেলাওয়াত করলে মুখ দিয়ে ভুল শব্দও চলে আসতে পারে। একজন সারা রাত ইবাদত করলো, অন্যজন মাত্র এক ঘন্টা ইবাদত করলো। প্রথমজনের ইবাদত ছিলো সুন্নাত পরিপন্থী। আর দ্বিতীয়জনের ইবাদত ছিলো সুন্নাত অনুযায়ী। তাহলে প্রথম জনের তুলনায় দ্বিতীয়জনই উত্তম।
ইবাদতে বাড়াবাড়ি করো না
আল্লাহ তাআলার দরবারে আমল গণনা করা হবে না। তিনি দেখবেন আমলের ওজন। সুতরাং কী পরিমাণ আমল করলে এটা দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় হলো কেমন আমল করলে। অযোগ্য আমলে কোনো ফায়দা নেই। ইবাদত পালনকালে বাড়াবাড়ির আশ্রয় গ্রহণ করো না। যে আমল যেভাবে এসেছে, সেই আমল সেভাবেই পালন করো। যে ইবাদত জামাতের সাথে প্রমাণিত, সেই ইবাদত জামাতের সাথে করো। যেমন ফরয নামাযের জন্য জামাত আছে। রমযানের তারাবীহর নামাযের ক্ষেত্রেও জামাতের বিধান আছে। রমযানের বিতর নামাযেও জামাতের হুকুম আছে। অনুরূপভাবে জানাযার নামাযের জামাতও ওয়াজিব আলাল কিফায়াহ। দু' ঈদের নামাযের জন্যও জামাতের বিধান প্রমাণিত। ইসতিসকা এবং কুসুফের নামায সুন্নাত হলেও জামাতের বিধান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। তাছাড়া শিআরে ইসলাম হওয়ার কারণে এতদুভয়ে জামাত জায়েয। এই সব নামায ব্যতীত যত নামায আছে, সেগুলোতে জামাত আছে বলে প্রমাণিত নয়। অবশিষ্ট নামাযগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ চান, বান্দা নির্জনে, একান্তে আদায় করুক। এটা বান্দার জন্য বিশেষ মর্যাদা। এ মর্যাদার কদর করা উচিত।
মহিলাদের জামাত
মহিলাদের জামাতের ব্যাপারে মাসআলা হলো, তাদের জন্য জামাত করা শরীয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় ৷ ফরয, সুন্নাত এবং নফলসহ সকল নামায তারা একাকি পড়বে। আবারো একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, মূলত দ্বীন হলো শরীয়তের অনুসরণ। তাই হৃদয়ে কামনা-বাসনা ছাড়তে হবে। যেভাবে যেইবাদত করার জন্য বলা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই সেই ইবাদত করতে হবে। মন তো অনেক কিছু চায়। এজন্য যে তা দ্বীনের অংশ হবে এমন নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা মনের বিপরীত হলেও করতে হবে।
শবে বরাত এবং হালুয়া
শবে বরাত তো আলহামদুলিল্লাহ ফযীলতময় রাত। ইখলাসপূর্ণ ইবাদত যতটুকু সম্ভব ততটুকু করবে। এছাড়া অবশিষ্ট অহেতুক কাজ যেমন হালুয়া-রুটি পাকানো বর্জন করবে। কেননা, হালুয়ার সাথে শবে বরাতের কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে শয়তান সবখানেই ভাগ বসাতে চায়। সে চিন্তা করলো, শবে বরাত মুসলমানের গুনাহ মাফ হয়। যেমন এক হাদিসে এসেছে, এ রাতে আল্লাহ তাআলা বনু কালব গোত্রের বকরীর পাল সমূহে যত পশম আছে, সেই পরিমাণ গুনাহ মাফ করেন। শয়তান চিন্তায় পড়ে গেলো, এত মানুষের গুনাহ মাফ হলে যে আমি হেরে যাবো। সুতরাং শবে বরাতে আমিও ভাগ বসাবো।
এ চিন্তা করে সে মানুষকে কুমন্ত্রণা দিলো যে, শবে বরাতে হালুয়ার ব্যবস্থা করো। এমনিতে অন্য কোনো দিন হালুয়া পাকানো না-জায়েষ নয়। যার যখন মনে চাবে, হালুয়া পাকাবে, শিন্নি রান্না করবে। কিন্তু শবে বরাতের সাথে হালুয়ার কী সম্পর্ক? কুরআনে এর প্রমাণ নেই। হাদীসে এর অবস্থান নেই। সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনাতে এটা পাওয়া যায় না। তাবিঈনদের আমল কিংবা বুযুর্গানে দ্বীনের আমলেও এর নিদর্শন মিলে না। সুতরাং এটা শয়তানের ষড়যন্ত্র ৷ উদ্দেশ্য মানুষকে সে ইবাদত থেকে ছাড়িয়ে এনে হালুয়া-রুটিতে ব্যস্ত রাখবে। বাস্তবেও দেখা যায়, আজকাল ইবাদতের চেয়েও যেন হালুয়া-শিন্নির গুরুত্বই বেশি।
বিদআতের বৈশিষ্ট্য
আজীবন মনে রাখবেন, আমার আব্বাজান মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলতেন : বিদআতের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ যখন বিদআতে লিপ্ত হয়, ধীরে ধীরে তখন সুন্নাতের আমল তার কাছ থেকে বিলুপ্ত হয়। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, শবে বরাতে যারা সালাতুত তাসবীহ গুরুত্বসহ পড়ে, এর জন্য কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।
তাদের অধিকাংশকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাতে দেখা যায় না। আর যে লোকটি বিদআতে অভ্যস্ত। যেমন শিন্নি- রুটি পাকানোর পেছনে থাকে ব্যস্ত, সেই বেশি ফরয নামায সম্পর্কে থাকে নির্লিপ্ত। তার নামায অধিক কাযা হয়। জামাত প্রায়ই ছুটে যায়। এসব অপরিহার্য বিধান ছুটে যায়। আর বিদআত কাজে খুব ব্যস্ততা দেখায়।
শবে বরাতের রোযা
বরাতের রাতের পরের দিন রোযা রাখার বিষয়ে পুরা হাদীসের ভান্ডারে এ সম্পর্কে শুধু একটি হাদীস পাওয়া যায়। তাও বর্ণনাসূত্র দুর্বল। এজন্য কোনো কোনো আলেম বলেছেন: বিশেষভাবে শা"বানের পনের তারিখের রোযাকে সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব আখ্যা দেয়া জায়েষ নয়। হ্যাঁ, শুধু দু'দিন ব্যতীত পুরা শা"বান মাসের রোযার ফযীলত হাদীস দ্বারা সুপ্রমাণিত।
অর্থ্যাৎ শাবানের এক তারিখ থেকে সাতাশ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখার ফযীলত আছে। আর আটাশ ও উনত্রিশ তারিখের রোযা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন: রমযানের এক দু'দিন পূর্বে রোযা রেখো না। যাতে রমযানের রোযা পালনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার।
সূত্র- ইসলাহী খুতুবাত উর্দূ - চতুর্থ খন্ড- ২৫৭-২৭০ পৃষ্ঠা।
-এটি