সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

শবে বরাতে এ পাঁচটি আমল করুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুবায়ের রশীদ।।

'শবে বরাত' একটি বরকতময় রজনী। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া রাতসমূহের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রাত। এক বিরল সৌভাগ্যের রাত। ইবাদত ও দুআ কবুলের রাত। শবেবরাত এবং এই রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তাবেয়ীনের যুগ থেকে অদ্যবধি এ রাতে বিশেষভাবে নফল ইবাদত ধারাবাহিকতার সাথে চলে আসছে। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা এ রাতের ফজীলত বর্ণিত রয়েছে।

হযরত আলী বিন আবু তালীব রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে (শবে বরাত) তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। (সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস: ৩৮২২)

হযরত আয়শা রাদি. বলেন, এক রাতে রাসুল সা. কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে (মদীনারত কবরস্থান) গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়শা? (তুমি যে তালাশে বের হলে?) তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? (তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?) হযরত আয়েশা রাদি. বললেন, আমার ধারণা হয়েছিলো আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসুল সা. তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ২৬০২৮)

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন। এ রাতে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত যদিও নেই কিন্তু রাসুলের আমল দ্বারা বিশেষ কিছু ইবাদত প্রমাণিত হয় যা তিনি করেছেন। সেসবের মধ্য থেকে পাঁচটি মর্যাদাপূর্ণ আমল নিম্নে আলোকপাত করা হলো।

এক. দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া। শাবান মাসের ১৫ তম রাত তথা শবে বরাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়তেন। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা রাদি. বলেন, এক রাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে ওঠে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই নামাযে এতো দীর্ঘ সময় তিনি সিজদাবনত ছিলেন যে, আমার সন্দেহ হচ্ছিল তিনি ইন্তেকাল করেছেন কিনা। আমি উঠে গিয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। আঙুলটি নড়ে উঠল। আমি নিশ্চিত হলাম যে তিনি বেঁচে আছেন। অতঃপর আমি আপন স্থানে ফিরে এলাম। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামাজ শেষ করে এক পর্যায়ে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি ভেবেছ যে, আল্লাহর নবী তোমার উপর কোন অবিচার করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এমন কিছুই ভাবিনি। আমি বরং আপনাকে দীর্ঘ সময় সিজদায় দেখে ভয় পাচ্ছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ পাক উঠিয়ে নিলেন কিনা! অতঃপর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ রাতটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী। এতে মহান প্রভু তার বান্দাদের উপর বিশেষ দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করে দেন। রহমতপ্রার্থীদের রহমত দান করেন। অপরদিকে পরশ্রীকাতর ব্যক্তিদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন। ( শুয়াবুল ঈমান, হাদীস: ৩৮৩৫, আত তারগীব, পৃষ্ঠা: ২৪২)

দুই. সালাতুত তাসবীহ পড়া। সালাতুত তাসবীহ একটি স্বতন্ত্র আমল। শবে বরাতের সাথে সম্পর্কিত কোন আমল নয়। তবে মানুষ যেহেতু এ রাতে বেশি বেশি ইবাদতে নিয়োজিত থাকে। অধিক পরিমাণে নফল নামাজ পড়ে। তাই সালাতুত তাসবীহকে কেউ এ রাতের বিশেষ ইবাদত মনে না করে আদায় করতে পারে। হাদীসে এর বিশেষ ফজীলত বর্ণিত রয়েছে। জীবনে অন্তত একবার হলেও এ নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ নামাজ আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। মসজিদের ইমাম বা কোন আলেমের নিকট থেকে জেনে এই রাতে উক্ত আমল করা যেতে পারে।

তিন. শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখা। হযরত আলী রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তম রাত তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তখন তোমরা সে রাতে নামায পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ। কারণ সেদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করপন এবং বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন, আছ কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী যাকে আমি ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোন রিযিকপ্রার্থী যাকে আমি রিযিকের ব্যবস্থা করে দেব? আছ কি কোন বিপদগ্রস্ত যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দেব? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতেই থাকেন, আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী, আমি যার সকল মনোবাসনা পূর্ণ করে দেব? ( ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৩৮৪)

উল্লিখিত হাদীস দ্বারা দুটি আমল প্রমাণিত হয়, এক, শবে বরাতে নফল নামাজ আদায় করা। দুই, পরবর্তী দিনে রোজা রাখা। তাই এ দুটি আমল করা চাই।

চার. বেশি বেশি দুআ করা। এই রাতে দুআ কবুল হয়। তাই বেশি বেশি দুআ করা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যাতে বান্দার কোন দুআ ফেরত দেয়া হয় না। এক, জুমার রাত। দুই, রজব মাসের প্রথম রাত। তিন, শাবান মাসের মধ্যরাত (শবে বরাত)। চার ও পাঁচ, দুই ঈদের রাত। ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস: ৭৯২৭) ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, আমাদের কাছে পৌঁছেছে যে, পাঁচটি রাতে দুআ বেশি বেশি কবুল করা হয়। এক, জুমার রাত। দুই, ঈদুল আযহার রাত। তিন, ঈদুল ফিতরের রাত। চার, রজব মাসের প্রথম রাত। পাঁচ, শাবান মাসের ১৫ তম রাত তথা শবে বরাত। ( কিতাবুল উম্ম, ১/২৩১, আস সুনানুল কুবরা, ৩/৩১৯)

পাঁচ. বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা। হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শাবান মাসের ১৫ তম রাতে আল্লাহ তায়ালা এই বলে ডাকতে থাকেন, তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব? আছে কি তোমাদের মাঝে কিছু চাইবার মতো কেউ, আমি তার সকল চাহিদা পুরণ করে দিব? অতঃপর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এভাবে সকল প্রার্থনাকারীর সকল প্রকার বৈধ মনোবাঞ্ছা পুরণ করা হয়। কিন্তু ব্যভিচারী ও মুশরিকদের প্রার্থনা কবুল করা হয় না। ( শুয়াবুল ঈমান হাদীস: ৩৮৩৬, আদ দুররুল মানসুর ৬/২৭)

লেখক : তরুণ আলেম ও শিক্ষক

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ