মাওলানা খালেদুজ্জামান
গতকাল থেকে সৌদি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মুহিউদ্দিন খান রহ. অনুদিত ও সম্পাদিত সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন নিয়ে একটি অশ্রুতিপূর্ব ভিত্তিহীন লেখা চাউর হয়েছে। লেখাটিতে বলা হয়েছে, সৌদি সরকার বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের জন্য একটি বাংলা তাফসীর ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহন করলে জামাতে ইসলামীরা মাওলানা মওদুদীর তাফহীমুল কুরআন ছাপানোর জন্য সৌদি সরকারকে প্ররোচনা দেয়।
সৌদি সরকার তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে তাফহিমুল কুরআন ছাপানোর উদ্যোগ নেয়। এমতাবস্থায় মুফতী অাব্দুর রহমান রহ. জামাতে ইসলামীর কর্মকৌশল সম্পর্কে অবগত হয়ে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা বা কে দিয়ে সৌদি সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তাফহিমুল কুরআন আকীদাগত অনেক বিভ্রান্তি আছে। পরে তাদের প্রস্তাবে সৌদি সরকার তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন ছাপানোর উদ্যোগ নেয়।
দীর্ঘ ছয়টি বছর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ এর সংস্পর্শে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় মাওলানা খান সাহেব রহ আমাকে পাশে বসিয়ে ঘন্টাব্যাপি অনেক ইতিহাস বলেছেন। কিন্তু তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন ছাপানো সম্পর্কে গতকালের এই তথ্য তাঁর কাছে কোনোদিন শুনেনি। অথচ তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আমাকে বলেছিলেন।
দ্বিতীয়ত যারা মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ কে চিনেন তারা খুব ভালো করে জানেন তিনি মানুষের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মূল্যায়ন করতেন। মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা বা এর এ বিষয়ে কোনো অবদান থাকলে তিনি অবশ্যই বলতেন। অথচ তিনি তাকে তেমন গভীরভাবে চিনতেন না। আমার স্পষ্ট মনে আছে একদিন শুধু কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন "মুফতী অাব্দুর রহমান সাহেবের ওখানে কালো করে একটা নোয়াখালীর ছেলে থাকে। আমার কাছে খুব কর্মঠ ও যোগ্য বলে মনে হল"। আমি বললাম, উনার নাম মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ। তিনি বললেন, "নাম জানি না। কিন্তু আমি গেলে দেখি ভালোই কর্মতৎপরতা দেখায়"।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ তখন রাবিতাতুল আলম আল ইসলামির কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সৌদি সরকারের তিনি রয়েল প্যালেসের দূর্লভ সম্মান পান। বাংলাদেশে তখন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ এর চেয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে এত গভীর প্রভাবশালী সম্পর্ক অন্য কোনো আলেমের ছিল না। সুতরাং আজ থেকে প্রায় আটাশ বছর অাগে ১৪১৩ হিজরিতে সৌদি সরকার মুফতী অাব্দুর রহমান রহ. ও মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা. বা. এর প্রস্তাবে তাফসিরে তাফহিমুল কুরআনের পরিবর্তে তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন ছাপানোর উদ্যোগ নেয় এমন উদ্ভট দাবী কারা করে বা করার পিছনে তাদের কি উদ্দেশ্য আল্লাহই ভালো জানেন।
এছাড়া উক্ত লেখায় বলা হয়েছে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ মাত্র সতেরো দিনে ১১ খন্ডের বিশাল তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন সংক্ষিপ্ত করনের কাজ সমাপ্ত করেন। এটাও বাস্তবতা বিবর্জিত অতিরঞ্জন। কেননা তিনি তিন মাসে উক্ত কাজ সমাপ্ত করেন। বলাবাহুল্য মদীনা, উম্মুল কুরাসহ সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ আর অধ্যক্ষ গোলাম আজম এই দুইজনের তাযকিয়া বা সত্যায়িত ছাড়া বাঙ্গালী কোনো ছাত্র এলাও হত না। এতে অনুমিত হয় জামাতের সাবেক আমীর অধ্যক্ষ গোলাম আজমের সৌদি সরকারের সঙ্গে কেমন প্রভাবশালী সম্পর্ক ছিল। সুতরাং তার মত বিশাল পিলার সড়ানোর কাজ কার দ্বারা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য।
বাস্তবতা হলো মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ এর নেতৃত্বেই সৌদি সরকার তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন ছাপানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। রাবিতাতুল আলমের তত্বাবধানেই এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ রাবিতার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সেই হিসেবে সৌদি সরকার মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ কে নির্বাচন করে। যা সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন এর ভূমিকায় সৌদি সরকার আরবিতে লিখে দিয়েছে। এ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা অাছে। শুধু সত্য ইতিহাস যেন বিস্মৃত না হয়ে যায় এজন্যই এতটুকু লেখা।
পুনশ্চঃ উক্ত লেখার দ্বারা মুফতী অাব্দুর রহমান রহ ও মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা বা কে হেয় বা তুচ্ছ করা অামার উদ্দেশ্য নয়। তারা আমাদের মুরুব্বি। ব্যক্তিগতভাবে মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দা বা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। আলহামদুলিল্লাহ হুযুরের সঙ্গে খুব হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। আমার উদ্দেশ্য যারা প্রকৃত ঘটনা না জেনে এগুলো ছড়াচ্ছেন তাদের সঠিক তথ্য দেয়া। সত্যকে সত্য বলতে হবে, সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে হবে।
লেখক, মাওলানা মুহিউদ্দিন খান রহ. এর দীর্ঘ সময় সোহবতপ্রাপ্ত শাগরিদ ও মাসিক মদিনার বিভাগীয় সম্পাদক।
-এটি