সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বাড়ছে মৃতদেহের সংখ্যা। মানুষের মনে ভয় আর শঙ্কা। রোগটি অতিদ্রুত সংক্রমিত হওয়ায় সবকিছু কেমন যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে।
কিন্তু করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ স্পর্শ করতে চাচ্ছেন না অনেকে। তাদের জানাযায় অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন বা অস্বস্তি বোধ করছেন কিছু মানুষ। প্রশ্ন উঠছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সকলের জানাজা হচ্ছে তো!?
কী বলছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর, জামিয়া শায়েখ জাকারিয়া কাঁচকুড়ার মুহতামিম, পীরে কামেল, ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সারা দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তি যেন সসম্মানে কবরস্থ হতে পারেন, এজন্য তাদের কাফন দাফন এবং জানাজার ব্যবস্থা করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এগিয়ে আসবে।
এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সারাদেশে জেলা প্রশাসক বরাবর বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এ জাতীয় সকল কর্মকান্ডের সহযোগিতা করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
কঠিন এ পরিস্থিতিতে কাফন দাফন ও জানাজা পরিহারের কোন সুযোগ আছে কি?
শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ বলছেন, যে সমস্ত মুসলমান ভাইয়েরা করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তারা শহীদের মর্যাদায় ইহকাল ত্যাগ করছেন। জানাজা ছাড়া কোন শহীদের মৃত্যু হবে- এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য আর কিছু হতে পারে না।
জানাজা, কাফন-দাফন ফরজে কিফায়া আমল। প্রত্যেক মুসলমানের জানাজা,কাফন,দাফন হতে হবে। গত ২৯ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মিটিংয়ে আমরা এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিলাম। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, কোনক্রমেই কাফন দাফন ও জানাজা ছাড়া কাউকে কবরস্থ করা হবে না। আমরা আশা করছি- এখন পর্যন্ত কাউকে কাফন-দাফন ও জানাজা ছাড়া কবরস্থ করা হয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে যথেষ্ট আন্তরিক দেখেছি। বলছিলেন মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
জামিয়া বারিধারার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে সমস্ত মুসলমান মুমিনদের উপর তার জানাজা এবং কাফন দাফন ফরজ হয়ে যায়। শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ফরজে কেফায়া। কিছু মানুষ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কোনক্রমেই জানাজা ছাড়া কোন মুসলমানকে মাটি চাপা দেয়া যাবেনা।
কাফন দাফনের পর প্লাস্টিকের প্যাকেট ঢুকিয়ে কবরস্থ করা যাবে?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ বলেন, যদি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ মনে করেন এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে ভাইরাস ছড়াবে না, তাহলে সংক্রমণ এড়াতে শরীয়ত এর বিরোধিতা করবে না।
"আমাদের কথা হলো একজন মুসলমানের মৃত্যু যেন সসম্মানে হয়। এবার যে কোন প্রকার সর্তকতা অবলম্বন করা যেতে পারে। তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না। যারা কবরস্থ করবেন, তারা পিপিই পরিধান করে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিবেন। এছাড়াও আরো কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হলে, সেটাও তারা করবেন। কিন্তু মুসলমানের জানাযা ও কাফন দাফন হতেই হবে।" যোগ করেন মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
মৃতদেহ থেকে ভাইরাস সংক্রমিত হয়?
করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিকে নির্ভয়ে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী দাফন-কাফন করা যাবে বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সোমবার এক বিবৃতিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস বাঁচতে পারেনা, তার বৃদ্ধিও হয় না। করোনায় মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রসারিত হয় না। মৃত ব্যক্তিকে ধর্মীয় মতে সাবান দিয়ে গোসল করালে করোনার প্রসার বন্ধ হয়।
কোনটি বেশি উত্তম, পুড়িয়ে ফেলা না কবরস্থ করা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রামক ব্যাধিতে মৃতদের পুড়িয়ে ফেলা উচিত- এমন গুজব চালু রয়েছে। তবে তা সত্যি নয়। ইবোলা, মারবার্গ, কলেরা ছাড়া, অন্য ভাইরাসে মৃতদেহ অন্য কারো শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয় না। তবে সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসফুসে যদি ময়নাতদন্তের সময় সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না হয়, তবে তা সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া মৃতদেহ সংক্রমণ ছড়াতে পারে না।
-এটি