মুহাম্মদ এফ.এস.ডি ইকরামুল হক
সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী>
সম্প্রতি সময়ে বিশ্বের দুই'শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের পরিচয় দেয়ার তেমন আর প্রয়োজন নেই। পুরো বিশ্বই আজ অসহায়, গন্তব্যহীন এক পথচলার মতো করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বলতে পারি যে, আল্লাহ প্রদত্ত এক অঘোষিত লকডাউন। চীনের উহান শহর থেকে বিস্তারলাভ করে ভাইরাসটি বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১২ লক্ষ ৮৭ হাজার ১ শত ৬৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়ে পড়েছেন ৭০ হাজার ৫ শত ৩৩ জন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেয়া তথ্য মতো বাংলাদেশে প্রায় ১২৩ জন আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছে ১২ জন। ১২৩ নং সিরিয়ালে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত আসনে দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বে সনাক্ত হচ্ছে দৈনিক হাজার হাজার রোগী।
এ ভাইরাসটি একটি সংক্রমিত রোগ, দেখা দিয়েছে মহামারি আকারে। বিশ্বের নামী দামি দেশগুলো আজ কতটা অসহায় তা আমরা কমবেশি প্রত্যেকে অবগত আছি। শুধু উদাহারণ স্বরূপ দু'টি কথা বলি যে, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় ক'দিন আগে ইতালি সর্বোচ্ছ আসনে নাম্বার ওয়ান তালিকায় অবস্থান ছিলো। সেই ইতালির জনপদে ডলার ফেলে দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। তারা বুঝাতে চেয়েছে দু'টি কথা: প্রথম যে টাকাগুলো করোনা রোগীর সংস্পর্শ হওয়ায় সে ডলার সংস্পর্শ কেউ করতে চান না। দ্বিতীয়ত বিশ্বকে এক নিরব বার্তায় বুঝাতে চেয়েছে যে, টাকাই সব কিছু নয়।
বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যমন্ত্রণায়ের অধিনে যে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছে তা শরীয়ত সম্মত ও যৌক্তিক বলে দেশের বিজ্ঞ আলিম ওলামারা সম্মতি দিয়েছেন। বলা যেতে পারে সময়ের পরিস্থিতিভেদে এসব মানা উচিৎ। এছাড়া সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কতৃক জারিকৃত আদেশাবলীও মান্য করা সবার উপর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কেননা এ রোগথেকে বাঁচতে হলে নিজেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। এককথাই বর্তমান সময়ে হোম কোয়ারেন্টাইন সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সরকারের ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিৎ দেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে গঠিত বাজেট সুসম বন্টন করে জনগণের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া। এবং জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব জনগণের পাশে দাঁড়ানো। সবকিছুর পূর্বশর্ত আমাদের গুনাহের কারণে এমন আজাব এসেছে। আমাদের উচিৎ সদা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যদিয়ে ইবাদতে মশগুল থাকা।
করোনা ভাইসার প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলিম ওলামাদের মতামতের বাইরে আমি সরকারের অবস্থান দেখছিনা। ধর্মীয় বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে ফরমান গুলো জারি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে দেশের বিজ্ঞ আলিম ওলামাদের মতামত। আজ আরেকটি বিষয় জানিয়েছেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন সহ পাঁচজন। এবং জু'মার নামাজে সর্বমোট দশজনের বেশি উপস্থিত না হলে বলা হয়েছে। একথাটির পজিটিভ বা নেগেটিভ বিবেচনা না করে এটাই বিবেচনা করতে বলতে চাই যে, আল্লাহর ঘর বন্ধ করতে বলা হয়নি। বরং জনসমাগম থেকে নিজেকে দুরে রাখতে বলা হচ্ছে। যা ধর্মের পরিপন্থী নয়। খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এ সিদ্ধান্ত আলিম ওলামা কতৃক নেয়া হয়েছে। তা'ছাড়া সময়ের পরিপ্রেক্ষিত এ সিদ্ধান্ত একই বারে অযৌক্তিক মনে হয়না।
আরেকটি বিষয় বলছি যে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রচার প্রসঙ্গে আমি একটি মেসেজ দিতে চাই। করোনা ভাইরাস নিয়ে আক্রান্ত, মৃত্যু ও আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার সংখ্যা প্রচার প্রসারের জন্য সরকারের ওয়েবসাইট সহ গণমাধ্যম কর্মীরা রয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশে আমরা যারা ২৪ ঘন্টা ফেসবুক পোস্ট করে যাচ্ছি। এতে করে সর্বত্র আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। তা'ছাড়া গুজবের কথাতো আর বলতে হচ্ছেনা।
পরিশেষে বলে যায়: আল্লাহর কাছে তাওবা ইস্তিগফারের জন্য দরজা সব সময় খোলা। সব স্থান থেকে সবসময় তাওবা ইস্তিগফার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মসজিদ বন্ধ/খোলা নিয়ে লেখালেখির কিছুই নেই। দ্বিতীয়ত করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপডেট অথবা মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা প্রচার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা একধরণের অপরাধও বটে। এসবকাজ গণমাধ্যম কর্মীদের করতে দিয়ে আসুন আমরা সবাই তাওবা ইস্তিগফার করে গুনাহ মাফ চাই। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমীন।
শিক্ষার্থী: চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
-এটি