আবদুল্লাহ তামিম।।
ভারতের নিযামুদ্দিনের তাবলিগ মারকোজের ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দারুল উলূম দেওবন্দ।
গতকাল শনিবার দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। কঠিন এক সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে এ ভাইরাস। বিশ্বের অনেক দেশ আক্রান্ত হয়েছে এ ভাইরাসে। ভারতেও এই মহামারী বিদেশ থেকে এসেছে, তাই নিজেকে ও আপনার সমাজকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এ ভাইরাস রোধে সরকার প্রশাসনের সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তাবলিগ জামায়াতের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদেরও আবেদন করা হচ্ছে, যারা ১মার্চ এর পরে মারকাজ নিজামুদ্দিনে গিয়েছেন, তারা এখন যেদিকেই থাকুন না কেন, নিজেরাই এগিয়ে এসে করোনার ভাইরাস সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে মেডিকেল পরীক্ষা করান। দায়িত্বশীলতার সাথে আচরণ করে পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, এইভাবে বহু কঠিন হুমকি এবং আশঙ্কা দূর সম্ভব হয়। আপনার সহযোগিতায় দেশ জাতি সমাজ রক্ষা পাবে বলে মনে করি।
নিযামুদ্দিন নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, তাবলিগ জামায়াতের নিজামুদ্দিনে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে তা উদ্বেগজনক। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দায় কার সেটা ভাবার সময় নয়। যখন পুরো বিশ্বটি এ করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোগের মুখোমুখি হচ্ছে, ঠিক তখন আমাদের দেশের কিছু দূষিত মানসিকতার মানুষ এতেও ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষ মিশ্রিত করার পায়তারা করছে। এটা খুবই দু:খজনক বিষয়।
দারুল উলুম দেওবন্দ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা এ জাতীয় বিদ্বেষ ছাড়ানোর বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানাই। ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই জাতীয় বিদ্বেষ যে মিডিয়াগুলো ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করারও আবেদন জানায় সরকারের প্রতি। দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করে এমন মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ারও আহ্বান করা হয়। বিশেষত, করোনার ভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা দেশ ও বিদেশের লোকদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে, মানব সম্পর্কের যত্ন নিয়ে তাদের চিকিত্সা ও সহায়তা করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
উল্লেখ্য, নিযামুদ্দিন মারকাজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর গণমাধ্যমের একটা অংশ এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা মুসলিম বিদ্বেষী হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে নানা ভুয়া খবর। করোনা জিহাদ বা নিজামুদ্দিন ইডিয়টস নামে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগও ছড়িয়ে পড়ছে।
দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের মারকাজে যোগ দিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়া কয়েকজনের শরীরে করোনা সংক্রমণ প্রমাণিত হওয়ার পরে ভারতের গণমাধ্যমে ওই ঘটনা খুবই গুরুত্ব পেতে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই দারুল উলুম দেওবন্দের এ বিবৃতি।
সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েব সাইট থেকে আবদুল্লাহ তামিমের অনুবাদ
-এটি