অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম খান।
সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ‘বনি আদম’। সকল শ্রেণি ও পেশাদারদের কর্মচঞ্চলতা স্থবির হয়ে গেছে। ধনী কিংবা গরিব সকলেরই জীবনমান পরিচালনায় রুটিনমাফিক কর্মকাণ্ডে ব্যত্যয় ঘটেছে। শ্লোথ হয়ে এসেছে জীবনসংগ্রাম।
বিশ্বের এ ক্রান্তিকালে আলোচনায় এসেছে বাড়িভাড়া মওকুফ বিষয়ে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া একে অন্যের পরিপূরক ও সহায়ক শক্তি। একজন মানুষ সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি বাড়ি করে থাকেন। যা দিয়ে তার সংসার চলে এবং অনেক বাড়িওয়ালার লোনে প্রস্তুতকৃত বাড়িটির ভাড়া থেকে ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে হয়। যা থেকে সরকারও রাজস্ব পেয়ে থাকেন। বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া উভয়ই ভোক্তা। উভয়ই দেশের উন্নয়নের অংশীদার।
যেহেতু মাননীয় সরকারকর্তৃক গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফের কোনো প্রকার ঘোষণা দেননি, সেহেতু কেবলমাত্র বাড়িওয়ালাদের প্রতি ভাড়া মওকুফের বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই বিবেচ্য নয়। আমাদের দেশে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাড়িওয়ালার বাড়িভাড়া ভিন্ন অন্য আয়ের কোনো উৎস নেই। এটাই অর্থাৎ বাড়িভাড়াই তাঁর একমাত্র আয়ের উৎস। আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকেই ইদানীং এ ধরনের সুযোগের বাণী আওড়াচ্ছেন এবং দাবি করছেন যেন বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের এক বা দুই মাসের বাড়িভাড়া মওকুফ করে দেন!
কিছু অসাধু ও সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এর পক্ষে বিবৃতি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে মিথ্যা সংবাদ ভাইরাল করে প্রকাশ করেছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরকর্তৃক ঘোষণা এসেছে যে, ‘বাড়িওয়ালাদের প্রতি প্রশাসনকর্তৃক আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ভাড়াটিয়াদের দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন।’
যে নির্দেশনাটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও গুজব বলে ঘোষণা প্রদান করে এ মিথ্যা সংবাদটি যারা প্রচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা এসেছে। (সূত্র : শিরোনাম— বাড়িভাড়া ও ব্যাংক লোন সংক্রান্ত প্রচারটি গুজব, ৫ এপ্রিল ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন।)
সরকার দেশের সকল শ্রেণির নাগরিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকেন। কোনো এক শ্রেণির জনগণের প্রতি বিশেষ কিছু চাপিয়ে দেওয়া সরকারের কাজ নয়৷ তা ছাড়া ইসলাম ধর্মও কারও ওপর একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে উৎসাহ প্রদান করে না। এ কারণেই বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের স্বার্থের প্রতি লক্ষ রেখে মহামান্য সরকার বাড়িভাড়া মওকুফের বিষয়টি গুজব ঘোষণা করেছেন বলে মনে করি।
লেখক: আইনজীবী, হাইকোর্ট ডিভিশন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং নোটারি পাবলিক, (সমগ্র বাংলাদেশ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
-এটি