শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জিকিরে তাসবিহ-দানা ব্যবহারের বিধান!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী মেরাজ তাহসীন।। প্রশ্ন:তাসবির দানা দিয়ে তাসবীহ বা জিকির করা যাবে কি? অনেকেই বলে, তাসবীহ দানা দিয়ে জিকির করা জায়েজ নাই। অনেকে বলে আঙ্গুল দিয়ে জিকির বা তাসবিহ পাঠ করা উত্তম ৷ সঠিক মাসালা দলিল সহ জানতে চাই ৷

উত্তর: জিকির বা তাসবিহ পাঠে তাসবিহ-দানা ব্যবহার করা জায়েয ৷ ফকিহগণ নামাজের বাইরে হাত, কংকর ও তাসবিহ-মালা দ্বারা তাসবিহ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কোনো ফকিহ একে নাজায়েয বা মাকরূহ বলেন নি। কেননা এটি কেবল জিকিরের উসিলা বা স্মরণ করিয়ে দেয়া ও গগনার মাধ্যম ৷

হাদীস শরীফে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَيْنَ يَدَيَّ أَرْبَعَةُ آلَافِ نَوَاةٍ أُسَبِّحُ بِهَا ، فَقَالَ : لَقَدْ سَبَّحْتِ بِهَذِهِ ، أَلَا أُعَلِّمُكِ بِأَكْثَرَ مِمَّا سَبَّحْتِ بِهِ ، فَقُلْتُ : بَلَى عَلِّمْنِي . فَقَالَ : قُولِي : سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ

একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে এলেন। আমার কাছে তখন চার হাজার খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দ্বারা আমি তাসবিহ পাঠ করছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো এগুলোর মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করছ। যে পরিমাণ তাসবিহ তুমি পাঠ করেছ, তদপেক্ষা বেশী পরিমাণের উপায় কি আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বলবে, (سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ) – সৃষ্টির পরিমাণ সংখ্যকবার সুবহানাল্লাহ। জামে তিরমিযি, হাদীস নং: ৩৫৫৪ ৷

অন্য বর্ননায় এসেছে, সা’দ ইবন আবূ ওয়ক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে এক মহিলার কাছে গেলেন। উক্ত মহিলার সামনে তখন কিছু খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি তাসবিহ পাঠ করছিলেন। নবীজী ﷺ তাকে বললেন, এর চেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় সম্পর্কে কি তোমাকে অবহিত করব? তা হল,

سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ

অর্থাৎ, আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তার সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ মহাপবিত্র দুনিয়াতে তার সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যে সকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, অনুরূপ সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ১৩১৭ ৷

রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত মহিলাকে নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল এর চেয়ে উত্তম ও সহজটা বলে দিয়েছেন। যদি এটি নিষিদ্ধ হত তাহলে তিনি বলে দিতেন। সুতরাং এই হাদিস ও অনুরূপ আরো হাদিস একথার দলিল যে, জিকিরের গণনার জন্য প্রচলিত তাসবিহ-দানা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। আর বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা রাযি.ও এরূপ করতেন।

আল বাহরুর রায়িক ২/৩১; আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা ১১/২৮৩; ফয়যুল কাদির ৪/৩৫৫; মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/৫০৬ ৷

তবে জিকির গণনায় তাসবিহ-দানা ব্যবহার করার চাইতে উত্তম হল, হাতের আঙ্গুল বা আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা তাসবিহমালা হাতে থাকলে রিয়া আসতে পারে। তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, ইয়ুসাইরাহ রাযি. বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِينَ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّقْدِيسِ وَالتَّهْلِيلِ وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকবির, তাকদিস এবং তাহলিল এগুলো খুব ভালভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কথা বলবে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ২৫৮৪১; আবু দাউদ, হাদীস: ১৫০১৷

উত্তর প্রদানে- মুফতী মেরাজ তাহসীন, মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া৷

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ