বেলায়েত হুসাইন
আযান যথাসময়েই হয়েছে কিন্তু জুমার নামাজ হয়নি, মসজিদে কোন মুসল্লি আসেনি, ইমাম সাহেব মিম্বারে আরোহন করেননি- এই দৃশ্য এর আগে কেউ দেখেছে বলে জানা যায়না। বিগত দুই সপ্তাহের শুক্রবারে প্রায় সারা দুনিয়াই এমন দৃশ্যের সাক্ষী হল। কোন মুমিন কি আছে যাকে এই পরিস্থিতি শংকিত করেনি!
পৃথিবীতে নেমে আসা যেকোনো বিপর্যয়কে স্রেফ প্রাকৃতিক আচরণ বলে উড়িয়ে দেয়ার মানষিকতা বেশ প্রবল হয়ে ওঠেছে আমাদের মধ্যে। এটির মোকাবেলার পথ ও পন্থা বৈজ্ঞানিক মত অনুসরণকেই একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নেয়ার রীতিতে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে। অথবা আমাদের ভাবনা, প্রকৃতিতে আমাদের হাত নেই। যা হবার তাই হবে আমরা পরিবর্তন করতে পারবোনা কিছুই।
আমাদের স্বচ্ছন্দ জীবন, সুখশান্তি কিংবা অনাহারের দিনগুলি ও দুঃখকষ্ট সবই প্রাকৃতিক নিয়মে হচ্ছে। প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মেই আমাদের জীবন পরিচালিত হয়। এখানে আমরা কি করতে পারি?
কিন্তু যখন আমরা নিজেদের আজ্ঞাবহ মুসলিম আখ্যায়িত করি তখন আমাদের এই চেতনা পবিত্র ইসলাম ধর্মের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্য রাখে? মানুষের সুস্থতা অসুস্থতা, বিপদ-আপদ, সুখসমৃদ্ধি ও দুঃখদুর্দশা কি প্রাকৃতিক নিয়মেই হয় নাকি মহান প্রভুর নির্দেশে এগুলো মানুষের উপর পতিত হয়- জানার চেষ্টা করেছি কখনো?
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের কতিপয় কাজকর্মের জন্য তাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, যাতে করে তারা (সে কাজ থেকে) ফিরে আসে (সূরা রূম,আয়ত: ৪১)
পৃথিবীতে আল্লাহর নাফারমানি বেড়ে গেলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সাময়িক বিভিন্ন রকম শাস্তি প্রদান করেন যাতে তারা তওবা করে ফিরে আসে। আর সেদিকে না যায়। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাসও আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির উপর একটি সাময়িক শাস্তি ও পরিক্ষা হতে পারে।
কিছু মানুষকে করোনায় আক্রান্ত করে অন্য সবাইকে সতর্ক করছেন যেন তারা তাদের কৃতকর্ম সুধরে নেয় এবং ভাল কাজ শুরু করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বড়ো আযাবের আগে আমি অবশ্যই (দুনিয়ায়) ছোট খাটো আযাব আস্বাদন করাবো, হয়তো এতে (অনুতপ্ত হয়ে) সে আমার দিকে ফিরে আসবে ( সূরা সাজদাহ, আয়াত: ২১)
কিন্তু করোনার মতো এই মহামারির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আমরা কি তাঁর দিকে ধাবিত হয়েছি, তওবা করে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছি? যেখানে সুখসমৃদ্ধির জীবন যাপন করেও তিনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি তোমরা আমার শোকর গোজারি হও, তবে আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা আমার নেয়ামত অস্বীকার কর তবে, নিশ্চয়ই জেনে রেখ আমার আজাব বড় কঠিন। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
সভ্য পৃথিবীতে করোনার মতো এরূপ ভয়ঙ্কর কোন ভাইরাস এর আগে এরকম আক্রমণ করেনি। স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত এমন একাধিক দেশেই করোনার মহামারি বেশি বিস্তৃত হয়েছে। এর মাধমে কি পবিত্র কোরআনের এই কথা আবারও প্রামাণিত হয়না- 'আজকের দিনের রাজত্ব কার? আল্লাহ্র, তিনি এক, তিনি অপ্রতিরোধ্য। (সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ১৬)
সুতরাং তাঁর সাহায্য ছাড়া কোন সুখশান্তিও পাওয়া যাবেনা আবার কোন বিপদ আপদ থেকেও রেহাই পাওয়ার কল্পনা করাটা স্রেফ বোকামি। বিভিন্ন সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বিপদ আপদ দিয়ে বান্দাদের পরিক্ষা নেন তাদের ক্ষমা করার জন্য। তিনি চান, তাঁর বান্দারা অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসুক। তিনি বলেন, তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩০)
তা ছাড়া সবসময় সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখাও ইমানের দাবি। একজন মুমিন মুসলমানের সঙ্গে তিনি সেই আচরণ করেন আল্লাহর থেকে যেমনটি সে আশা করে। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার প্রতি আমার বান্দার ধারণার ভিত্তিতে তাকে আমি প্রতিদান দেই। এজন্য যেকোনো বিপদে ধৈর্য ধারণ করে তাঁর প্রতি ভাল কিছুরই আশাবাদী হতে হবে। তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের জন্য কল্যাণের ফায়সালা করবেন ইনশাআল্লাহ!
-এটি