মুফতি মোহাম্মদ আলী।।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস নামক মহামারী ব্যাপকভাবে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে মুসলিম ভাইদের ঈমান-আমল ও জানের হেফাজতের জন্য আফতাব নগর মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস- মুফতী মোহাম্মদ আলী কিছু পরামর্শ প্রদান করেছেন-
তিনি বলেন, যেহেতু কোরআন ও হাদিসের আলোকে মহামারী আল্লাহ তায়ালাই দেন এবং আল্লাহ তায়ালাই শেফা দান করেন সে প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলার দরবারেই এর থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা জরুরী। সেইসাথে এর থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতামূলক চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা মেনে চলাও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
সে পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আমল- ১. স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনাবলী মেনে চলা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে তা মেনে চলা।
২. এই পরিস্থিতিতে যে সকল মানুষ কর্মহীন হয়ে আর্থিক অভাব-অনটনে পতিত হয়েছে বিত্তবানরা তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। এর দ্বারা অভাবীদের যেমনিভাবে প্রয়োজন পূরণ হবে তেমনিভাবে দাতাদেরও ফায়দা হবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ, করেন ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﺇﻥ اﻟﺼﺪﻗﺔ ﻟﺘﻄﻔﺊ غضب الرب ﻭﺗﺪﻓﻊ ﻣﻴﺘﺔ اﻟﺴﻮء.
অর্থ: সদকা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধকে প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। সুনানে তিরমিজি- ৬৬৪
৩. যেহেতু আল্লাহ তাআলা বান্দার নাফরমানীর কারণে এবং মুমিনদের পরীক্ষা করার জন্য এধরণের মহামারী, বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন তাই সবর ও ধৈর্যের সাথে আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশি করার জন্য নিম্নোক্ত আমল করা-
ক. বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা। হাদিসে এসেছে, ﻋﻦ اﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ، ﺃﻧﻪ ﺣﺪﺛﻪ، ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻣﻦ ﻟﺰﻡ اﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ، ﺟﻌﻞ اﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺿﻴﻖ ﻣﺨﺮﺟﺎ، ﻭﻣﻦ ﻛﻞ ﻫﻢ ﻓﺮﺟﺎ، ﻭﺭﺯﻗﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﻻ ﻳﺤﺘﺴﺐ
অর্থ:রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে আকড়ে ধরবে আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উদ্ধারের পথ বের করে দেবেন, তার দুঃখ-কষ্টকে দূর করবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন যার কথা সে ভাবেনি। সুত্র: সুনানে আবু দাউদ - ১৫১৮
এতে বুঝা যায় সংকট ও মুসিবত থেকে উত্তরণের অন্যতম পথ ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করা ও ক্ষমা চাওয়া। উক্ত হাদীসে প্রতি মুহূর্তেই ইস্তেগফারে লেগে থাকার কথা বলা হয়েছে।
হাদিসে অনেক ধরনের ইস্তেগফার বর্ণিত আছে। এর যেকোনো একটি পড়াই যথেষ্ট। তবে এরমধ্যে সর্বোত্তম ইস্তেগফার হলো-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي؛ فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ সূত্র: সহিহ বুখারি- ৬৩০৬, ৬৩২৩
খ. বেশী বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করা। গ. তিন কুল তথা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে প্রত্যেক নামাজের পর শরীরে দম করা।
ঘ. নিম্নোক্ত দোয়াসমূহ পাঠ করা- ১. اَللّٰهُمَّ اَنْتَ رَبِّىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَ نْتَ عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَاَ نْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ مَا شَآءَ اللهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَاْ لَمْ يَكُنْ وَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَىْءٍ عِلْمًا, اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِىْ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَآبَّةٍ اَنْتَ اٰخِذٌ م بِنَاصِيَتِهَا اِنَّ رَبِّىْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ.
প্রেক্ষাপট: একদিন এক ব্যক্তি এসে হযরত আবু দারদা (রাঃ) কে সংবাদ দিলেন যে, হে আবু দারদা (রাঃ)! আপনার ঘর পুড়ে গেছে। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন, আমার ঘর পুড়ে নি। একটু পরে আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আবু দারদা (রাঃ)! আগুন ধরে ছিলো। কিন্তু আপনার ঘরের কাছে আসার সাথে সাথে আগুন নিভে গেছে। এ সংবাদ শুনে হযরত আবু দারদা (রাঃ) বললেন, আমি জানতাম যে, আল্লাহ্ তায়ালা আমার সাথে এরূপ করবেন না। একথা শুনে সংবাদদাতা আশ্চর্যাম্বিত হয়ে বললেন, হে আবু দারদা! আপনি কি করে জানলেন যে, আপনার ঘর জ্বলে নি এবং আপনি কিভাবে বললেন যে, অবশ্যই আমি জানতাম যে, আল্লাহ তায়ালা আমার সাথে এরূপ করবেন না।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) বললেন, এমন কিছু বাক্য আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো সকালে পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে কোন বিপদ আপদ গ্রেপ্তার করবে না। তদ্রুপ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, সকাল পর্যন্ত তাকে কোন বিপদ আপদ গ্রেপ্তার করবে না। আর এ দোয়া পড়ে আজ আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। সুতরাং আমার ঘর পুঁড়তে পারে না।
সূত্র: দালাইলুল নবুওয়াত, লিল বায়হাকী- ৩০৪৬)
২.
اﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﻋﻮﺫ ﺑﻚ ﻣﻦ البرص، ﻭاﻟﺠﻨﻮﻥ، ﻭاﻟﺠﺬاﻡ، ﻭﻣﻦ ﺳﻴﺊ اﻷﺳﻘﺎﻡ সূত্র: আবু দাউদ- ১৫৫৪
ফায়দা: এই দোয়ার মাধ্যমে সকল প্রকার মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
৩.
أعوذ بكلماتِ اللّٰه التامات من شرِّ ما خلَق
ফায়দা: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুল আল্লাহ আমাকে গতকাল এক বিচ্ছু দংশন করেছে। তখন রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি এই দোয়াটি পড়তে তাহলে বিচ্ছুটি তোমার কোন ক্ষতি করতে পারত না। সূত্র: সহিহ মুসলিম- ২৭০৯
৪.
ياحيُّ ياقيوم بِرحمتِك نستغيث সূত্র তিরমিজি- ৩৫৩৪
ফায়দা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মুসিবতে পড়লে এই দোয়া পাঠ করতেন।
৫.
بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الارض ولا في السماء وهو السميع العليم
ফায়দা: যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা এই দোয়া তিনবার পড়বে কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারবেনা। সূত্র, সুনানে তিরমিজি- ৩৩৮৮
৬.
الحمد لله الذي عافاني مما ابتلاك به وفضلني على كثير ممن خلق تفضيلا
ফায়দা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে এই দোয়া পাঠ করবে সে মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত অসুস্থতা থেকে নিরাপদ থাকবে। সূত্র, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৩১
৭. لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين
ফায়দা:এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম কে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তা'আলা বলেন: যদি তিনি (এই) তাসবীহব পাঠকারী না হতেন তাহলে ওই মাছের পেটে কেয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করতেন।সূরা সাফফাত,১৪৩-১৪৪
ঙ. ঘরে থাকাকালীন সময় গুলোকে অযথা নষ্ট না করে কুরআন তেলাওয়াতে নিমগ্ন থাকা, কুরআন বুঝার চেষ্টা করা। হাদিস গ্রন্থ সমূহ পাঠ করা।
চ. অতীতে হয়ে যাওয়া গুনাহ গুলোর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে সেগুলো থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে কায়মনোবাক্যে তাওবা করা।
-এটি