আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি কোয়ারেন্টাইন পয়েন্ট থেকে বেরিয়ে গণ-শৌচাগারে যাওয়ায় উত্তর কোরিয়ায় বাণিজ্য দফতরের এক কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি চীন সফর থেকে ফেরার পর করোনোভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। ইসলামি শরিয়তে এটা কেমনভা দেখে?।
প্রশ্ন: করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর এখনো পর্যন্ত প্রতিষেধক ঔষধ আবিস্কৃত না হওয়ায় সংক্রমণে অসংখ্য লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখি হওয়ার আশংকায় বা লোকটি এমনি কিছুদিনের মধ্যে ডাক্তারদের মতানুযায়ি মৃত্যু পথে চলে যাবেন বিধায় অনেক দেশে উক্ত রোগীকে গুলি করে বা মরনাত্তক ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে৷ শোনা যাচ্ছে, আমাদের দেশেও এমন করা হবে বা হচ্ছে৷ এবিষয়ে ইসলামের কি সিদ্ধান্ত? জানাবে দয়া করে৷
উত্তর: মানুষের জীবন মরণ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে৷ একমাত্র তিনিই জানেন কে কতদিন বাচবে৷ কে কখন মৃত্যুবরণ করবে৷ কোরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। সূরা লোকমান, আয়াত: ৩৪৷
অন্যত্রে ইরশাদ করেন, وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ أَجَلَ اللَّهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ এবং তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন; আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসলে কিছুতেই তা বিলম্বিত করা হয় না, যদি তোমরা জানতে’!
এসব আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমানিত মানুষের হায়াত নির্ধারিত৷ তার পুর্বে কারো মৃত্যু হবে না৷ পরেও হবে না৷ সুতরাং করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি কখন মৃত্যু বরণ করবে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ই জানেন৷ তার থেকে কেউ সংক্রমণ হবে কিনা? সংক্রমণ হলে কেউ মারা যাবে কি না সেটাও একমাত্র তিনি ই জানেন৷ সুতরাং একটি অনিশ্চিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তিকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া বা মেরে ফেলা কোনো ভাবেই বৈধ নয়৷ সম্পুর্ন হারাম৷ অতএব প্রশ্নোক্ত বিষয় বিবেচনা করে কোনো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি সাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত, গুলি করে বা মরনাত্তক ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলা অন্যায়ভাবে নিরপরাধ মানষ হত্যার শামিল৷
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার উপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সূরা নিসা, আয়াত: ৯৩৷
অন্যত্রে ইরশাদ করেন, এ কারনেই আমি বনী ইসরাইলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারন ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন সমগ্র মানুষকেই হত্যা করল; আর যে কোন মানুষের প্রান বাঁচালো, সে যেন সকল মানুষকেই বাঁচালো। তাদের কাছে আমার রাসুলগন সুস্পষ্ট প্রমান নিয়ে এসেছিল, এরপরও তাদের অধিকাংশই পৃথিবীতে বাড়াবাড়ি করেছিল৷ সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৩২৷
হাদীস শরীফে এসেছে, আনাস রাঃ হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, মানুষ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া আর মিথ্যা বলা, কিংবা বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া৷ সহিহ বোখারী, হাদিস, ৬৮৭১৷
আবদুল্লাহ ইবন উমার রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেনঃ ‘’আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার একজন মুসলিম খুন হওয়ার পরিবর্তে৷ জামে তিরমিযি, হাদীস, ১৩৯৫৷
আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী৷ সহিহ বোখারী, হাদীস: ৬০৪৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন, মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
-এটি