মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ।।
পৃথিবীর সবকিছুই সংঘটিত হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশে। তার নির্দেশেই মানুষের জীবন ধারণের অপরিহার্য উপাদান প্রকৃতি কখনো বিরূপ আচরণ করে থাকে। এর দ্বারা সৃষ্টিজগৎ বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতির মুখোমুখি হয়। পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে। তবে আমাদের দেশেও এর মাত্রাটা কম নয়।
নানা দুর্যোগের মধ্যেই যাপিত হচ্ছে আমাদের জীবন। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির নিজস্ব কোনো সৃষ্টি নয়। বরং জল-স্থল, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা কিছু ঘটে সেগুলো মহান আল্লাহর সূক্ষ্ম পরিকল্পনারই অংশ। দুর্যোগ-দুর্ঘটনাও তারই ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। এ সমস্ত দুর্ঘটনার সময় গণমসাধ্যমে উচ্চারিত ‘মোকাবেল’ ‘প্রতিরোধ’ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়।
মোকাবেলা’র সরল অর্থ পাল্লা দিয়ে লড়াই করা, যুদ্ধ করা। যেখানে লড়াই করতে সক্ষম দুইটা পক্ষের মধ্যে জয়-পরাজয় যে কোন একটা অবধারিত। ঝড়-তুফান, বন্যা, ভূমিকম্প’সহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনোই ‘মোকাবেলা’ করা যায় না। এটাকে ঠেকানোর সাধ্য মানুষের হাতে নেই। বরং ক্ষয়ক্ষতি থেকে জান-মাল বাঁচানোর চেষ্টা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা যায়।
ঘূর্ণিঝড় “ফণী” মোকাবেলায় যুদ্ধ জাহাজ প্রস্তুত, পুলিশ-নৌ বাহিনী প্রস্তুত, ছাত্র সংগঠন প্রস্তুত এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে; পুরোটাই হাস্যকর। বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার তো এতটা সংকুচিত নয় যে, এখানে প্রযোজ্য শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না; যাতে এই মোকাবেলা সেই মোকাবেলা নয়- এটা ব্যাখ্যা করে বুঝানো লাগবে।
বরং এখানে অনায়াসেই “ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আঘাত থেকে ‘রক্ষা পেতে’, ‘বাঁচাতে’, ‘বাঁচতে’, ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে বা দূর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে’ এই এই উদ্যোগ বা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে; এমন শব্দ বা বাক্যের ব্যবহারই তো ভাষার সমৃদ্ধতা বুঝায়। প্রিন্ট, টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার ভাই/বন্ধুদের প্রতি বিষয়টা বিবেচনায় নিতে অনুরোধ।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিল
-এটি