মাহদী হাসানাত খান ।।
আমার ফ্রান্স প্রবাসী চাচা খান মুফতি মাহমুদ জেনারেল শিক্ষিত হলেও ইসলামি অনুশাসন থেকে দূরে নন। বুঝে-শুনে সাধ্যমতো ইসলামি জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। তিনি বললেন, ‘বর্তমানে এই কঠিন সময়ে আলেমগণ যে যার মতো করে মসজিদে যাওয়া বা না-যাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পেশ করছেন। অথচ মূল বিষয়টা হলো, জমায়েত বা জনসমাগম এড়িয়ে চলা। নামাজ না-পড়া বা অস্বীকার করার কথা কেউই বলেননি। তারপরও এত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেন? আমরা সাধারণ মানুষরা কী করব এখন?’
আসলে বিষয়টা স্পর্শকাতর। সচেতনতার জন্য বেশিরভাগ আয়োজন। সচেতনতা মূলত আপেক্ষিক বিষয়। জোরপূর্বক সচেতনতা সৃষ্টি হয় না। আর এ কারণেই বিভিন্ন জায়গায় জনসমাগম এখনো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অবস্থা বুঝে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে ইসলাম নিষেধ করেনি কখনো। ওজর-আপত্তি সবসময়ই প্রাধান্য দিয়েছে ইসলাম। তবে এই ওজর-আপত্তি এবং বিশেষ অবস্থাটা বুঝতে হবে ভালো করে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধের ময়দানেও কিন্তু নামাজ মাফ নেই। তবে সেই নামাজ অনেকটা আলাদা। অনেক পার্থক্য রয়েছে সেই নামাজের মাঝে। সেই নামাজকে বলা হয় ‘সালাতুল খাউফ’। অত্যধিক বৃষ্টির সময়ও জামাতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। জমায়েতের ব্যাপারে যদি সরকারকর্তৃক সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেটা মানাই বাঞ্ছনীয়। তবে ইসলাম বিদ্বেষী সরকার কি না—সেটাও বিবেচ্য। সরকারকর্তৃক সিদ্ধান্ত যেমন, ‘লক ডাউন’, ‘হেলথ ওয়ার’, ‘শাট ডাউন’ ইত্যাদি।
আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, তাকওয়া এবং পরহেজগারি অবলম্বন করাটা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ‘করোনা ভাইরাস’সহ সব ধরনের মহামারি হচ্ছে মহান আল্লাহর ক্রোধের নিদর্শন। তো, জামাত করা থেকে বিরত থাকার কথা বলে বলে যেন নামাজ থেকে গাফেল হয়ে না-যাই। তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। হিতে বিপরীত হবে (আল্লাহর পানাহ)।
অবস্থাদৃষ্টে, মহান আল্লাহ যদি রহম না-করেন, তাহলে পুরো পৃথিবী মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। পূর্বে বহু জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে বিভিন্ন আজাব দিয়ে। তা ছাড়া মক্কা-মদিনা সবসময়ই ছিল সমস্ত আজাব-গজব থেকে নিরাপদ।
পরিতাপের বিষয়, মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাধ্য হয়ে। সামনের অবস্থা সম্পের্ক আমরা কেউই অবগত নই। এই কঠিন মুহূর্তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আল্লাহমুখী হয়ে তওবা-ইসতেগফার করাটা অবশ্যকর্তব্য।
পাশাপাশি সর্বসাধারণের উচিত, অসুস্থ অবস্থায় যেকোনো জমায়েত পরিহার করার চেষ্টা করা। তাছাড়া স্বাভাবিক সর্দি, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ঋতু পরিবর্তনের সময় হয়ে থাকে। তা একদমই স্বাভাবিক। তবে এবার আতঙ্কের কারণে বেশ অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। আতঙ্কিত হলে শরীর বেশি অসুস্থ হতে পারে। বলাবাহুল্য যে, বেশিরভাগ সর্দি, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি করোনা নয়—সবাই জানি।
প্রত্যেকেই প্রত্যেকের তাকওয়া-পরহেজগারি বিবেচনায় কথা বলছেন। এতে করে দোদুল্যমান ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ। বিস্তৃত স্বার্থের লক্ষ্যে এমন শঙ্কাযুক্ত স্পর্শকাতর সময়ে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিটা বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে উত্তম এবং মধ্যমপন্থা সম্বলিত পরামর্শ বাতলে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞ আলেমসহ বড়দের নিকট বিনীত নিবেদন করছি। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সহায় হোন, আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
লেখক: তরুণ আলেম
আরএম/