আওয়ার ইসলাম: প্রশ্ন: আমার এক বন্ধু আল্লামা ইবনে কাইয়্যিমের কিতাব ‘আল মাউদুদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ফেরেশতা বা সূরার (যেমন তাহা, ইয়াসিন ইত্যাদি) নামে বাচ্চাদের নামকরণ করা মাকরুহ, কারণ এ নামগুলি বর্ণানুক্রমিক এবং এর অর্থ কেবল আল্লাহই জানেন। এগুলো নবিদের নামও নয়। (পৃষ্ঠা: ১০৯)
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তিনি বলেন, জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল, আজরাইল প্রভৃতি ফেরেশতাদের নাম এবং তাহা, ইয়াসিন ইত্যাদি সূরার নাম রাখা ঠিক আছে কি? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। অধিকাংশ আলেমের অভিমত হলো, ফেরেশতাদের নামে বাচ্চার নাম রাখা বৈধ; তবে ইমাম মালিক ও অন্যান্য কিছু আলেম এটিকে অপছন্দ করেছেন।
এক্ষেত্রে একটি হাদীস উদ্ধৃত করা হয়; তবে এটি সনদের দিক দিয়ে দুর্বল। হ্যাঁ যদি হাদিসটি শক্তিশালী সনদে প্রমাণিত হয় তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয় মাকরুহে তানযীহি ধরা হবে।
সুতরাং, ফেরেশতাদের নামে বাচ্চাদের নামকরণ করা এবং না রাখা উভয়ই জায়েয। কিছু আলেমের মতে ইয়াসিন ও তাহা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম; সুতরাং ইয়াসিন ও তাহা নাম রাখা বৈধ (ফতোয়া মাহমুদিয়া জাদিদ, ১৯/৩৭১,৩৭২, )।
আর একদিকে আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম যদিও ইমাম মালিক ও হারিছ ইবনে মিসকিনের মতামত ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করতে নিষেধ করার কথা উদ্ধৃত করেছেন। ঠিক অপর দিকে হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান এবং আরও অনেক আলেমের অভিমত জায়েজ হওয়ার পক্ষে উল্লেখ করেছেন। তবে তার মতামত ইমাম মালিকের মত বলে মনে হয়। যদিও হাম্বলি মাযহাবের কিতাব "আল মুগনিল মুহতাজে" জায়েজ হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সিংহভাগ আলেমের মতামত হলো, জিবরাঈল, মিকাইল ইত্যাদি নাম রাখতে কোন অসুবিধা নেই। মাকরুহ হবে না। (আল-মউসূআতুল-ফিকহিয়্যা, ১১/৩৩১,৩৩৫)। কাজী ইয়াজ রহ. বলেন,কিছু আলেম যেমন হারেস ইবনে মিসকিন এবং ইমাম মালেক রহ. ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করাকে মাকরুহ হওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন। আর অন্যান্যরা জায়েজ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক জামেতে মামার রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হাম্মাদ ইবনে সুলাইমানকে জিজ্ঞেস করলাম, ফেরেশতাদের নামে বাচ্চাদের নামকরণ করা যাবে কিনা? তিনি বলেছেন তাদের নামে নাম রাখাতে কোন অসুবিধা নেই। (তুহফাতুল মাউদুদ বি আহকামিল মাউলুদ, পৃষ্ঠা ২০১) ঠিক তেমনি নবীদের নামে নামকরণ করা, ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা, তাহা, ইয়াসিন ইত্যাদি নামে নাম রাখা সম্পূর্ণ জায়েজ। (মুগনিল মুহতাজ: হজের অধ্যায়, আকিকা পরিচ্ছেদ,১/৩৯১)
সূত্র: দারুল ইফতা, দারুল উলূম দেওবন্দ, অনুবাদ, ফয়জুর রহমান শেখ
-এটি