বেলায়েত হুসাইন ।।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বিরাশি বার সমগ্র মুসলিম উম্মাহর প্রতি ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আর তোমরা সকলে একসঙ্গে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৩)
গোটা পৃথিবীতে ইসলাম যেন বিজয়ী হয় এবং মুসলিম উম্মাহ সক্রিয় ও সংঘবদ্ধভাবে একটি শক্তি হয়ে বিশ্বকে একটি শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে পারে- এজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে সরে এসে পরস্পরের মধ্যে একতা ও সংহতি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে বারবার ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন।
অন্যত্র তিনি এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের এই যে উম্মত,এতো একই উম্মত এবং আমিই তোমাদের রব;অতএব,আমারই ইবাদত কর'। ( সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উম্মাহর ঐক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। সমগ্র মুসলিম জাতিকে অভিন্ন শরীর আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, মুসলমানরা সকলে মিলে একটি দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্টহয়, মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহের কষ্ট হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৬/৬৭)
উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয়, মুসলমানরা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত থাকবে। মহান আল্লাহকে এক বিশ্বাস করা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবশেষ নবী মেনে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে কোরআন ও হাদিসের ওপর পরিপূর্ণ ঈমান আনয়ন করা ও আস্থা রাখা- একজন মুসলমানের সংক্ষিপ্ত ও মূল পরিচয়।
এর বাইরে শাখাগত নানা বিষয়ে অনুসরণের ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে ভিন্নতা থাকতে পারে, সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম-দের সময়কালে তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে এরূপ লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং বোঝা যায়, এক দ্বীন এবং ধর্মের অনুসারী হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে টুকিটাকি মতপার্থক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। স্বঘোষিত একজন মুসলিম যতক্ষণ না স্পষ্ট কুফরি ও শিরকে পতিত হয়,ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে পারস্পরিক ঐক্য অটুট রাখার বিকল্প নেই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মুসলমানদেরকে ঐক্য ও সংহতির প্রতি আহবান করেছেন-এই পরিস্থিতিতে যার যার অবস্থানে থেকেও ইসলাম ও উম্মাহর কল্যাণার্থে সমস্ত মুসলিম এক ও অভিন্ন প্লাটফর্মে আসতে পারে। আর এজন্য একে অন্যের প্রতি উদার ও ছাড় দেয়ার মানষিকতা অর্জন করতে হবে।
এতে করে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহ তায়া’লা ও তাঁর রাসুলের কথার যথার্থতা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে যে, মুসলমানরা সত্যিকার অর্থেই একজন অন্যজনের ভাই- এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, ‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও'। (সূরা হুজুরাত-আয়াত-১০) হজরত আবু সাইদ খুদরী ও হজরত আবু হোরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমা বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। যে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্রজ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (মুসনাদে আহমাদ)
লেখক: তরুণ আলেম, সাংবাদিক
-এটি