শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

মসজিদে আয়েশা ও এখান থেকে ইহরাম পরিধান নিয়ে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমি।
মক্কা মুকাররমা থেকে>

সফরের ৪র্থ দিন।প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আলহামদুলিল্লাহ! কাবা শরীফেই আদায় করেছি। কোথাও বের হয়নি। সফরের সময়টাকে বেশি বেশি কাজে লাগানোর জন্য একাধিক নফল উমরাহ করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিলো। জুমার দিন প্রথম কাতারের আশায় তাহাজ্জুদের সময় মসজিদে গিয়ে আর আসা হয়নি। জু্মার নামাযের পরে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করার এমন ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে ছিলাম,মনে হয়েছিল-আসরের নামাযের পরে আমারই জানাজা হয় কিনা!

ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাদশাহ ফাহাদ কর্তৃক সম্প্রসারিত হারাম অংশে ঘুমিয়েছিলাম আসর পর্যন্ত। ওইদিন আর উমরাহ করা হয়নি,নফল তাওয়াফ করে রাতে আরাম করেছিলাম। পরদিন সকালে ফজর পড়ে আমি আর নূরুন্নবী ভাই এবং আজ আবার আমি,ইঞ্জিনিয়ার এস এম আবুল কাসেম সাহেবের ভগ্নিপতি পলাস ভাই ও ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মামাতো ভাই আলী আহমদ- তিনজন মসজিদে আয়েশার উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিসে যাবো টেক্সিতে না বাসে?আমি বললাম টেক্সির তুলনায় বাস ভালো হবে।

সৌদি সরকারের অধিনে মক্কা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত সাতকো বাসে চড়ে বসলাম। এ- বাসে করে মসজিদে আয়েশায় গেলাম এবং ওখানে গোছল করে, নফল নামাজ পড়ে, এহরামের নিয়ত করে আবার হারাম শরীফে ফিরে এলাম।আসার সময় আসা হলো টেক্সিতে। চালক ছিলো আমাদের গাজীপুরের রকিব নামে একটা ছেলে। সে এখানের চলাফেরা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলো।

মসজিদে আয়েশা মক্কার তানঈম এলাকায় অবস্থিত। হেরেমের বাইরে এহরাম বেঁধে ওমরাহ করার এটি মক্কা থেকে সর্বাধিক নিকটবতী স্থান। মক্কা থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার উত্তরে মক্কা-মদিনা রোড তরীক আল হিজরতে অবস্থিত। এই মসজিদ থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধা যায়। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা. এখান থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে উমরা করেছিলেন। পরে সেখানে একটি বিশাল মসজিদ গড়ে উঠে। মসজিদটি ইসলামী শিল্পনৈপুণ্যের এক অনুপম নিদর্শন।

বিদায় হজ্জের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা.- কে তার ভাই হজরত আবদুর রহমান রা.-এর সঙ্গে হারামের বাইরে এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে এখান থেকে মক্কাবাসীরা ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে থাকেন।

বিদেশি হাজিরাও কোন সফরের দ্বীতিয়-তৃতীয় ওমরার জন্য ওখান থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে থাকেন। অবশ্য এটা নিয়ে আহলে হাদীস নামের প্রান্তিকতার শিকার কিছু লোকেরা চরম বিতর্ক করে থাকে। মক্কা থেকে হযরত আয়েশা রা.মসজিদে আসতে বাস ভাড়া ৩ রিয়াল, আর ট্যাক্সি ভাড়া ৩০ রিয়াল। সারাক্ষণ নফল ওমরার ইহরাম বাঁধার জন্য আসা হাজীদের ভিড় থাকে। বিশাল এই মসজিদের দু’টি মিনার ও একটি গম্বুজ অনেক দূর থেকে দেখা যায়। মসজিদটি খেজুর গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত।

মসজিদের পবিত্র পরিবপশে যে আত্মতৃপ্তির মাধুরি মেশানো অনুভূতি তা প্রকাশ করতে বাক্য ও শব্দের আঁচল সত্যিই সংকীর্ন হয়ে আসে।

সীরাতে আয়েশার পাতায় পাতায় ইসলাম ও উম্মতে ইসলামের জন্য যে অবদান বিবৃত তা কিছু মনে পড়তেই চক্ষুদ্বয় অশ্রুসজল হয়ে উঠলো।

কুরআনের ব্যখ্যা বলুন আর হাদীসের রেওয়াত বলুন,সত্যের জন্য জঙ্গে জামালে সিপাহসালারী বলুন আর মুসলমানদের যে কোন সংকটে দ্বীনি রাহবারী বলুন,রাসূলের একান্ত মহব্বতের পাত্রী বলুন আর মুসলিম উম্মাহর মাতৃত্বের শ্রদ্ধার বিশেষ আসনে সমাসীনা বলুন-সেতো আবু বকর তনয়া আয়েশা,নবীপত্নী হুমায়রা,মুসলিম মিল্লাতের মা উম্মুল মুমিনীন।

আমরা ঐ মসজিদে যেয়ে এহরাম বেঁধে নফল করার জন্য বের হবো এমন সময় আমার সাথে আসল জনাব আলমগীর সাহেব। আমার উদ্দেশ্য জেনে বাংলাদেশের একজন মুখস্ত বুলি আওড়ানো বক্তার নাম নিয়ে বললেন-উনিতো আয়েশা মসজিদ হতে উমরা করার ব্যাপারে মতবিরোধ থাকার কথা বলেন,করলে হবেনা নাকি।

উনার যুক্তি, নবীজির সাথে হযরত আয়েশা রা.সহ মদিনা থেকে নিয়ত করে বিদায় হজ্জের সময় এসেছেন। ওই সময় হযরত আয়েশার পিরিয়ড (মাসিক) শুরু হয়, নবীজি হযরত আয়েশাকে উক্ত তানঈম স্থানে যেয়ে গোছল করে পুনরায় নিয়ত করে ভাইসহ এহরাম বেঁধে আসতে বললেন। এটা শুধু মেয়েদেরই কোন সমস্যার জন্য। সকলের জন্য নয়।আমি বললাম-মতবিরোধ কিসে নেই, মতবিরোধতো আল্লাহর অস্তিত্ব আর একত্ববাদ নিয়েও আছে।

তাহলে তা বাস্তবসম্মত এবং আমাদের নিকট স্বীকৃত নয়? শরীয়তের অনেক বিধানই এমন বিশেষ প্রেক্ষাপট কেন্দ্রীক। তবে কি তা সকলের জন্য মান্য নয়কি?

মক্কাবাসী এবং মক্কায় অবস্থানকারীদের নারী-পুরুষ,সুস্থ অসুস্থ সবার জন্যই ওমরার ইহরাম মসজিদে আয়েশা সহ সকল হুদুদে হরমের শুরু সীমানা থেকে করাই যথেষ্ট।হানাফী মাযহাবসহ অন্যান্য ফিকহেও এমনটাই পাওয়া যায়। হারাম কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাও এরকমই। ব্যতিক্রম কেবল আহলে হাদীস নামক নব ভাইরাসে আক্রান্তদের নিকট।

দলীল ভিত্তিক আলোচনার সুযোগ এখানে নেই।হযরত আয়েশার শানে বলা বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উসাইদ বিন হুযাইর রা. এর মন্তব্যটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছিলেন, مانزل بك امر تكرهينه الا جعل الله فيه فرجا و مخرجا لك و للمسلمين رواه البخاري

আমাদের হোটেলের কাছেই বিখ্যাত "ক্লক টাওয়ারে" বা মক্কা টাওয়ারের পাশে থেকে বাসে উঠলাম। তিন রিয়ালের লাল বাসে আমাদেরকে উঠিয়ে দিতে আসা পরিচিত একজন বাস স্টান্ডের সাথেই এক বিশাল গর্ত দেখিয়ে বললো, এখানে মেয়ে সন্তান হলে সে সময়ে মক্কাবাসীগন তাদের জীবন্ত কবর দিতেন। বিষয়টি শুনে আর স্থানটি দেখে আমাদের ভয়ে গা শিরশির করতে লাগলো।
কল্পনার চোখে ভেসে উঠলো পাষবিকতার এক ভয়াল চিত্র আর তার পরকালীন পরিণতি- واذا الموؤدة سئلت

বাসের লোকজন যারযার মত নেমে ইহরামের প্রস্তুতি নিতে লাগলো। মসজিদে আয়েশার গোছলের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীগন সবই বাঙ্গালী, গোছলের খুবই সুব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ইহরাম বেধে আবার বাসে করে হেরেম শরীফ এসে নফল ওমরাহটি জোহরের নামাজের মধ্যেই শেষ করলাম এবং হোটেলের কাছে এক পাকিস্তানি সেলুনের দোকানে মাথা হলক করে সোজা হোটেলের রুমে চলে এলাম। সবমিলিয়ে খুব ভালো লাগলো সংক্ষিপ্ত এ যাতায়াত।

লেখক, পরিচালক- মারকাযুদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া-ঢাকা। মুহাদ্দিস- জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর- ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ