হুমায়ুন আইয়ুব।।
বাংলা একাডেমির আয়োজনে চলছে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান এই মেলায় মসজিদের আয়তন ছোট থাকায় গত শুক্রবার একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে মাগরিবের নামাজে মুসল্লিদের প্রচণ্ড ভিড় হয়। ফলে মেলার মাঠেই নামাজ আদায় করেন অনেকেই। নামাজের এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নামাজের এই ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তবে তীব্র গাত্রদাহে ভুগছেন বিতর্কিত ও নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি এটাকে ইস্যু করে ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
নামাজের এই দৃশ্য টুইটারে শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থমেলাটি প্রগতিশীল ও উদারপন্থী মানুষের জন্য। এই গ্রন্থমেলাটি তাদের জন্য, যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন। তবে আজ জাতীয় এ গ্রন্থমেলা ইসলামপন্থীদের দখলে। একদিন তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তাকে লাথি মেরে বলবে। ইসলাম নারীনেতৃত্ব নিষিদ্ধ করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে শেয়ার করে বিতর্কিত এ মন্তব্যের পরেই তার ভেরিফাইড ফেসবুকে গ্রন্থমেলায় নামাজ আদায়ের ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘পুরা বাংলাদেশ দখল কইরা নিছে, বইমেলা দখল করা কোনও ব্যাপার হইলো? মেলার ভেতরে ঢুইকা এরা নামাজ পড়তাছে। এই নামাজটা রাজনৈতিক। ইসলামটাই এখন আর ধর্ম না, পুরাই রাজনীতি। দখলের রাজনীতি। মেয়েদের অবয়ব মুইছা দেওয়া, বিধর্মীদের নিশ্চিহ্ন কইরা দেওয়া। রাস্তাঘাট দখল, ইস্কুল কলেজ দখল, কোর্ট কাচারি দখল, মসনদ দখল। একের পর এক দেশ দখল। বাধা দিতে গেলেই ঘ্যাচাং। দারুল ইসলামের রাজনীতি এইরকমই। পিছন থেইকা আচানক, অ্যামবুশ অ্যাটাক।’
তসলিমা নাসরিনের এই মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনলাইনেএক্টিভিস্ট সাইমুম সাদী লিখেছেন, সেকুলার শিবিরে হা-হুতাশ। দখল হয়ে যাচ্ছে প্রাণের বইমেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে শুধুই সাদা টুপি আর পাঞ্জাবির ভিড়। ওদের কাছে কওমি-আলিয়া কোনো পার্থক্য নেই। দাড়ি টুপি হলেই ওরা শত্রু হিসেবে গণ্য করে। এখনও কি বুঝতে পারেননি, সময় এখন মতবাদ প্রচারের নয়, দলীয় প্রাধান্যের নয়, সময় এখন ঈমান রক্ষার?
সাংবদিক জহির উদ্দিন বাবর তার ফেসবুকে লিখেছেন, টুপি-দাড়িওয়ালারাও এদেশেরই নাগরিক। এদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে আপনাদের যেমন অধিকার আছে, টুপি-দাড়িওয়ালাদেরও আছে। যে ট্যাক্সের টাকায় বইমেলার আয়োজন করা হয় সেখানে কি টুপি-দাড়িওয়ালাদের টাকা নেই! তাহলে তারা বইমেলায় গেলে আপনি অস্বস্তি বোধ করেন কেন? শিল্প-সাহিত্য কি কারও পৈত্রিক সম্পত্তি যে, আপনারাই করবেন, অন্যরা করতে পারবে না!
আপনি বাবরি ঝুলিয়ে, লম্বা গোঁফ রেখে, কপালে টিপ বা সিঁদুর মেখে শিল্প-সাহিত্য করতে পারবেন আর অন্যেরা টুপি পরে, দাড়ি রেখে তা করতে পারবে না, এটা আপনাদের কোন ধরনের বিচার! মনটা একটু বড় করুন, দৃষ্টিটা একটু প্রশস্ত রাখুন। এতে স্বস্তি ও আরাম পাবেন।
আর টুপি-দাড়িওয়ালাদের জন্যও উচিত ‘দখল করে নিয়েছি’ এই ধরনের মানসিকতা পোষণ না করা। বইমেলায় গিয়ে এমন কিছু না ঘটানো যা দৃষ্টিকটু কিংবা পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ‘মোল্লা’ আর ‘মিস্টারদের’ মধ্যে বোঝাপড়া ও সহনশীলতা বাড়লে, পারস্পরিক দূরত্ব কমে এলে উভয়ের জন্যই তা মঙ্গলজনক।
মুফতী হাবীবুর রহমান মিছবাহ। এবারে মেলায় এসেছে তার লেখাগ্রন্থ চেঞ্জ ইউর মাইন্ড। তিনিই গত শুক্রবার মেলায় মাগরিবের নামাজের ইমামতি করেছেন। তার মতামত জানতে চাইলে তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলামকে বলেন, তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে আমার বলার তেমন কিছুই নেই। ইসলামের ব্যাপারে সামান্য উত্থান দেখলেই তাদের গা জ্বলে। এটা তাদের পুরানো অভ্যাস। আগের থেকেই তারা ইসলামের সমালোচনা করে আসছে। এগুলো নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই।
আমলে নেয়ার মতো কিছুই দেখি না। আমাদের কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বাকি তার বক্তব্য বিপরীতে বলবো আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, নাগরিক অধিকার আমরা রাখি। তাছাড়া ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশে আমাদের অধিকার একটু বেশিই। আমরা যেকোনো জায়গায় ইসলামের বিধান পালন করার অধিকার রাখি। আমরা তো কোনো গির্জা বা মন্দিরে তাদের পূজা অর্চনার ক্ষতি করে নামাজ আদায় করিনি। বইমেলা একটি সার্বজনীন জায়গা। বইমেলার নির্ধারিত জায়গা ছোট হওয়ায়, মুসল্লিদের সংকুলান না হওয়ায় আমরা বাইরে নামাজ আদায় করেছি।
-এটি