আবু বকর আদনান।।
আমার পড়ার টেবিলে মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারগ্রন্থ ‘হরফে আঁকা জীবন’। প্রচ্ছদে সবুজের গালিচা বিছানো। মাঝখানে বড় বড় অক্ষরে আঁকা বইয়ের নাম। দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ। প্রথম দেখাতেই হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে মুগ্ধতার আবেশ। মনে হয়—বইয়ের কাভার এতোটা চমৎকার হতে পারে! বইটি মাত্রই পড়ে শেষ করলাম। ঘোর এখনো কাটেনি। প্রশ্নত্তোরের সেতুবন্ধনে বইয়ের গল্পগুলো হাত ধরাধরি করে চলে গেছে অনেক দূর। হঠাৎ শেষ হওয়ায় মনে হচ্ছে এতো দ্রুত শেষ হয়ে গেলো!
দুই.
মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন একজন শক্তিমান লেখক ও খ্যাতিমান গদ্যশিল্পী। আমাদের গর্বের ধর্ম ইসলাম এবং প্রাণের শাহেনশাহ হজরত মুহাম্মাদ (সা.) কে উপজিব্য করে যারা বর্তমানে লেখালেখি করছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন তিনি। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখির ময়দানে তার সরব পথচলা। আশির দশকের শেষ দিকে কলম হাতে নব-সূর্যের মতো জেগে ওঠেছেন তিনি। সেই সূর্য এখন মধ্যগগনে সাধ্যের সবটুকু বিলীন করে আলো বিলিয়ে যাচ্ছে। কালি-কলমের সুদীর্ঘ এই সফরের নানা অভিজ্ঞতা-প্রতিকূলতা, আনন্দ-বেদনার অজনা গল্পগুলো উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারের ছত্রে ছত্রে। সাথে সাথে তার ব্যক্তিগত জীবনের দিকগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। কেমন ছিলো তার সোনালী শৈশব, দুরন্ত কৈশোর, যৌবনের উচ্ছল দিনগুলো। আছে পড়াশোনার পাঠ, কর্মজীবন, বিয়ে-শাদি ও লেখালেখির গল্পও। এককথায় কোন কিছুই বাদ পড়েনি।
বইয়ের বিন্যাসটা হুবহু এমন—স্মৃতির শৈশব, বেড়ে ওঠার কৈশোর, পড়াশোনার সূচনা, গ্রাম ছেড়ে ঢাকায়, দেওবন্দের আঙিনা, লেখালেখির হাতেখড়ি, যাদের লেখায় প্রভাবিত, বর্ণিল কর্মজীবন, সাহিত্য পাঠ, নান্দনিক লেখালেখি, লেখক বন্ধুরা, লেখক সম্মাননা ও পদক, প্রকাশনা ও বইমেলা, রাজনৈতিক ভাবনা, বিয়ে ও পরিবার, তারুণ্যের স্বপ্ন ও নির্মাণ।
তিন.
যারা লেখালেখির মানুষ তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খোরাক রয়েছে এই বইয়ে। বইটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে বর্তমান তরুণদের লেখালেখি এবং পাঠ সংক্রান্ত বিষয়টি মাওলানা যাইনুল আবিদীনকে অনেক ভাবিয়েছে। তিনি তার মজবুত পাটাতনে দাঁড়িয়ে একে একে বলেছেন তরুণদের সব সমস্যার সমাধান। বইয়ের পাতায় পাতায় রয়েছে নবীনদের জন্য অসামান্য হীরকখণ্ড ও অমূল্য পাথেয়। যা না পড়লে কিছুই বোঝা যাবে না। মনে হবে এটা গতানুগতিক বইয়ের মতোই একটি বই। আসলে তা নয়। এই বই সম্পূর্ণ ভিন্ন ও অনন্য!
বাস্তব কথা হলো—একজন মানুষ তার জীবনকে যেভাবে উপলব্ধি করতে পারে অন্যের দ্বারা তা সম্ভব হয় না। একজন যাইনুল আবিদীন তার জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া নানা কাহিনী এবং অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন নিষ্ঠার সাথে। বস্তুত নিজের সম্পর্কে যা বলার তার চেয়ে অনেক কম-ই বলেছেন তিনি। মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী তার এই বইয়ের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন—‘আমার সাফ মন্তব্য—নিজের সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন খুব কম-ই বলেছেন।’ এখানেই তার বিনয়- নম্রতা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
ঘরে বসে বইটি পেতে ক্লিক করুন।
চার.
বলাবাহুল্য, এরকম কাজ আমাদের ইসলামি অঙ্গনে হয়নি। এটাই প্রথম। একজন ব্যক্তির বর্ণাঢ্য জীবনীকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অল্প পরিসরে ফুটিয়ে তোলা। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও গ্রন্থনা করেছেন তরুণ লেখক দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার ইসলাম বিভাগের সম্পাদক মাওলানা আমিন ইকবাল। সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব তিনি। গ্রন্থটির পাতায় পাতায় ফুটে উঠেছে তার সৃজনশীলতা। বইয়ের বিন্যাসটা চমৎকার। প্রশ্নের মুনশিয়ানা ও রুচি বোধ দারুণ!
পাঠকের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নগুলোই তুলে ধরেছেন সংকলক। বর্ননাভঙ্গি ঝরঝরে। সুখাদ্য। পড়তে গিয়ে ভালোলাগার অতল সরবরে অবগাহন করেছি। বিষয়-বস্তুর সাথে মিশে চেহারায় কখনো ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক, কখনো বেদনার বিমর্ষ ছায়া! স্বীকার না করে উপায় নেই—এই বই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। প্রিয় পাঠক! মাকতাবাতুল ইসলাম থেকে প্রকাশিত ‘হরফে আঁকা জীবন’-এ আপনিও প্রবেশ করুন। ঘুরে দেখেন একজন মহিরূহের জীবনকে কিভাবে আঁকা হয়েছে কালির হরফে। বিশ্বাস করুন! আপনিও মুগ্ধ হবেন।
-এএ