শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

ইসলামী বইমেলা বনাম অমর একুশে বইমেলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আশিকুল ইসলাম খান।।

প্রতিটি জাতির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হচ্ছে জাতি ও সমাজের আয়না। এ আয়নায় হুবহু অবলোকন করা যায় কোনো নির্দিষ্ট সংস্কৃতির অনুসারীদের জীবনচিত্র, জীবনবোধের নমুনা। সংস্কৃতি জানিয়ে দেয় তার অনুসারীরা কতটুকু সভ্য , ভদ্র ও সলজ্জ। সভ্য জাতির জীবনযাত্রা নির্বাহের পদ্ধতি ফুটে উঠে তাদের সংস্কৃতিতে। শিল্প , বিজ্ঞান , দর্শন , ধর্ম ও বিবিধ বিদ্যায় একটি জাতি কতটুকু উন্নতি সাধন করেছে ,তাও দেখা যায় সংস্কৃতির আয়নায়।

বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে মেলা। বিভিন্ন উপলক্ষে এ দেশের গ্রামে-গঞ্জে মেলার আয়োজন হয়। একজন মুসলিম ইসলামের দিক বিবেচনা না করে মেলা বা অন্য কিছুতে অন্ধের ন্যায় কারো অনুসরণ করতে পারে না। বরং প্রতিটি মুসলমানের উচিত হলো ইসলামের ছাঁকুনিতে ছেঁকে কোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জন করবে।

কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় যে , স্থানীয় সংস্কৃতি চর্চার নামে অনেক মুসলমান শরিয়ত নিষিদ্ধ কিছু মেলার সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। অথচ একটিবারের জন্যও ভেবে দেখছে না যে , ইসলাম আমাকে এ কাজের অনুমতি দেয় কিনা ?

ইসলামের দৃষ্টিতে মেলা: সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে মেলার সাথে ইসলামের কোনো সংঘর্ষ নেই । কারণ মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শনী। আর ইসলাম হালাল মালের ক্রয়-বিক্রয়কে শুধু বৈধ বলে নাই। বরং ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছে।

কুআন কারীমে উল্লেখ রয়েছে আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। ( সূরা , বাকারা , আয়াত নং ২৭৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর হাশর হবে নবীগণ , সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সাথে। ( তিরমিজী শরীফ , হাদিস নং ১২০৯)

অবশ্য উল্লেখিত মূলনীতির আলোকে সকল মেলাকে বৈধ বলা যাবে না। বরং মেলার চরিত্র-প্রকৃতির ভিন্নতার কারণে হুকুমও ভিন্ন হবে। অধুনা আলোচিত গ্রহণযোগ্য একটি মেলা হলো: ‘অমর একুশে বইমেলা’ তবে আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে দুই ধরনের বইমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

(১) ইসলামী বইমেলা। যা শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় , ফেরাকে বাতেলার প্রতিরোধে, অপ্রতিরোদ্ধ প্রাচীর বিনির্মাণে, পথ হারা উম্মাহর সঠিক পথ প্রদর্শন এবং একঝাক যোগ্য কলম সৈনিক গড়ে তোলার লক্ষে তাদের হাতে কম দামে বই পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন লাইব্রেরীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়।

যেমন ঢাকার মধ্যবাড্ডায় মাকতাবাতুল আজহারের বইমেলা , বাংলাবাজার ইসলামী টাওয়ারের বইমেলা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত বায়তুল মুকাররামের মাস ব্যাপি বইমেলা। এ জাতিয় বইমেলা শরীয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়।

(২) অমর একুশে বইমেলা। বইমেলা আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্য। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এক সময় বাংলা একাডেমীর চত্বরে শুরু হওয়া বইমেলা বইপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরির করা হয়। বইমেলা জ্ঞানার্জনের অন্যতম মাধ্যম। আধুনিক এ ডিজিটাল যুগেও ছাপানো বইয়ের এতটুকু গুরুত্ব কমেনি।

ভালো মানের বইয়ের গুরুত্ব দিনদিন বেড়েই চলছে। ফেব্রুয়ারি মাস বাঙালী জাতির ভাষার মাস। এ মাসের প্রথম তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হয়ে মাসের শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে। রেওয়াজ অনুযায়ী দেশের সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্ভোধন করে থাকেন।

বইমেলা প্রতিটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ভারতের কলকাতা , রাশিয়ার মস্কো এবং মিশরের কায়রোসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বইমেলা হয়। বইমেলায় প্রত্যেকেরই যাওয়া উচিত।

কিন্তু বাঙালী জাতির ঐতিহ্য অমর একুশে বইমেলায় কিছু অনৈসলামিক কার্যক্রমের কারণে বইমেলায় যাওয়ার বৈধতা নিয়ে সমকালীন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। এ মতভেদের কারণ হলো, বইমেলায় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ , গান বাজনা বাজানো এবং নারীদের দ্বারা স্যাল ম্যানের কাজ নেওয়া।

এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য হলো, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলায় প্রবেশদারের দুই পাশে দু'একটি স্টলে গান-বাজনা হওয়ার কারণে বইমেলায় যাওয়া নাজায়েজ বলা যাবে না। কারণ বাজারেও দু'একটি দোকানে সর্বদা গান-বাজনা লেগেই থাকে। কিন্তু একারণে কেউ বাজারে যাওয়া নাজায়েজ বলেননি।

বাজারে যেরকম মানুষ প্রয়োজনের কারণে যায় , বইমেলাতেও সেরকম প্রয়োজনের কারণেই যায়। প্রয়োজনের দিক থেকে একটা আরেকটার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মোটকথা দু'একটি স্টলে গান-বাজনা হওয়ার কারণে বই মেলায় যাওয়া অবৈধ বলা যাবে না।

বইমেলায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বাজারের মতো নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ এবং কিছু কিছু স্টলে মহিলার দ্বারা স্যাল ম্যানের কাজ নেওয়া। তো এবিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমাদের মন্তব্য হলো , প্রয়োজন হলে বইমেলায় যেতে পারবে।

তবে বর্ণিত শর্তসমূহ অবশ্যই পালনীয়। (১) চোখের হেফাজত করতে হবে। (২) যে দু'একটি স্টলে গান-বাজনা হয় , সেগুলোতে যাওয়া যাবে না। (৩) বই মেলায় যেহেতু তরুণ-তরুণীদের অবাধ বিচরণ হয়। এজন্য প্রয়োজন শেষেই চলে আসতে হবে। (৪) যে স্টলগুলোতে মহিলারা স্যাল ম্যানের কাজ করে।  বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া সেগুলোতে যাওয়া যাবে না। (৫) সর্বপ্রকার অনৈসলামিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। (সূরা নূর ৩০, সূরা নাহল , আয়াত নং ৯০ , সূরা লুকমান , আয়াত নং ৬ , সূরা মায়েদা , আয়াত নং ২ , তাফসীরে ইবনে কাছির , খ. ৩ , পৃ. ৫৭৮)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ