বেলায়েত হুসাইন
গত বছরের শেষ দিকে পেঁয়াজের রেকর্ড পরিমাণ দাম ওঠায় এবছর চাষীরা পেঁয়াজ চাষেও রেকর্ড গড়েছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কয়েকটি পেঁয়াজের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তূলনায় এবছর এসব মাঠে অধিক পরিমাণ পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে; মাঠের যেসব জমিতে শাকসবজি বা ধান চাষ করা হতো এরকম অসংখ্য জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপন করেছেন চাষীরা। তাদের বিশ্বাস, বিগত মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের দাম তাদের হতাশ করলেও এবছর শুরু থেকেই ভাল দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন তারা।
মৌসুম চলাকালীন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবেনা-সরকারের এই ঘোষণা তাদের মনের বিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগের মৌসুমে শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলেও সাধারণ চাষীরা তেমন সুবিধা পাননি; অধিকাংশ কৃষকের ঘর পেঁয়াজশূন্য হওয়ার পরই মূলত বহু প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পায়। হাতেগোনা অল্পসংখ্যক চাষী কিছু পেঁয়াজ ভাল দামে বিক্রি করতে পেরেছে ঠিক, তবে ‘সুদে আসলে’ লাভ-লোকসানের পাল্লা তাদের জন্যও সমান সমান।
জানা কথা, গত বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ পচেছে-বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটি কেউ আগে দেখেনি। ফলে শেষ মৌসুমে দাম বাড়লেও চাষীদের মুখে হাসি ফুটেনি। অধিকন্তু বিরাট ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
চলতি মৌসুমের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে এখনো অন্তত দেড় দু’মাস বাকি, কৃষক যদি ক্ষেতে ঠিকমতো সার-ঔষধ দিতে পারেন এবং সময়মতো বৃষ্টি হয়, তাহলে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বড় একটি আশংকা থেকেই যায়-যদি পরিপক্ক হওয়ার পরে পেঁয়াজের ক্ষেতে সামান্যও শিলাবৃষ্টি হয়, তাহলে সর্বনাশ!
সেই পেঁয়াজ আর ঘরে রাখা যায়না, অল্পদিনেই তাতে মারাত্মক আকারের পচন সৃষ্টি হয়। আর শিলাবৃষ্টির পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে ওই পেঁয়াজ অনেক সময় ক্ষেতেই পচতে শুরু করে। এজন্য পুরো মৌসুম জুড়ে অজানা আশংকায় কৃষক দিনানিপাত করতে থাকেন।
তারপর আল্লাহর রহমতে ভালোয় ভালোয় যদি তারা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারেন, তখন তারা একটা তৃপ্তির হাসি হাসতে পারেন। আর যদি ঘরে ওঠা নতুন পেঁয়াজের দাম তাদের আশানুরূপ হয়, তাহলে তো কথাই নেই; কৃষকের মুখের হাসিটা আরও চওড়া হয়ে ওঠে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিকট অনুরোধ ক্রেতা ও বিক্রেতা-উভয়ের কথা মাথায় রেখে নতুন পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করুন। এতে সকলের মুখের হাসিই অত্যন্ত মধুর হয়ে ওঠবে।
-এটি