রওশন আরা মুক্তা ।।
মানুষের দুধের ব্যাংক এর সমস্যা অন্য জায়গায়। শিশুর জন্য কৌটার দুধ, গরুর দুধ বা ছাগলের দুধ কোনো দুধই মানুষের দুধের সমতুল্য তো নয়ই ধারে কাছেও না। যে নবজাতকের মা মারা গেছে, বা দুধ অপ্রতুল অথবা যে মায়ের শিশু মারা গেছে বুকে ব্যথা হচ্ছে এদের জন্য একটা উপায় তৈরি করলে নবজাতকের প্রাণ বাঁচবে আবার শিশুহীন মায়েদের স্বাস্থ্যও রক্ষা হবে।
অনেকেই জানেন না, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে সেই মায়ের নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে হয়। নিয়মিত শিশুকে দুধ খাওয়ালে মাতৃত্বজনিত অনেক শারীরিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
আবার দুধ খাওয়ানোর কিছু নিয়ম আছে সেগুলো মেনে দুধ খাওয়ানো শিশুর শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য অতি জরুরী। যেমন দুধ খাওয়ানোর আগে শিশুকে বুকের সাথে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখা, এতে শিশু ভালোবাসা অনুভব করে এবং দুধ চুষতে গিয়ে তাড়াহুড়া করে কেশে ওঠে না।
এরপরও যদি শিশুর তাড়াহুড়া থেকেই যায় তখন ধরে ধরে আস্তে ধীরে দুধ দিতে হয়, যা একজন মাতৃশরীরের মানুষই সবচেয়ে বেশী ভালো বোঝেন। নবজাতক অনেক নাজুক থাকে, তাড়াহুড়াতে এক বিন্দু দুধ যদি শ্বাসনালীতে যায় এ থেকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আবার, মানুষের দুধের ব্যাংকে টাকার বিনিময়ে যারা দুধ দেবেন তাদের স্বাস্থ্য ও অভ্যাস সম্পর্কে জানা থাকা খুবই জরুরী। কারণ মানুষের শরীরের সব উপাদানই বুকের দুধে মিশে যায়। একেকদিন একেক মায়ের দুধ বাচ্চার জন্য কোনোমতেই স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে না। দু'দিন কম ঝাল খাওয়া মানুষের দুধ খেয়ে একদিন বেশী ঝাল খাওয়া মানুষের দুধ খেলে বাচ্চার নিশ্চিত আমাশয় বা ডায়রিয়া হবে।
দুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণসহ আরও জটিল ব্যাপারও এর সাথে জড়িত। মানুষের দুধ তো জ্বাল দিয়ে খাওয়াতে পারবেন না। ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতেই দুধের কোয়ালিটির বারোটা বেজে যাবে।
মা-শিশুর এই দুধের সম্পর্কের সবচেয়ে জরুরী দিক হলো উষ্ণতা। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক যা দিতে পারবে না কারণ এটা সম্ভব না।
চেষ্টা করা দরকার, কীভাবে সেই সকল শিশুদের একজন পার্ট টাইম দুগ্ধদাত্রী মা, এবং সেইসকল মা'কে পার্টটাইম নবজাতক এনে দেয়া যায়। আসলে এই দুই পার্টির যোগাযোগের রিলায়েবল একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাটাই একটা অসাধারণ কাজ হতে পারে। এই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক এর কোনো দরকারই নেই। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
(লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)
আরএম/