শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী ।।

হঠাৎ শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় সারাদেশে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

আবহাওয়া অফিস আগামী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই তীব্র শীত অনেকের জন্যই দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের গ্রামের অভাবী ও গরিব মানুষ। শিশু ও বয়স্ক মানুষের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত। শীতে অভাবী মানুষের জন্য এখন জরুরি দরকার হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। কিন্তু গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য।

তাই সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তা হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়।

দরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। বদর যুদ্ধে বন্দী হজরত আব্বাস রা. কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট মুদার গোত্র হতে গলায় চামড়ার আবা পরিহিত বস্ত্রহীন কিছু লোক আগমন করলো। তাদের করুণ অবস্থা দেখে তাঁর চেহারা বিষণ্ন হয়ে গেলো।

তিনি নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরামের সামনে দান-সাদকার উৎসাহমূলক খুতবা প্রদান করলেন। ফলে সাহাবায়ে কিরাম এত অধিক পরিমাণ দান করলেন যে, খাদ্য ও পোশাকের দুটি স্তুপ হয়ে গেলো। এ দৃশ্য দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

বস্ত্র দানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, "কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।" (সুনানে আবু দাউদ)।

এই হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দীনি দায়িত্ব। এ বিষয়ে হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার সকল বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দিবেন" (সহিহ মুসলিম)।

পরিশেষে বলবো, আমাদের উচিত দরিদ্র বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষকে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ