রকিব মুহাম্মদ ।।
প্রতি বছর আরবি মাসের ১১ রবিউস সানি ‘ফাতিহা-ই-ইয়াজদহম’ পালিত হয়ে থাকে। বিশ্ব মুসলিম দরবারে বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম কী। ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম হলো বড়পীর হজরত আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর ওফাত দিবস। হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি তিনি ইন্তিকাল করেন।
‘ইয়াজদাহম’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ এগারো। ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম বলতে এগারো তম দিনকে বোঝায়। এই ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম আবদুল কাদের জিলানী রহ: এর স্মরণে পালিত হয়।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম নিয়ে বিতর্ক
ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে তারিখে ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম ’ পালন করা হয় অর্থাৎ এগার রবিউস সানী তা ঐতিহাসিকভাবে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর মৃত্যুদিবস হিসেবে প্রমাণিতও নয়। কারণ তার মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর জীবনীগ্রন্থ ‘তাফরীহুল খাতির ফী মানাকিবিশ শায়খ আবদুল কাদির’-এ এ সম্পর্কে কয়েকটি মত উল্লেখ করা হয়েছে : রবিউস সানীর নয় তারিখ, দশ তারিখ, সতের তারিখ, আঠার তারিখ, তের তারিখ, সাত তারিখ ও এগার তারিখ।
আবার কারো কারো মতে রবিউল আউয়ালের দশ তারিখ। এই আটটি মত উল্লেখ করার পর গ্রন্থকার দশই রবিউস সানীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : ফাতাওয়া রহীমিয়া ২/৭৬-৭৭)
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা হাফেয যাহাবী রাহ. (৭৪৮ হি.)ও বলেছেন- ‘তিনি নববই বছর বয়সে ৫৬১ হিজরীর রবিউস সানীর দশ তারিখে ইন্তেকাল করেন।’ (তারীখুল ইসলাম ২৯/৬০)
এছাড়া ইতিহাস ও আসমাউর রিজালের অন্যান্য কিতাবেও আট, নয় ও দশ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগার তারিখ নয়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে ইয়াজদহম পালন
এ কথা অনস্বীকার্য হজরত আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর অবদান বিশ্বে অনন্য। তিনি মুসলিমদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তবে তার ওফাত উপলক্ষ্যে ঘটা করে দিনটি পালন করাকে উলামায়ে কেরাম জায়েজ মনে করেন না। কেননা ইসলাম এ ধরনের অনুষ্ঠানসর্বস্ব বিষয়কে স্বীকৃতি দেয় না।
এ সম্পর্কে মারকাযুদ দাওয়া আল-ইসলামীয়ার আমিনুত তালিম মাওলানা আব্দুল মালেক ‘একটি রসম : ফাতেহায়ে ইয়াজদহম পালন’ শিরোনামে এক নিবন্ধে লেখেন, “রবিউস সানীর এগার তারিখে অনেককে ফাতেহায়ে ইয়াজদহম (এগার তারিখের ফাতেহা) বা শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর ওফাত দিবস পালন করতে দেখা যায়। এ উপলক্ষে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয় এবং মাহফিল-মজলিসের আয়োজন করা হয়। এটা একটা কু-রসম। ইসলামী শরীয়তে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালনের নিয়ম নেই।”
“নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাঁদের কারোরই জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস পালন করার কথা শরীয়তে নেই। তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন করতে হলে তো বছরের প্রতিদিনই পালন করতে হবে। অথচ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম তো সকল ওলি-বুযুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের জন্মদিবস পালন করেননি বা অনুসারীদেরকে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালনের আদেশ করেননি। পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে।” যোগ করেন মাওলানা আব্দুল মালেক।
ওলামায়ে কেরামের মতে, যেকোনো দিন নেককার বুযুর্গদের জীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাঁদের জন্য ঈসালে ছওয়াব করা যায়। তা না করে নির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েয-নাজায়েয বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবস উৎযাপন করা রসম ও বিদআত ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ধরনের বিদআত ও রসম পালনের মাধ্যমে খোদ শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মতো বুযুর্গ ওলিদের অবমাননাই করা হয়। আর আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টিসহ বিদআতের অন্যান্য শাস্তি তো রয়েছেই।
সুতরাং যে কোন দিন শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.- এর রুহের শান্তির জন্য দোয়া মুনাজাত ও তার জীবনী আলোচনা করা যেতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হজরত আবদুল কাদের জিলানী রহ. এর জীবন ও কর্ম সব সময় স্মরণ রাখার তওফিক দিন।
আরএম/