মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

শান্তির ঠিকানা হিসেবে নাম করেছে আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: শান্তির ঠিকানা হিসেবে নাম করেছে আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাত এমনিতেই গীনেজ বুকে শীর্ষে আছে দর্শনীয় স্থানের জন্য।

ইউরোপ আমেরিকার পর্যটকদের ঢল নামে দেশটিতে এ ঠাণ্ডা মৌসুমে। ধর্মীয় উপাসনালয়ও যে দর্শনীয় স্থান হতে পারে তার নজির স্থাপন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

রাজধানী আবুধাবীতে নির্মিত শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় সহসাই চোখে পড়ে। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরব আমিরাত এর প্রয়াত রাষ্ট্র প্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ানের নামানুসারে। মসজিদটি আরব আমিরাতের সবচে' বড় মসজিদ। এমনকি এ মসজিদ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম সুন্দর মসজিদ।

৩৮ টি প্রখ্যাত ঠিকাদারি কোম্পানির ৩০০০ হাজার দক্ষ কর্মী বাহিনী এ মসজিদ নির্মাণ করেন। সে সময়ে ইতালি, জার্মানি, মরক্কো, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ অনেক দেশের কাঁচামালে নির্মাণ করা হয় এ মসজিদ।

শেখ জায়েদ মসজিদের নকশায় পাকিস্তান, ভারত ও মরক্কের প্রভাব স্পষ্ট রয়েছে। সরকারী কোষাগার থেকে নির্মিত এ মসজিদ নির্মাণে খরচ হয়েছে $৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্থাপত্যশিল্পের জন্যও এটি একটি পাঠশালা। নানাদেশের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীরা এ মসজিদে বিদ্যা অর্জনে আসেন। চার কোণে চারটি মিনারে পুষ্পশোভিত নকশা রয়েছে। যার উচ্চতা ৩৫১ ফুট(প্রায় ১০৭ মিটার)।

নকশা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মার্বেল পাথর, মূল্যবান স্ফটিক পাথর,ও মৃৎশিল্প। শেখ জায়েদ মসজিদের নকশায় মুঘল এবং মুরিস মসজিদ, গম্বুজ বিন্যাস ও ফ্লোর বিন্যাসে বাদশাহি লাহোরে মসজিদ, মিনারে দ্বিতীয় হাসান মসজিদ (মরক্কো) এর প্রভাব স্পষ্ট প্রতীয়মান।

আরবের ২০০ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার নমুনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে মার্বেল পাথর, সোনা, আধা মূল্যবান পাথর, স্ফটিক ও মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরন ব্যবহার করে। সংযুক্ত আর আমিরাতের মোহাম্মদ মান্দি আল তামামি , সিরিয়ার ফারুক হাদ্দাদ এবং জর্দানের মোহাম্মদ আলাম এর ক্যালিওগ্রাফি ও নকশা চোখে পরে মসজিদের সর্বত্র।

ডিজাইন ও নির্মাণে ইতালি, জার্মানি, মরক্কো, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস ও সংযুক্ত আরব সহ অনেক দেশ থেকে কারীগর ও উপকারণ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে আছে ছোট-বড় সাত আকারের ৮২টি গম্বুজ। যা নির্মাণ করা হয়েছে স্বেত মার্বেল দিয়ে। মসজিদের বৃহত্তম গম্বুজের উচ্চতা ২৭৯ ফুট।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ অনেক বিশেষ এবং অনন্য উপাদান আছে। প্রধান প্রার্থনা কক্ষে ইরানের কার্পেট কোম্পানি তৈরি যা ইরানী শিল্পী আলী খালিদির ডিজাইনে বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই গালিচা ৬০৫৭০ বর্গ ফুট এবং এই কার্পেট এর ওজন ৩৫ টন। নিউজিল্যান্ড এবং ইরানের উল থেকে তৈরি করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল। দিনের বেলায় মসজিদটি চোখে ভাসে সাদা আলোয়। রাতের মায়াবি রূপ যেন পর্যটকদের আরো কাছে টানে। বাহারি রঙের আলোয় ঝিলমিল করে মসজিদের চারপাশ।

স্ফটিক সচ্ছ লক্ষ লক্ষ পাথরের তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি এই মসজিদে। জার্মানির তৈরি ঝাড়বাতিটির ব্যাস ১০ মিটার (৩৩ ফুট) এবং উচ্চতা ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) দ্বিতীয়, তৃতীয় বৃহত্তম ঝাড়বাতি ও এই মসজদেরই শ্রী বাড়াচ্ছে। মসজিদটির আঙিনা ১৭ হাজার বর্গমিটার মার্বেল মোজাইকের। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আয়তনের মার্বেল মোজাইক।

প্রধান হলের ধারণ ক্ষমতা ৭০০০। সঙ্গেই রয়েছে ২টি প্রার্থনা হল এক একটি ১৫০০ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। যার ১ টি মহিলাদের জন্য। প্রতিটির সঙ্গে দুটি ছোট প্রার্থনা হল ও আছে। প্রার্থনা হল ও আঙ্গিনা মিলিয়ে ৪০,০০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারে। জুম্মা ও ঈদে সর্বমোট দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও এই মসজিদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক ও ইসলামী বইয়ের এক অনন্য সংগ্রহশালা রয়েছে মসজিদ লাইব্রেরীতে। ইসলামী বিশ্বের বৈচিত্র্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে সংগ্রহ করা হয়েছে আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, স্পেনীয়, জার্মান ও কোরীয় সহ বিভিন্ন ভাষার বই।

মসজিদটি ৪০,০০০ হাজারের বেশি মুসল্লি ধারণক্ষমতা রয়েছে। মূলত ৭টি বড় গম্বুজ হলেও ভিন্ন ধরনের ৪০টি গম্বুজ আছে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদে। মসজিদটি দেখতে নানা ধর্মের নারী পুরুষের সমাগম প্রতিদিন চোখে পড়ে। অমুসলিম মহিলাদের জন্যও বোরকা পরিয়ে মসজিদে ঢুকানো হয়। রয়েছে কড়া নিরাপক্তা আর পর্যটকদের জন্য মসজিদের প্রবেশপথে ফ্রি গাড়ি সার্ভিস।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ