তানভীর সিরাজ
যারা নবীর পথে কাঁটা দিতে পছন্দ করেছিল তারাই আজ সবচে বেশি নিরাপদ। কারণ তারা আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর বন্দেগীতে বাধা দান করতে পছন্দ করে আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের।
আচ্ছা, আপনি কি দেখেছেন? রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা, মারমা আর খ্রিষ্টানসহ কোনো অমুসলিম কি আজ বেকায়দায় আছে? নেই। কারণ নবী সা. বলেছেন, সমস্ত কাফির একজাতি।
তবে সমস্ত মুসলমানের হতে হবে এক ও নেক'। যদি একের সাথে নেক হতে না পারি তাহলে কখনো এই হত্যাযজ্ঞসহ সকল অত্যাচার, অনাচার আর অভিচার এবং ব্যভিচার থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
আল্লাহর নবী (সা.) এর সাহাবাগণের কাছে কী ছিল? খুব নগণ্য কিছু তলওয়ার ছিল আর অন্যদিকে, বলতে গেলে আজকের পশ্চিমাদের যা আছে মুসলিমবিশ্বের বিরুদ্ধে তাই ছিল। কিন্তু এরপরেও মক্কার কাফিরসহ কোনো অশুভ শক্তি সামান্যতম কিছুর সামনে হার মানলো না কেন? আসল কথা হল সকল সাহাবি এক ও নেক ছিলেন এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত নিজের জানমালকে কোরবান করেছেন। এ কারণে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত তাঁদের প্রতি খুশি হয়ে বলেছেন, আমি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট তারাও আমার প্রতি পূর্ণ সন্তুষ্ট।
আজকে যে পরাশক্তি মুসলমান নিধনে স্বাদ নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে সেই অপশক্তিকে পরাজয় করতে একমাত্র পথ হল জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ আর পাথেয় হল যোগুপোযোগী জবাব, তবে মাধ্যম এক ও নেক হওয়া।
মাওলানা আতিকুল্লাহ সাহেব আরো কয়েকজন তরুণ আলিমসহ যারা আজ গুম আর হত্যার শিকার হচ্ছেনন তার একমাত্র দায়ী আমরাই। বিশেষভাবে যারা পবিত্র মাতৃভূমিকে রক্ষা করেছিলেন ব্রিটিশ বেনিয়াদের কালোহাত থেকে। তারাই তো ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে গিয়ে প্রায় তেরো হাজার ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছেন।
এডওয়ার্ড টমাস দিল্লী শহরের হৃদয়বিদারক ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, একমাত্র দিল্লী শহরে পাঁচশো শ্রেষ্ঠ আলেমকে শুলবিদ্ধ করা হয়েছিল। জল্লাদদের বাধ্য করা হতো যাতে তারা বেশি সময় পর্যন্ত লাশ শূলের ওপর টাঙিয়ে রাখে। ময়দানে প্রতিষ্ঠিত শূলদণ্ডগুলো থেকে বারবার লাশ নামানো হচ্ছিল। আর তা দেখে সাম্রাজ্যবাদী শাসক ইংরেজদের কলিজা ঠাণ্ডা হচ্ছিলো। [সাওয়ানেহে উমরী, মওলানা মুহাম্মদ কাসেম, লেখক মওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব]
এখন কি সেই সময় আসেনি? যখন হযরত উসমান রা.-কে মক্কার কাফিররা আটক করে রেখেছিল, অথবা আসতে দেরী হচ্ছে, এমন সময় যখন খবর আসলো যে, যখন হযরত উসমান রা.-কে মক্কার কাফিররা আটক করেছে তখন আল্লাহ্ ও রাসূল সা. নিজেই তো জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা কোথায়!?
আমরা আছি শুধু কে সুন্নি ও কে ওয়াহাবি, এবং কে মাযহাবি ও কে লা-মাযহাবি, কে হানাফি ও কে সালাফি, কে চরমোনায় আর কে খেলাফত, কে আমার দলের আর কে অন্য দলের ? আমরা আজ সামান্যতম কিছু কিছু বিষয় নিয়েই ব্যস্ত আছি, অথচ অন্যদিকে শত্রুরা মুসলমানদের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে প্রস্তুত হচ্ছে।
শিরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আরকানসহ আজকে বিশ্ব নির্যাতিত মুসলিমজাতির লিস্ট দিনের পর দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে! এর কতটি হদিস মিলছে। আমরা দুই থেকে তিন ভাগের খবর পাই, আর বাকিদের ব্যাপারে আমরা যেমন না ওয়াকিফ তেমনি আমাদের চেতনাও না মা'লুম!
আমাদেরকে সাহাবা আদর্শে আদর্শবান হতে হবে, অন্যথাই আমরা আমাদের সোনালি ইতিহাসে ফিরে আসতে পারবো না।
তারা নারী আর বাড়ী এবং সন্তানাদির মোহ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতেন। আর আমরা! আমরা কেন? আমারও একই অবস্থা।
আমাদের অবস্থা এমন যে, আমার সম্প্রদায়ের কেউ একজন যখন কারাগারে পঁচে মরেও যায় তখনো আমরা তাকে বা তাঁদের দেখতে যাওয়ার সাহস করি না! তারুণ্যের রাহবার মুফতি হারুন ইজহারকে চট্টগ্রাম কারাগারে দেখতে গেলে তিনি এসব বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।
আসুন, প্রথমে আমরা পরমত সহিষ্ণু হই, তারপর তাওবা নাসুহার মাধ্যমে এক ও নেক হওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে মুসলিমজাতির হাতিয়ার হই।
লেখক-
সমাজকর্মী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
-এটি