আওয়ার ইসলাম: বিশ্ব বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হালাল সনদ অনেকটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠায় এবং ক্রমাগত এর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি পণ্যের হালাল সনদ দেওয়া শুরু করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি পণ্যের এই সনদ প্রদান করে থাকে। তবে পণ্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই সনদ নেওয়া এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের হিসাবে, প্রতি বছর বিশ্বে হালাল পণ্যের ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ১৬ থেকে ২৫ শতাংশ। ওই হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার তিন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ১৫০ গুণেরও বেশি।
ফাউন্ডেশনের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, জর্ডান, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারতসহ অনেক দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার জন্য হালাল সনদ দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরকারের ২২ টি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে এবং এর ভিত্তিতে সনদ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ডেপুটি-ডিরেক্টর ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী, ভোগ্যপণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কসমেটিকসের অনুকূলে হালাল সনদ প্রদান করে আসছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৫টি কোম্পানির দেড় শতাধিক পণ্যের অনুকূলে হালাল সনদ প্রদান করেছে। হালাল সনদপ্রাপ্ত ৪০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৫টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যেসব বিষয়কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, শরিয়তের পরিভাষায় তা হালাল। আর কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে যে সব বিষয়কে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে তা হারাম। তাদের মতে, হালাল খাদ্য গ্রহণ করা এবং হারাম থেকে বিরত থাকা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক।
হালাল সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগের প্রকাশ্য বিরোধিতা না থাকলেও তবে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কয়েকবার। সমালোচকদের দাবি, হালাল সনদ দেওয়ার লক্ষ্যে পণ্য পরীক্ষার জন্য ফাউন্ডেশনের পরীক্ষাগার নেই। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ।
এসব অভিযোগের জবাবে এর আগে ইফা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, “হালাল-হারাম বিষয়ে মতামত প্রদানের এখতিয়ার কুরআন ও হাদিস বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের এবং ফাউন্ডেশনে সরকার নিযুক্ত এমন অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন।
হালাল পণ্য নির্ধারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ল্যাব নেই এ অভিযোগের ব্যাপারে মহাপরিচালক বলেন, “আমরা খাদ্যের গুণগত মান দেখি না, পণ্যটি হালাল কি-না তা নিরীক্ষা করি। হালাল সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে পণ্যে কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে তা যাচাই করা হয়।”
এরপর কমিটি বিএসটিআই, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, পানি সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সনদ, পণ্য যাচাই প্রতিবেদন এবং সনদ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকারনামা পরীক্ষা করে হালাল সনদ দেয় বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালকের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে হালাল খাদ্যের যে চাহিদা রয়েছে, তা যদি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে এর মাধ্যমে দেশে অসংখ্য আলেম-ওলামারও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যে প্রক্রিয়ায় হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে
বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের গায়ে হালাল লোগো ব্যবহারের জন্য প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হয় প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিএসটিআই অনুমোদন, পণ্যের নাম ও উপকরণ।
মহাপরিচালকের অনুমোদনের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে। পরে পণ্যটির উৎপাদনের প্রসেসের বিষয়টিও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখা হয়।
এ বিষয়ে ইফার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালাটি গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক হালাল সনদের নীতিমালা অনুসরণে। বিশেষ করে ওআইসির নীতিমালা অনুসরণ করা হয় হালাল সনদ নীতিমালা-২০১৫ তে।
পণ্যের প্রত্যেকটি উপকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এজন্য ইফার নিজস্ব ল্যাবও রয়েছে। পণ্যের উপকরণগুলো যাচাই-বাছাই করা হয় এবং বিশেষ প্রয়োজন মনে করলে পরীক্ষার জন্য বিসিএসআইয়ে পাঠানো হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ডেপুটি-ডিরেক্টর ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, “আমরা সর্বপ্রথম লক্ষ্য করে থাকি, পণ্যটিকে বিএসটিআই বাজারজাতের অনুমোদন দিয়েছে কি না। তারা যদি বাজারজাতের অনুমোদন দেয়, তখন আমরা পণ্যটিকে হালাল সনদের বিবেচনায় আনি। অন্যথায় আমরা হালাল সনদ দিই না।”
“এক্সপার্টরা পণ্যের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদন তৈরি হওয়ার পর আমরা আরেকটি বিশেষ এক্সপার্ট-কমিটি গঠন করি। তাতে বিএসটিআইসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের এক্সপার্টরা থাকেন। এই সার্টিফিকেটের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হয় ০.০৮ শতাংশ ভ্যাট। অর্থাৎ এক কোটি টাকায় আট হাজার টাকা।” যোগ করেন ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী।
আরএম/