সম্প্রতি বিশিষ্ট লেখক শরীফ মুহাম্মদের একটি দীর্ঘ আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকার নেন জহির উদ্দিন বাবর। সেই সাক্ষাৎকারটির অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত লেখকপত্রের তৃতীয় সংখ্যায়। আওয়ার ইসলামে পুরো সাক্ষাৎকারটি পর্যায়ক্রমে গদ্যআকারে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো দশম পর্ব
মাসিক আল জামিয়ায় কাজ করেছি কিছুদিন। এটি যাত্রাবাড়ী মাদরাসার পত্রিকা। সেখানে বছর খানেকের কিছু কম সময় কাজ করেছি। এই পত্রিকায় মূলত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেবের বক্তব্য, লেখা, দাওয়াতুল হকের কিছু বিষয়সহ আরও কিছু দ্বীনী বিষয় থাকতো। আমি সেখানে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ছিলাম। এটাও আমার জীবনের একটা ভালো অধ্যায়। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান, অনেক বড় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে। তবে অন্য অনেক জায়গায় সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে বেশিদিন থাকা হয়নি।
মাসিক আল কাউসারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার দীর্ঘ স্মৃতি। প্রায় ১০ বছর কাজ করেছি পত্রিকাটিতে। এখানে কাজ করার সময়টা আমার জন্য ছিল একটা সৌভাগ্যপূর্ণ সময়। এটা অনেকগুলো কারণে। একটা কারণ হলো, একটি মর্যাদা পূর্ণ মাসিক ইসলামি পত্রিকা হলো আল কাউসার। সেখানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
আরেকটি কারণ হলো, এই পত্রিকাটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এদেশের বরেণ্য দুজন মুহাক্কিক আলেম। অন্য পাঁচটা প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকার চেয়ে মাসিক আল কাউসারের একটা ভিন্নতা হলো, মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব এবং মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাহেব; দুজনই প্রতিমাসে পত্রিকাটি প্রকাশের আগে এতে পূর্ণমনোযোগ ব্যয় করেন। যেটা অন্য প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকাগুলোর ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল, পরিচালক বা মহাপরিচালকদের পক্ষেও এই ভাবে সম্ভব হয় না। কিন্তু তাঁরা দুজন কোন লেখাটি যাচ্ছে, কতটুকু যাচ্ছে, কী যাওয়া উচিত, ভুল হচ্ছে কিনা, এটা নিয়ে একদম সম্পাদনা বোর্ডের সদস্যরা যেভাবে আক্ষরিক অর্থে মনোযোগ দেন তারাও তেমনি মনোযোগ দিয়ে থাকেন। আর তাঁদের সঙ্গে কাজ করার কারণে ইসলামি উলুম এবং ইসলামি বিভিন্ন বিষয় থেকে অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেজাজ ধরতে পারা, বিভিন্ন বিষয়ে লেখা নেয়া-দেয়া এগুলোরও একটা সুযোগ হয়েছে। ইসলামি বিষয়ে উপলব্ধি গত, রুচি গত উন্নতি আমার হয়েছে।
এছাড়া মাসিক আল কাউসার ব্যাপক সংখ্যক দীনদার পাঠকদের কাছে যায়, আমি সেখানে থাকার কারণে একটা বিরাট অংশ পাঠকের সঙ্গে পরিচিত হই, বিরাট একটি পাঠক গোষ্ঠীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। বিশেষত আল কাউসার পত্রিকাটি পুরোটাই বা একটি বড় অংশ গুরুগম্ভীর বা গভীর। কিন্তু আমি এখানে নিয়মিত যোগ দেয়ার পরে শেষের তিন-চারটা পৃষ্ঠা সাম্প্রতিক প্রসঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়। ‘ফিলহাল’ নামে একটি কলাম শুরু করি। সেই বিভাগের বেশির ভাগ লেখাই ছিল আমার লেখা। ওই লেখাগুলো লিখেও আমি একটা মজা পেতাম। ওই সময়ের দেশ, পৃথিবী, নানা পরিস্থিতি; বিভিন্ন ইস্যু বা ঘটনাকে নিয়ে একটু রম্যধারায় লেখার একটা চেষ্টা চলতো, এটাও অনেকভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিল।
মাঝে মাসিক যমযম নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল আমা রসম্পাদনায়। রুচি-বৈচিত্র্যে পত্রিকাটিতে একটা ভিন্নতা ছিল। সেখানকার অভিজ্ঞতাটা মধুর এবং বেদনার। মধুর এই অর্থে যে, আল জামিয়া আর আল কাউসারের মাঝে একটি সময় আমি যমযমে দিই। আমরা বন্ধুরা যৌথভাবে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমাদের কারও হাতে তেমন কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। বন্ধুবান্ধব সমিতির মতো করেই এই প্রজেক্টটা চালু করেছিলাম। আমাকে সম্পাদক বানানো হয়েছিল।
যে কয়টি সংখ্যা হয়েছিল আমরা স্বপ্নের মতো সংখ্যাগুলো বের করেছিলাম। প্রবীণ লেখক, নবীন লেখক, বিচিত্র কলাম; আলহামদুলিল্লাহ পাঠকের মধ্যে একটা ভালো সাড়া পড়েছিল। যদিও সার্কুলেশনের পরিমাণ অল্প সময়ে ব্যাপক হয়ে গেছে সেটা বলব না, তবে যাদের হাতে গেছে তাদের এটা পছন্দ হয়েছিল। নতুন নতুন পরীক্ষা-নীরিক্ষাও আমরা শুরু করেছিলাম। যেটা হয়, গচ্চা যাচ্ছিল তো, একটা সময় পুরা সমিতির সদস্যরা যারা মনে করেছিল বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে পত্রিকার খরচ সমান সমান হয়ে যাবে, আমাদের নিয়মিত খরচটা বোধ হয় দিতে হবে না, তারা হতাশ হয়ে গেলেন। এটাই ছিল প্রধান কারণ যে, খরচটা উঠছিল না এবং নানা জায়গায় টাকা আটকে যাচ্ছিল। এই আর্থিক কারণেই পত্রিকার কাজ আস্তে আস্তে শ্লথ হয়ে যায়। একপর্যায়ে আমি যমযম থেকে সরে যাই।
যমযমের জন্য রেজিস্ট্রেশনে রদরখাস্ত করা হয়েছিল, বছর খানেকের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন পেয়েও যায় পত্রিকাটি। রেজিস্ট্রার্ড যমযমের সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ আর প্রকাশক বশির মেসবাহ। আমি চলে আসারপরও বিভিন্ন সময় পত্রিকাটির কয়েকটি সংখ্যা বেরিয়েছে। তবে মনে হয়, প্রথম চার-পাঁচটা সংখ্যায় ছিল পত্রিকাটির মূল বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রের ছাপ।
আরো পড়ুন- হাফেজ্জী হুজুর স্মারকগ্রন্থের কাজটি আমাকে সমৃদ্ধ করেছে
-এএ