মুহাম্মদ খালিদ হুসাইন ।।
এক রাতের কথা। স্পেনের একটি শহর ব্যালিনেসিয়ায় একটি ডিস্কো ক্লাবে আমি মদ পান করছিলাম। সম্পূর্ণ একা। মদ পান করছিলাম আর চারদিকে চিন্তিত চোখে তাকাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম আমার নিজের জীবনের কথা। ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মনে হলো আমার এবং আমার চারপাশে যারা আছেন এ মদ্যশালায় তাদের জীবন-ই ভীষণ বিরস ও শূণ্য। আমি বসে বসে আমার জীবনলক্ষ্যের কথা ভাবছিলাম।
কথা কি, মাঝে মধ্যেই আমি ভাবতাম আমার জীবনের নানা ধোঁকা এবং মানসিক নানা অস্থিরতার কথা। ধোঁকার যন্ত্রণা ও অস্থিরতার পেষণ থেকে বাঁচবার জন্যে পান করতাম এ্যালকোহল এবং মদ। আসলে আমি আমাকে বাঁচাবার জন্যে স্মরণ নিতাম নেশার। এভাবেই আমি আমার কষ্টার্জিত অর্থ পানির মতো ঢেলে দিতাম বিভিন্ন ডিস্কো এবং নাইট ক্লাবে।
সত্যি কথা কি, শিশুকাল থেকেই আমরা যেসব কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি তা হলো এ পৃথিবী একটি দুর্ঘটনার ফসিল। কথাটি শুনতাম। কিন্তু আমার বিশ্বাস হতো না। বরাবরই আমার মনে হতো নিশ্চয় এমন একজন সত্তা আছেন যিনি আমাদের চাইতে অতি উঁচু এবং মহানতর।
আমার অনুভব হতে থাকে আমাকে সেই পথটি খুঁজে বের করতে হবে যা কী-না প্রকৃত মালিক ও সৃষ্টিকর্তার পথ। আমাকে সেই মহান প্রভুর পথ খুঁজে বের করতে হবে যিনি এ জগত সংসারের সমুদয় বস্তু যথাক্রমে সৃষ্টি করেছেন। এ মানব ও মানবতার সৃজন যার নির্দেশে। আমাদের ভেতরকার বুদ্ধি ও মস্তিস্ক যার নির্দেশের ফসল।
আমার মা বাবা আমাকে যে ধর্ম শিখিয়েছিলেন সেখানে আমার আত্মিক প্রশ্নাদির কোনো জবাব ছিলো না। আমি ভেতর থেকে এমন কোনো বস্তুকে জগতের ভিত্তিরূপ মানতে পারছিলাম-না যাতে রয়েছে পারস্পরিক প্রচুর দ্ব›দ্ব ও বৈপরীত্য। ওইসব বৈপরীত্যের কারণেই মানবতার ইতিহাসে ও আসমানি গ্রন্থাবলিতে এসেছে নানা পরিবর্তন। আমি মানবরচিত কোনো বস্তুকেই এ জগত সংসারের বুনিয়াদ মেনে নিতে পারছিলাম না। বিশেষ করে এমন বস্তু যাতে ভুলের সমূহ আশঙ্কা আছে।
আল্লাহকে এবাদত করার সঙ্গে সঙ্গে হাতের তৈরি নানা ছবির প্রতিও এবাদত প্রকাশ আমার কাছে মনে হতো সম্পূর্ণ যুক্তিহীন। আমি আমার আত্মিক শূণ্যতা পূরণ করবার জন্যে যা কিছুর আশ্রয় নিতাম তাতে কোনো লাভ হতো না। বরং মনে হতো আমার শূণ্যতা বাড়ছে। আমার ভেতরটা ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত আমার ভেতর আস্থা দূর্বলতর হচ্ছে। এসব বিষয়ের সহজ পরিণতি ছিলো আমার জীবনব্যাপী অস্থিরতা ও বিষন্নতা।
আমি যখন যুবক ছিলাম তখন আমার অনেক আরব বন্ধু ছিলো। তাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিলো ভালো। অবাক হই, আমি কখনো তাদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানতে চাইনি। কথা কি, জানবার কোনো প্রেরণাও আমার মনে উদিত হয়নি।
অথচ আমি বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দু ধর্মসহ পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্ম সম্পর্কেই খোঁজ খবর নিয়েছি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কখনো কোনো খোঁজ নিইনি। নিতে যে হবে সেটাও মাথায় আসেনি। কারণ কি, ইসলাম সম্পর্কে আমার মনে পূর্ব থেকেই এমন কিছু ধারণা বদ্ধমূল ছিলো যা আমাকে ইসলাম সম্পর্কে ভাববার সুযোগ দিতো না।
একবারের কথা। আমার এক বন্ধু ছিলো মরক্কোর। তার সঙ্গে চলাফেরা করতে গিয়ে আমার পূরনো চরিত্রে ভাঙন ধরে। তার চালচলন এবং জীবন জিজ্ঞাসার সমাধানে তার চিন্তা ভাবনা আমাকে নাড়া দেয়। আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হই। তাকে এমন সব প্রশ্ন করতে শুরু করি যা সাধারণত একজন মূর্খ বেঈমান করতে পারে। এইসব প্রশ্ন করতে গিয়ে আমার মন ও আচরণ হতো অনেকটা মারমুখী। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাকে প্রচন্ড বাধা ও অমার্জিত উত্তেজনার মাঝে পড়তে হতো। আমার মতো ক্ষেপাটে একজন অবিশ্বাসী মানুষকে কোনো সুস্থ্য বিশ্বাসের কথা গিলিয়ে দেওয়া মোটেও সহজ ছিলো না।
আমি লক্ষ করেছি, আমার এ অমার্জিত ক্ষেপাটে আচরণের মুখে আমার এ বন্ধু সদাই থাকতো শান্ত এবং শিষ্টাচার সমাহিত। আমার ভেতরে একটা প্রতিজ্ঞা ছিলো, তাকে আমি জিততে দেবো না। আমার কাছে বরাবর মনে হতো আমার মত-ই সত্য। অবশ্য একটি প্রশ্ন করার পর আরেকটি প্রশ্ন করবার আগে তাকে খানিকটা সুযোগ দিতাম।
সত্যি কথা কি, আমার ওই মারমুখো আক্রমণ ছিলো সত্যের বিপরীতে নিরেট মিথ্যার হামলা। এ কথা সকলেই জানি নিজের মতের বিপরীতে সত্য কথা মেনে নেওয়াও ভারি কঠিন। কারণ সত্য সর্বদাই তিতে হয়। আর ইসলামকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করাও সহজ ব্যাপার নয়। তারপরও স্বীকার করবো, ধীরে ধীরে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় আমি আন্তরিক হয়ে উঠি। সেইসঙ্গে আমার প্রতিরোধ উত্তেজনাও ছিলো বরাবরের মতো।
ওইসব বিতর্কের কোনো প্রভাব যে আমার মধ্যে পড়েনি তা নয়। কয়েকমাস পর আমি শুকরের মাংস খাওয়া ছেড়ে দিই। ছেড়ে দিই মদ্যপান। কারণ আমার মধ্যে অলক্ষে এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে এরইমধ্যে। আমি মন থেকে এখন ওইসব অশুচি বস্তুগুলোকে ঘৃণ্য ভাবতে থাকি।
এটা ঠিক আমরা সকলেই এ পৃথিবীতে জন্ম লাভ করি ইসলাম ধর্মের ওপর। মা বাবাই পরে আমাদের অন্য পথে নিয়ে যায়। আমি যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রভাব লক্ষ করি তখন আমার কাছে মনে হতে থাকে, যেন আমি আমার আপন বিশ্বাসের নীড়ে ফিরে আসছি। ওই বিশ্বাস আমার জন্মগত। ফলে মদ ও শুকরের মতো বিষয়গুলোর প্রতি আমার চেতনা অনুভব এবং রক্তেমাংসে ঘৃণা ছড়াতে থাকে। তাছাড়া আগে থেকেই ইসলামি অনেক প্রথা সংস্কৃতি আমার মধ্যে ছিলো।
আমি যদিও শুকর খেতাম কিন্তু বরাবর চেষ্টা করতাম এড়িয়ে যেতে। আমি একজনকেই খোদা বলে বিশ্বাস করতাম। ত্রিত্ববাদের প্রতি আমার কখনোই বিশ্বাস ছিলো না। আমি বিশ্বাস করতাম আল্লাহ কোনো জাত কিংবা সংখ্যার উর্ধ্বে। এও বিশ্বাস করতাম তিনি ককেশাস পর্বতের কোনো উঁচু বংশীয়এবং শক্তিমান আকৃতিধারী কোনো সত্তা নন।
ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত নানা মিথ্যা অভিযোগ উজিয়ে আমাকে পৌঁছতে হয়েছিলো ইসলামের নিখাদ নির্মল উৎসে। আমাকে আমার নিষ্পাপ শৈশব থেকে এই অবধি যাপিত অনেকবিশ্বাসকে লঙ্ঘন করতে হয়েছিলো ইসলামের সত্যকে স্পর্শ করতে গিয়ে। যখন এইসব কথা আমি ভাবি খুব ব্যথিত হই। আমার সমাজ দীর্ঘকাল পর্যন্ত কীভাবে বিকৃত করে আমাদের সামনে ইসলামকে উপস্থাপিত করেছে।
ধীরে ধীরে আমি উপলব্ধি করতে পারি ইসলাম একটি ধর্ম মাত্র নয়, ইসলাম মানবজীবনের যুক্তিগ্রাহ্য দর্শন এবং পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম পথ দেখাতে সক্ষম। মোটকথা ইসলাম একটি দর্শন এবং ইসলাম একটি সভ্যতা। আমার মরক্কোর ওই বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথান ও তর্ক বিতর্কের পর আমাকে মেনে নিতে হয়েছে তার বক্তব্যই যথার্থ আর আমার আপনজনদের পথ ও মত পুরোটাই ভুল।
আমার বিশ্বাসকে পূর্ণতা দেবার জন্যে ১৯৯৭ সালের পহেলা আগস্ট সিদ্ধান্ত নিই মসজিদে যাবো। আমি আমার ওই বন্ধুকে অনুরোধ করি আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবার জন্যে। আমি সরাসরি উপলব্ধি করতে চাই মসজিদের পরিবেশ। আমি জীবনে প্রথমবারের মতো মসজিদে প্রবেশ করার সবিস্তার স্মৃতি আমরণ ভুলতে পারবো না।
মসজিদে প্রবেশ করবার সময় আমার যে অনুভূতি হয়েছিলো সেটাও ভাষায় কোনোদিন ব্যক্ত করতে পারবো না। আমার ওই বন্ধু আমাকে মসজিদে প্রবেশ করবার পর নামাজ পড়বার জায়গা দেখিয়ে দেন। আমি নিজের কানে আজান শুনি। তারপর ইমাম সাহেবের ঘরে যাই। তখন ছিলো জোহর নামাজের সময়। শুক্রবার। ইমাম সাহেব আমাকে এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান আপনি আমার ঘরে বসুন।
জুমার নামাজের পর কথা বলবো। আমি ইমাম সাহেবের ঘরে বসি মসজিদের দিকে মুখ করে। মসজিদে নামাজ হচ্ছে। খোলা দরজায় বসে নামাজের দৃশ্য অবলোকন করতে থাকি। নামাজের দৃশ্য দেখে আমার ঈমান শক্তিমান হতে থাকে। জীবনে প্রথমবার নামাজের দৃশ্য দেখে কী পুলক ও তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম তা কাগজের পিঠে লেখা সম্ভব নয়। বিশেষ করে যখন আজানের শব্দগুলো শুনছিলাম কিংবা আমিনের গুঞ্জরিত ধ্বনি স্পর্শ করছিলো আমার হৃদয়তন্ত্রি আমার কাছে তখন গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছিলো এখন আমি মুসলমান।
নামাজ শেষ হয়। কথা হয় ইমাম সাহেবের সঙ্গে। আমার সঙ্গে তখন ওইখানে আরও ছিলো একজন স্পেনিশ তরুণী এবং দুইজন তরুণ। তারাও আমার মতো ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছিলেন। ইমাম সাহেব আমাদেরকে সংক্ষেপে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলেন। তারপর প্রথম ওই তরুণীকে প্রশ্ন করেন তিনি কি মুসলমান হতে চান? ওই তরুণী তখন আনন্দাশ্রুতে ভাসছিলো । এবং সে আমার চোখের সামনে ইসলাম কবুল করে। তারপর পরম আবেগে কাঁদতে থাকে।
সত্যি কথা কি, আমার ভেতর থেকেও তখন প্রচন্ড কান্না আসছিলো। ওই তরুণীর চেহারায় সত্যের আলো চিকচিক করছিলো। চোখের সামনে সংঘটিত এ তৃপ্তিকর নীরব ঘটনা আমাকে সত্য গ্রহণে যেমন উদ্বুদ্ধ করছিলো তেমনি আমার ভেতরটাকে প্রচন্ড সাহসে উঁচু করে ধরছিলো। আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করছিলাম ইসলাম এমন এক মহান ধর্ম যেখানে রয়েছে সকল প্রশ্নের উত্তর।
ইসলাম এক যৌক্তিক ও বাস্তব ধর্ম। জীবনের সকল প্রশ্নই এখানে যুক্তিগ্রাহ্য উত্তরে থাকে সদা তৃপ্ত। আমি এক দুটি উদাহরণ দিই। ইসলাম ধর্মে শুধু মানবজাতি নয় সকল প্রাণী এমন কি গাছ গাছালির পর্যন্ত অধিকার সংরক্ষিত আছে। ইসলামের প্রতিটি বিধি-বিধান বিজ্ঞানসম্মত। অথচ খৃষ্টধর্ম সম্পূর্ণ বিজ্ঞান পরিপন্থি। আমি যখন কুরআন মাজিদে পড়েছি, পানি থেকেই জীবনের অস্তিত্ব তখন অবাক হয়েছি।
বিজ্ঞানীরা বর্তমানকালে এসে যেসব তথ্য আবিস্কার কারেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ইরমনধহম ঞযবড়ৎু। দেখি কুরআনের দর্শন হুবহু অনুরূপ। মায়ের গর্ভে সন্তান বেড়ে ওঠা সম্পর্কে কুরআন যেসব তথ্য দিয়েছে সেটাও আমাকে স্তম্ভিত করেছে। মাতৃগর্ভে সন্তানের অবস্থান ও তার সময়কাল পর্যন্ত নির্দেশ করেছে কুরআন। আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে এ তথ্য। কুরআনের এইসব আয়াত পড়ে আমি যারপরনাই অভিভূত হয়েছি।
ওইদিনের পর আরও দুইদিন আমি ইমাম সাহেবের কাছে গিয়েছি। ইসলাম সম্পর্কে নানা কথা জেনেছি। অবশেষে ১৯৯৭ সালে ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৫ টা ৫০ মিনিটে আমি আমার ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিই। এরপর নানা সঙ্কটের সৃষ্টি হয়।
যে কোনো নওমুসলিমকেই ওইসব সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও যন্ত্রণা পেতে হয় পরিবার এবং বন্ধুদের থেকে। কিন্তু ভেতরে বিশ্বাস যদি বদ্ধমূল হয় তাহলে ওসব যন্ত্রণা কোনো বিষয় নয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ রয়েছে। তার অনুগ্রহে সময়ের স্রোতে গলে যায় সঙ্কটের ওইসব তপ্ত পাথর।
ইসলাম মানুষকে পরস্পর অনৈক্যের মধ্যে ঠেলে দিতে চায় না। বরং ইসলাম চায় মানুষকে ঐক্যের সুতোয় গেঁথে রাখতে। ইসলাম-ই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় উদারতার ধর্ম। একদিন আমি বসে বসে ভাবছিলাম আমার ভেতর ঘটে যাওয়া বিশাল বিপ্লবের কথা।
আমার মনে হতে থাকে, আমার মতো একজন নওমুসলিমের প্রতি দয়াময় সৃষ্টিকর্তার কী যে অনুগ্রহ। তিনি আমাকে কুফুরি এবং গোমরাহির অন্ধকার থেকে হেদায়েতের সরল পথ প্রদর্শন করেছেন। মূর্খতার পথ থেকে তুলে এনে আলোর পথে চালিত করেছেন। আসলে আমাদের উচিত আল্লাহ তায়ালার অসীম এ অনুগ্রহের কথা কল্পনা করা এবং তার প্রতি অব্যক্ত কৃতজ্ঞাতায় সেজদাবনতা হওয়া।
আমাদেরকে এটা উপলব্ধি করতে হবে বর্তমান কাল ইসলামের জন্যে খুবই কঠিন। মুসলমান দেশগুলোতে ঘটিত ঘটনাবলি দেখে যেন আমরা নিরাশ না হই। আমাদের কিছু বন্ধু যারা ইসলামের নামে এমন অনেক কিছুই করে বেড়ান যার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এইসব দেখে আমাদের ঈমানকে দুর্বল করা যাবে না। অনেক সময় অনেকের মুখে যখন আমরা শুনি ইসলাম এই বলে, ওই বলে তখন আমরা দ্বিধান্বিত হই। আসলে এই জাতীয় বিষয় সমাধানের জন্যে প্রথমে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে।
সত্যিকার অর্থে ইসলামের প্রকৃত উৎস থেকে যারা ইসলামকে জেনেছেন যেমন মসজিদের ইমাম আমাদেরকে তাদের সান্নিধ্যে যেতে হবে। যে কারও কাছ থেকে আমরা ইসলাম নিতে পারি না। এটা ঠিক আমাদের সমাজে ইসলামের নামে নানা চিন্তা প্রচলিত আছে। আমরা সকলের কথাই শুনতে পারি। কিন্তু নেবো কোনটা সেটা ভেবে চিন্তে দেখতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে যারা জানেন এবং বিশ্বস্ত তাদের কাছে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষই আছেন দুর্ভাগ্যবশত যারা মুসলমান।
ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন বলেও দাবি করেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে, তাদের অধিকাংশ মতামতই মূর্খতাপ্রসূত। আমরা সকলে মিলে যদি মূর্খতাজাত এসব চিন্তা চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ না করি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা অনেক বড় ক্ষতির শিকার হবো। আমার ধারণায় এ জাতীয় মূর্খ লোকদের কথা প্রথমত আমাদের ঈমানে দুর্বলতা সৃষ্টি করে। আল্লাহ না করুন এর পরিণতিতে আমরা ঈমানহারাও হয়ে বসতে পারি। দ্বিতীয়ত না বুঝে ওইসব ভুল কথা প্রচার করে আমরা মূর্খদের দল আরও ভারি করে তুলতে পারি।
আমি স্বীকার করবো, আমার জীবন এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি আমার ভেতর উপচেপড়া ঈমানের সুবাস অনুভব করি। বলতে পারি আমি যেন নতুন করে জন্ম লাভ করেছি। আমার নাম খালিদ। আমরা যদি ইসলামের প্রকৃত চেহারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে চাই তাহলে অনেক সাধনা করতে হবে। সবিশেষ ইসলামের নামে প্রচিলত ভুলগুলো পৃথিবীর পিঠ থেকে মুছে ফেলতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তওফিক দিন।
ভাষান্তর: মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন/ সংগ্রহ: আহমদ আওয়াহ নদবি
সূত্র: মাসিক সুয়ে হারাম ২০১৭ ডিসেম্বর এর সৌজন্যে আরমোগান জুন ২০১৯
আরএম/