আওয়ার ইসলাম: অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, সরকারি প্রকল্পে ঘুষ লেনদেনে জড়িতদের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে দুই সংসদ সদস্য, যুবলীগ শীর্ষপর্যায়ের নেতা ও গণপূর্তের চার প্রকৌশলীসহ ৫১ জনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধও।
৪৩ জনের নামের তালিকার বিষয়টি দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকারের পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আরো আটজনের নাম যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৪৩ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে। গতকাল কয়েকজনের নাম এসেছে। নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। নামের তালিকা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আলোচিতদের মধ্যে রয়েছে- ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম, তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও মা-বাবা, যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, বাবা ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, মা সায়েরা খাতুন ও স্ত্রী শারমিন চৌধুরী, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী আব্দুল হাই।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন ও রাব্বানী, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক ওরফে আরমান, কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোল্লা আবু কাওসার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ, হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি মুরসালিন আহমেদ এবং যুবলীগ নেতাদের আত্মীয় প্রশান্ত কুমার হালদার, আফসার উদ্দীন মাস্টার, আয়েশা আক্তার, শেখ মাহামুদ জোনাইদ, নেতাদের আত্মীয় মুহা. জহুর আলম, এস এম আজমল হোসেন, ব্রজ গোপাল সরকার ও শরিফুল আওয়াল প্রমুখ।
এছাড়াও যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার বিষয়ে শোনা গেলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের কথা দুদক সূত্র নিশ্চিত করেনি।
এর আগে গত ৯ ও ১০ অক্টোবর র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) প্রধান আবু হেনা মুহা. রাজী হাসান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পৃথক সভায় ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর তালিকা ও ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের মালিকদের মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তর করা হয় বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাবের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরপরই তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে।
তারপরই দুদক অবৈধ সম্পদের অপরাধ খতিয়ে দেখতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে। সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
-এএ