আওয়ার ইসলাম: পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলমসহ গণপূর্ত অধিদফতরের ১৬ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে যাচাই-বাছাই ও বিল প্রদানের সাথে জড়িত ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিল্লুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে প্রতিবেদনে।
সাময়িক বরখাস্ত অন্য কর্মকর্তারা হলেন- মুহা. শফিকুল ইসলাম, মুহা. আবু সাঈদ, মুহা. শাহিন উদ্দিন, মুহা. জাহিদুল কবীর, মুহা. রফিকুজ্জামান, সুমন কুমার নন্দী, মুহা. ফজলে হক, মুহা. রওশন আলী, মুহা. আমিনুল ইসলাম, মুহা. রুবেল হোসাইন, মুহা. তারেক, আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, মুহা. মোস্তফা কামাল, মুহা. তাহাজ্জুদ হোসেন ও এ কে এম জিল্লুর রহমান।
এ প্রতিবেদনের ওপরে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী ২০ অক্টোবর শুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক ব্যয় করার বিষয়ে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গণপূর্ত অধিদফতরের ১৬ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া যাচাই-বাছাই ও বিল পরিশোধের সঙ্গে জড়িত ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে অবসর সুবিধা ভোগকারী গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমানও রয়েছেন।
এর আগে গত ২১ জুলাই রূপপুরের বালিশকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে বালিশকাণ্ডের ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। হাজার পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বিছানা, বালিশ ও আসবাবপত্র কেনায় মালামালের প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি ভবনে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সরবরাহ কাজের চুক্তি মূল্য একশ ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অথচ মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চুক্তি মূল্য সরবরাহ করা মালামালের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা বেশি। এই বাড়তি পরিশোধিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত ১৯ মে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এই রিট আবেদনটি করেন। রিট শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং একই সঙ্গে এই ঘটনায় গঠিত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।
-এএ