আওয়ার ইসলাম: বড়দের পারিবারিক বিরোধ নৃশংসভাবে শিশুকে হত্যা করে সেই হত্যার দায় চাপানো হচ্ছে প্রতিপক্ষের ওপর। এমন বিকৃত প্রতিশোধ পরায়ণতার কারণে শিশুদের ওপর সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে নিহত শিশুর বাবা, চাচা ও চাচাতো জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশুটির চাচা ও চাচাতো ভাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, তুহিনের চাচা নাসির মিয়া ও তার ছেলে শাহরিয়ার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এ হত্যাকাণ্ডের ছক কষেন তারা।
শুধু এই ঘটনা নয়, চলতি বছরে ৯ মাসে নানা কারণেই ৩২০ শিশুকে হত্যা করা হয়। মাসে গড়ে হত্যা করা হয়েছে ৩৫ শিশুকে।
কখনো প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে, কখনো দুর্বৃত্তের হাতে বা কখনো পারিবারিক দ্বন্দ্বে বলি হয়েছে কোমলমতি শিশুরা। কোনভাবেই যেন দমানো যাচ্ছে না শিশুদের প্রতি অব্যাহত নির্যাতন।
তুহিন হত্যার লোমহর্ষক দৃশ্য দেখার রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকার ধামরাইয়ে চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেন তার স্বজনরা। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৯ শিশুকে।
অপহরণের পর হত্যার শিকার ২৩ শিশু। এছাড়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোসহ খোদ পিতা-মাতার নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে ২৮ শিশু। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বলছে, গত ৫ বছরে দেশে ১ হাজার ৬৩৪ শিশুকে নানাভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক, জমিজমা কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে সারাদেশে এমন নির্যাতনের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
কিন্তু অধিকাংশ সময়ই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। যার ফলে এমন কাজ করার সাহস থেকে যাচ্ছে অন্যদের মধ্যে।
জানতে চাইলে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, শিশুরা দুর্বল থাকায় দুর্বৃত্তদের টার্গেট হয় শিশুরা। শিশু সুরক্ষায় রাষ্ট্রে যেসব আইন রয়েছে, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সেই সব আইন মেনে চললেই শিশুরা নিরাপদ থাকবে।
একই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মাদ বলেন, অপরাধীদের নোংরা মানসিকতার শিকার হচ্ছে শিশুরা।
এসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন ব্যতিক্রম নেই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রুত বিচারই পারে সমাজের গুটিকয়েক নোংরা মানুষের কাছ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে।
-এটি