আওয়ার ইসলাম: ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে মৌলবাদী জামায়াত-শিবির সুযোগ নিবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম জেলার ওয়ার্কার্স পার্টি ১২ তম সম্মেলনে বক্তব্যকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় অ্যাডভোকেট আবু হানিফের সভাপতিত্বে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, হত্যা খুনের রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ করতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতি করেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে এটা মানতে রাজি নয়। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার এই খেলা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মৌলবাদী, জামায়াত-শিবির এর সুযোগ নিবে। যা অতীতে তারা নিয়েছে। সারা দেশে আবরার হত্যা নিয়ে ছাত্ররা বিক্ষোভ মুখর। ছাত্ররা ক্ষুব্ধ, তাদের মধ্যে সহপাঠীদের জন্য বেদনাবোধ রয়েছে বলে রাস্তায় নেমেছে। আমি বিশ্বাস করি সরকার আবরার হত্যার বিচার সঠিক ভাবেই করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দলের লোকদের গ্রেপ্তার করেছেন, বহিষ্কার করেছেন, পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আবরার হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সংগঠনের অনেক কর্মী বিএনপি সরকার আমলে খুন হয়েছিল। সশস্ত্র শিবিরকর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন খালেদা জিয়ার বুক একটুও কাঁপেনি। আমরা বিচার চেয়েও পাইনি।
তিনি বলেন, তখন সংসদে আমরা বলেছিলাম জামায়াত শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিএনপি নিষিদ্ধ করে নাই। খুন হয়েছে একের পর এক কর্মী।
তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কিছু পত্রিকায় দেখছি শিবিরকে হালাল করার জন্য একটি চেষ্টা হচ্ছে। শিবিরের মতো খুনিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিচরণ করার সুযোগ দেওয়া মানে খুনিদের পক্ষ নেয়া।
বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত আবরার হত্যা নিয়ে মাঠে নেমেছে উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, যখন দেখি আবরার হত্যা নিয়ে রাজনীতিকরণ করছে, ধর্মীয়করণ করছে, তখন বুঝতে হয় ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’। জামায়াতের ইউটিউবে কয়দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কথা ‘আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম শহীদ হচ্ছে আবরার’। বিএনপি নেতা খন্দকার মোশারফ তার বক্তব্যে বলেছেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম শহীদ হচ্ছে আবরার।
মেনন বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ক্ষুদ্র রাজনীতি যেটা চিরকাল আপনারা করে আসছিলেন তা করবেন না। ভারতের সাথে যখন কোন প্রশ্ন আসে তখনই আপনারা নতুন নতুন প্রশ্ন তোলেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি যখন হয়েছে খালেদা জিয়া তখন বলেছিল ‘এই পার্বত্য অঞ্চল ভারত হয়ে যাবে, বাংলাদেশ থাকবে না’। শান্তি চুক্তির এত বছর হলো, এখন কি পার্বত্য অঞ্চল কি ভারত হয়েছে কিনা, বিএনপির প্রতি প্রশ্ন তোলেন মেনন।
ছাত্রলীগের কাছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিম্মি উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের দ্বারা জিম্মি। রাতে একটি ছেলেকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা ভয়ংকর।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম জেলা যুবমৈত্রীর সভাপতি কায়সার আলম প্রমুখ। এর আগে সম্মেলন উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি।
আরএম/