সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকের বিদায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জহির উদ্দিন বাবর ।।

একজন রাজনীতিবিদ তার দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয় হবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো দলে এমন নেতাও আছেন যারা শুধু দলীয় গণ্ডিতেই নয়, সব দল ও মতের লোকের কাছে প্রিয়। এমনই একজন নেতা ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন। কিন্তু সব দল, মত ও পথের মানুষের কাছে যে তিনি কতটা প্রিয় ছিলেন সেটার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেল তার চলে যাওয়ার পর।

শুক্রবার মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার এ চলে যাওয়ার খবরে শুধু নিজ দল নয়, সব দল ও মতের মানুষদেরই শোকাহত হতে দেখা গেছে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেই নয়, এর বাইরেও অনেকে নীরবে অশ্রু ফেলতে দেখেছি। সবার একই কথা, একজন ভালো মানুষ ছিলেন। সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। সবার সঙ্গে তার আচরণ ছিল অমায়িক।

তার অসুস্থতার খবর শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছেন দীর্ঘদিন। দেশে ফিরে আসার পর তার বিধ্বস্ত শরীরের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এটা দেখেই আঁচ করা যাচ্ছিল রাজপথের একজন লড়াকু সৈনিককে কীভাবে মারণব্যাধি ক্যানসার কাবু করে ফেলেছে। তার এই চলে যাওয়ায় শুধু নিজ দল নয়, গোটা ইসলামি অঙ্গনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ত্রিশ বছর ধরে ইসলামি আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজপথের লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা একজন নেতা ছিলেন এটিএম হেমায়েত উদ্দিন। নিজ দল কিংবা সর্বদলীয় যেকোনো প্রোগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে তাকে। যেকোনো ইস্যুতে যারা সব ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে থেকেছেন তাদের একজন মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন।

চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা মহানগরীর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীকেন্দ্রিক সব আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে সামনের সারিতে দেখেছি। তার কণ্ঠস্বর ছিল খুবই জোরালো। কথা বলতেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে। তোয়াক্কা করতেন না কোনো শক্তির। শুধু রাজপথেই নয়, ঘরোয়া প্রোগ্রাম কিংবা সভা-সেমিনারেও তাঁকে দেখেছি সারগর্ভ আলোচনা করতে।

ইসলামি রাজনীতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটিকে আর পল্টন, বায়তুল মোকাররম কিংবা প্রেসক্লাবের রাস্তায় স্লোগানে মুখর দেখা যাবে না। মাইক হাতে তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আর শোনা যাবে না। ইসলামি ধারার যেকোনো সভা-সেমিনারে লক্ষ্য করা যাবে না তার তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি। তার এই শূন্যতা শুধু দলীয় নেতাকর্মীরাই অনুভব করবে না; আমাদের মতো দর্শক সারি থেকেও তীব্রভাবে অনুভূত হবে।

এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের রাজনীতির সূচনা সেই ছাত্রজীবন থেকে। দীনি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এই মানুষটি তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রায় চার দশক ধরে এদেশের ইসলামি ধারার রাজনীতির অঙ্গনকে করেছেন ঋদ্ধ। বহুমুখি জ্ঞান ও যোগ্যতার পাশাপাশি ইসলামি আন্দোলনের জন্য এমন নিবেদিতপ্রাণ নেতার সংখ্যা খুবই নগণ্য। তিনি নিয়মিত রাজনীতির পাশাপাশি একজন কলেজ শিক্ষক এবং লেখক ছিলেন। তার চলে যাওয়া শুধু দলীয় ক্ষতি নয়; পুরো অঙ্গনের জন্যই বড় ক্ষতির কারণ।

তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে যেমন সব মহলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য ছিলেন; তেমনি ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন অসম্ভব রকমের ভালো মানুষ। তার আচরণ ছিল খুবই অমায়িক। খুব সহজে মানুষকে আপন করে নেয়ার একটা যোগ্যতা ছিল। এজন্য সব মত-পথের মানুষের সঙ্গে ছিল তার সদ্ভাব। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে যতটা প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন ততটাই প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন অন্য দল ও মতের মানুষদের কাছে। এজন্য তাঁর চলে যাওয়ার খবরে সব মহল থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে; যা সাধারণত হয় না।

ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে খুব বেশি মেশার সুযোগ আমার হয়নি। তবে কিছু প্রয়োজনে কয়েকবার তার কাছে যেতে হয়েছে। পুরোপুরি নববি আদর্শের ওপর তাকে পেয়েছি। তার আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। শুনেছি, এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়; সবার সঙ্গেই তার আচরণ এমনই ছিল। তার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপেও জানা গেছে; তিনি সবার কাছে প্রিয় ছিলেন। এজন্য তার অসুস্থতার খবরে সবাইকে যেমন উদ্বিগ্ন হতে দেখেছি; তেমনি তার চলে যাওয়ার খবরে সবাই প্রচণ্ডশোকাহত হয়েছেন।

একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদ হিসেবে মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বহুকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। যারা ইসলামি ধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা অনায়াসে তাকে ফলো করতে পারেন। এমন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিবিদ ইসলামি অঙ্গনে খুব একটা নেই। এই অঙ্গনে মাওলানা হেমায়েত উদ্দিনের শূন্যতাটুকু আল্লাহ পূরণ করে দিন এবং তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন; সেই দোয়া করি।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ