আওয়ার ইসলাম: অনেক সময় কারণে-অকারণে মানুষের মন দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিংবা ওয়াসওয়াসায় প্রচণ্ডরকম আক্রান্ত হয়ে পড়ে। নামাজ-রোজা, জিকির-আজকারসহ কোনো ইবাদতেই ভালোভাবে মন বসে না।
আবার নামাজ-রোজা বা ইবাদত-বন্দেগি করলে মনে হয় যে, কোথাও ভুল হয়েছে বা সঠিকভাবে তা আদায় হয়নি। মনের মধ্যে ইবাদতের বিভিন্ন বিষয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়।
অনেক সময় ভালোভাবে ইবাদত-বন্দেগির চলমান প্রক্রিয়ায় হঠাৎ করে ধীরগতি কিংবা অলসতা দেখা দেয়। ধর্মীয় উপাসনার বিরপীতে অন্যায় কাজের দিকেই মন ধাবিত হতে চায়। কোনো নসিহতও মন সহজে গ্রহণ করতে চায় না।
এসব ক্ষেত্রে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা মারাত্মকভাবে চেপে বসে। যে কারণে মুমিন মুসলমান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানান দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি কাজেই ওয়াসওয়াসা তৈরি হয়।
মানুষের মনের এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য, পুনরায় আমল ও ইবাদতের জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনুল কারিমের চিকিৎসা গ্রহণের বিকল্প নেই। উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে বাঁচার রয়েছে ৪টি আমল-
>> তাউজ তথা আউজুবিল্লাহি মিনাশ-শাইত্বানির রাঝিম (اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم) পড়ার মাধ্যমে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থকে হেফাজত থাকা যায়।
>> সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করা।
>> বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। বিশেষ করে এ জিকির করা-
اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মুছাররিফাল কুলু-বি ছাররিফ কুলু-বানা আলা ত্বা-আতিকা।’
অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন কর।’ (মুসলিম, মিশকাত)
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّت قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলু-বি ছাব্বিত কালবি- আলা দি-নিকা।’
অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখ।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
>> মনে জাগ্রত হওয়া কুচিন্তার দিকে ধ্যান বা খেয়াল না দিয়ে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া-
رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيّ، إِنّكَ أَنْتَ التّوّابُ الرّحِيمُ
উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি- ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়া-বুর রাহি-ম।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়াময়।’
মনে রাখা আবশ্যক
উল্লেখিত ৪ কাজ যথাযথভাবে করতে পারলে মনের মধ্যে দেখা দেয়া দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর তাতেই মনের মধ্যে ইবাদত-বন্দেগির আগ্রহ তৈরি হবে। ওয়াসওয়াসা বা কুচিন্তা দূর করতে উল্লেখিত আমল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
বিশেষ করে, কোনো বিষয়ে মনের মধ্যে কুচিন্তা আসলে, তা গুরুত্ব না দেয়া। মানুষের মনের মধ্যে উদ্রেক বা জাগ্রত হওয়া কুচিন্তার জন্য কোনো মুমিনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। যখনই মানুষ কুচিন্তা বাস্তবায়ন করবে তখনই সে গোনাহগার হবে কিংবা এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের অন্তরে যে সব কুচিন্তা জাগ্রত হয় আল্লাহ তাআলা তা থেকে আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যতক্ষণ না তারা তা মুখে উচ্চারণ করে বা কর্মে বাস্তবায়ন করে’ (বুখারি ও মুসলিম)
তাউজ, সুরা ফালাক্ব ও নাস পাঠ মানুষকে বেহুদা কুচিন্তা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। মানুষের মনের যাবতীয় পেরেশানি দূর করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকতে কুরআনের আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-ওএএফ