সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক
নামাজ। আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ ইবাদত। প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ প্রতিটি মুসলিমের ওপর দৈনিক পাঁচবার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতিটি নামাজের আলাদা আলাদা সময় নির্দিষ্ট এবং তার প্রতিফলও কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করলে সেই সওয়াব আরও বেড়ে যায়।
এ দেশে জুমার দিনে মসজিদে মসজিদে সংখ্যায় মুসল্লীরা ভরপুর থাকলেও বাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সেরকম দেখা যায় না। জুমার নামাজের তুলনায় মুসল্লিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অপ্রতুল হয় ফজরের নামাজে। দিন দিন ফজরের নামাজের মুসল্লির সংখ্যা কমছে। অথচ হাদীস শরীফে ফজরের নামাজ নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ফজরের নামাজে মুসলমান সংখ্যা কম হওয়ায় কারণ এবং এ সংকট থেক উত্তরণের উপায় নিয়ে দু’জন খতিবের সঙ্গে কথা বলে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম। প্রধানত দুই কারণে ফজরের নামাজে দিনদিন মুসল্লির সংখ্যা কমছে বলে মনে করেন সাভার বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইসমাঈল সিরাজী। কারণ দু’টি হলো- ১. দায়িত্বহীনতা, ২. সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে জুমা কেন্দ্রিক মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ফজরের নামাজে মুসল্লির সংখ্যা দিনদিন কমছে। অথচ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই সমান মুসল্লী হওয়ার কথা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি এর দু’টি কারণ বের করেছি। প্রথমত দায়িত্বহীনতা। নিজের মধ্যে অলসতাকে জায়গা দেয়া। পরিবারে নামাজের চর্চা না থাকা মৌলিকভাবে অলসতার একটি ব্যাধি।’
‘নামাজের ব্যাপারে আমাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে ফজরের নামাজে আরো গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ, তখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, অলসতা ঘাড়ে চেপে বসে। সুতরাং, আমাদের ফজরের নামাজের জন্য এক্সট্রা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
‘দ্বিতীয়ত যে কারণটি আমার উপলব্ধি হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি। তরুণ থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই আজ সোশ্যাল মিডিয়া জগতে সময় দেন। রাত জেগে ফেইসবুকিং করতে থাকেন। এজন্য সময় মত ঘুমাতে পারেন না অনেকেই। সময় মত না ঘুমালে ফজরের নামাজে ঘুম থেকে উঠা সকলের জন্যই কষ্টকর হয়ে যায়।’
‘এর থেকে উত্তরণের উপায়ও দুটি। নিজের ভেতর দায়িত্বশীলতা নিয়ে আসা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি কমিয়ে ফেলা। রাতে ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ত করে ঘুমিয়ে পড়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় অপচয় না করে নামাজের কথা মাথায় রাখা।’ যোগ করেন মাওলানা ইসমাঈল সিরাজী।
সাভারের বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতিব মুফতি নাজমুর হাসান বিন নূরীও ফজরের নামাজে মুসল্লি কম হওয়ার বেশ কিছু কারণ বের করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু মসজিদের খতিব তাই মুসল্লির অবস্থা নিয়ে আমরা চিন্তা করি। কোন ওয়াক্তে মুসল্লী কম বা বেশি হয় সে বিষয়টি আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করি। বিশেষ করে ফজরের নামাজে মুসল্লিদের সংখ্যা কম হয়। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। অথচ, হাদিস শরীফে ফজরের নামাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
‘আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের অপূর্ণতা, নামাজ কত বড় ইবাদত! আদায় না করলে কী কী শাস্থি হতে পারে- এ বিষয়ে না জানা থাকা, এ বিষয়ে কাউন্সিলিং এবং শাস্থি প্রদানের ব্যবস্থা না থাকা, গভীর রাত পর্যন্ত সজাগ থাকার কারণে ফজরের সময় জাগ্রত হতে না পারা, পরিবারে এ বিষয়ে কোন তাকীদ না থাকা ইত্যাদি অনেক কারণেই ওয়াক্তিয়া নামাজে মুসল্লির সংখ্যা কম। বিশেষ করে ফজর ও এশার নামাজে আমাদের অনেকের উদাসিনতা দেখা যায়।’
উদাসিনতা তৈরী হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে মুফতি নাজমুর হাসান বিন নূরী বলেন, ‘দুনিয়ার প্রতি অধিক আকর্ষণ, যে কোন উপায়ে অর্থ উপার্জনের মানসিকতা, চোখ ও যবানের ইচ্ছাধীন ব্যবহার করা, নিজের আত্মা ও চরিত্রের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট না হওয়া ইত্যাদি কারণে আমাদের মধ্যে উদাসিনতা তৈরি হয়ে থাকে। ’
‘উদাসিনদের দাওয়াত ও তালিমের মাধ্যমে বুজুর্গদের সোহবত গ্রহণ করতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমে অন্তরের উন্নতি ঘটে, সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায়। আর সত্যিকারের মানুষ তার কর্তব্য সম্পর্কে সতর্ক থেকে তা পালনে যত্নশীল হয়ে থাকে।’ যোগ করেন মুফতি নাজমুর হাসান বিন নূরী।
আরএম/