আওয়ার ইসলাম: মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা গণহত্যা ও সেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। আসুন, কোদালকে কোদাল বলা শুরু করি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যা ঘটেছে সেটা গণহত্যা।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি সেক্রেটারিয়েট ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এ কথা বলেন মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন প্রমুখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও এ সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইডেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইন, গাম্বিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
রাখাইনে মিয়ানমারের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে হাস্যকর মন্তব্য করে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমার যখন তর্ক করছে যে, সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ায় এটা (রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে) হয়েছিল। এটা হাস্যকর যে, লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে ভয়ে পালাচ্ছে তাদের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থায়। সেখানে যা হয়েছে তা রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাস।
তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষ অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এমনকি সেখানে পুরো একটা প্রজন্ম নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে দেখা গেছে। কিছু সৌভাগ্যবান মিয়ানমার থেকে পালাতে পেরেছে। কিন্তু, এখন তারা আবার মাতৃভূমিতে ফিরতে পারছে না।
মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণহত্যা, ধর্ষণসহ অন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল মিয়ানমারে। এর ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালায়, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারে। বাংলাদেশ ১ দশমিক ২ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
মালয়েশিয়া এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। তবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই কম।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। অনেক রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, রাখাইন রাজ্যে তাদের স্থান হয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে। বিশ্ব এসব কুখ্যাত বন্দিশিবির সম্পর্কে জানতে পারলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। তারা সেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, যদি লুকানোর কিছু না থাকে, তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখাতে এত বাধা কেন? জাতিসংঘ প্র্রতিনিধিসহ সাহায্যকারী কর্মীদের সেখানে পরিদর্শন ও সেখানকার ক্যাম্পে যারা আছে তাদের সহায়তার সুযোগ দিক।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উচিত এ সংকট সমাধান করা। প্রত্যাবর্তন প্রথমেই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কিছু রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে দু’টি প্রচেষ্টা হয়েছে। দু’টিই ব্যর্থ হয়। এর কারণ সুস্পষ্ট। জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে কেউই ফিরবে না।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে মালয়েশিয়া চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী। সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভয়, ঘৃণা, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ করেন মাহাথিক মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকার অনিচ্ছুক। সুতরাং এ পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কিছু করতে হবে।
এ সময় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের কথাও উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের যে ভূমিকা রয়েছে, তা রাখা উচিত।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পদক্ষেপসহ অন্যদেরও নিজ নিজ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মাহাথির।
আরএম/