আওয়ার ইসলাম: ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিতে চাইছে না উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাই এ অভিযোগ নিয়ে এবার দিল্লি পুলিশের দ্বারস্থ হলেন রাজ্যটির এক আইনের ছাত্রী।
৭২ বছরের ওই নেতার বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ওই তরুণীর অভিযোগ, চিন্ময়ানন্দ তাকে ধর্ষণ করেছেন এবং গত এক বছর ধরে শারীরিক নির্যাতন করছেন।
গতকাল সোমবার কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামী চিন্ময়ানন্দ আমাকে ধর্ষণ করেছেন। এমনকি, গত এক বছর ধরে আমাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে চলেছেন।’
এদিন লোদি রোড থানায় ওই যুবতীর অভিযোগ গ্রহণ করে দিল্লি পুলিশ। এরপর শাহজাহানপুর থানায় তা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
গত মাসের শেষ দিকে স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন ২২ বছরের ওই আইন পড়ুয়া। তার দাবি, ‘শাহজাহানপুর থানা ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ করতে চায়নি।’
এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ওই অভিযোগে চিন্ময়ানন্দের নাম না করলেও তার দাবি ছিল, ‘সন্ত সমাজের এক প্রভাবশালী নেতা, যিনি অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন, আমাকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন।’
ওই ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে সাহায্যের অনুরোধও করেন তিনি।
ওই যুবতীর বাবাও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে তার অভিযোগে এক প্রভাবশালী নেতার কথা বলেছিলেন। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায়।
এর পরে সপ্তাহখানেক ওই তরুণীর কোনও খোঁজ মেলেনি। সে সময় বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ভয় দেখানোর অভিযোগও দায়ের করা হয়।
ইতিমধ্যে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
গত ৩০ অগস্ট রাজস্থানের জয়পুরে ওই তরুণীর সন্ধান পাওয়ার পর তাকে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়।
এ দিন তিনি বলেন, ‘রোববার তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা আমাকে ১১ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের ধর্ষণের কথা জানিয়েছিলাম। তবে সবকিছু বলার পরেও ওরা চিন্ময়ানন্দকে গ্রেফতার করেননি।’
এদিকে গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা। যদিও প্রথম থেকেই ওই তরুণীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বামী চিন্ময়ানন্দ। পুলিশকে এড়িয়ে চলছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
তবে এদিন চিন্ময়ানন্দের আইনজীবী ওম সিংহ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মামলা এড়াচ্ছেন না স্বামীজি।
এখন তিনি আধ্যাত্মিক কাজকর্মে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে দিল্লি পুলিশ তলব করলে তিনি নিশ্চয়ই তাদের সামনে হাজিরা দেবেন।’
অটল বিহারী বাজপেয়ী জমানার মন্ত্রী স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে এর আগেও ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক তরুণী। এমনকি, তাকে খুন করারও হুমকি দেন চিন্ময়ানন্দ।
কিন্তু গত বছরের এপ্রিলে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় দখলের পর সেই অভিযোগটি তুলে নেওয়া হয়। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়ে যোগী সরকারকে। এবার শাহজাহানপুরের ওই তরুণীর অভিযোগকে ঘিরে ফের প্রশ্নের মুখে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। সূত্র- আনন্দবাজার
-এটি