বেলায়েত হুসাইন ♦
মোহাম্মাদ সালাহ হামিদ মাহরুছ গালী। খেলারমাঠেও ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করা মিশরীয় একজন পেশাদার ফুটবলার।
যিনি একজন ফরওয়ার্ড হিসেবে জনপ্রিয় ব্রিটিশ ক্লাব লিভারপুলে খেলে থাকেন। খেলার জীবনে তার ধর্মীয় মূল্যবোধকে অনেকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, বিশেষত তার বর্তমান ক্লাব লিভারপুলের সমর্থকরা।
অথচ একটা সময় এরাই মোহাম্মাদ সালাহর জীবনাচার নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলো, আর তারাই এখন সালাহকে নিয়ে গর্ব করে।
একবারের ঘটনা, ২০১৮ সালে মাঠে উপস্থিত সমর্থকদেরকে বলতে শোনা গেছে সালাহ্কে উদ্দেশ্য করে সমবেত কণ্ঠে গাইছেন, ‘যদি সে তোমার জন্য ভাল হয় তবে সে আমার জন্যও ভাল। যদি যে আমাদের হয়ে আরো কিছু গোল করে তবে আমরা মুসলিম হতেও রাজি। যদি সে তোমাদের জন্য ভাল হয় তবে সে আমার জন্যও ভাল। যদি সে মসজিদে যায় তবে আমিও সেখানে যেতে রাজি ।’
টুইটারে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লিভারপুলের ভক্তরা এ গানে গলা মিলিয়েছেন। এমনকি যারা লিভারপুল সমর্থক নন তারাও এ ভিডিওর প্রশংসা করেছেন। এভাবে মোহাম্মদ সালাহ্ ‘আমিও মুসলিম হবো’ এ সঙ্গীতকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
বিবিসির সংবাদ অনুযায়ী লিভারপুল ক্লাবের একজন সদস্য আসিফ বদি এই গানের বার্তা পছন্দ করেছেন। তার মতে, সালাহ এবং এ ভিডিওটি লিভারপুলে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন,আমি অ্যানফিল্ডে নিয়মিত আসি।
আমার মতে সালাহ্ যেভাবে খেলছেন তাতে সে নি:সন্দেহে লিভারপুলে মুসলিম ভক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করছেন। আন্তর্জাতিক কয়েকটি জরিপে উঠে এসেছে,মোহাম্মাদ সালাহ গ্রেট ব্রিটেনে মুসলিমবিদ্বেষ কমিয়ে এনেছেন অনেকটাই এবং নিজের পরিচ্ছন্ন জীবনাদর্শ দিয়ে বিধর্মী সমর্থকদের মনে মুসলিমপ্রীতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। জানিয়েছে আল জাজিরা।
এককথায়, মোহাম্মাদ সালাহ গোটা ব্রিটেনে ইসলাম ও মুসলসানদের ইমেজ বাড়িয়ে দিয়েছেন।তার কারনে অন্য ধর্মের লোকদের ধারনা পাল্টে গেছে মুসলমান এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে।
ফুটবলার সালাহ এবং ব্যক্তি সালাহ পুরোপুরি একই। ব্যক্তিজীবনে নিজের দাতব্য কর্মকান্ড এবং মহাভুবনতার জন্য তিনি যেখানেই খেলেছেন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সালাহর ধার্মিকতা সকলের নজর কেড়েছে।
ইউরোপে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করা ফুটবলার হয়েও নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন ইসলামের শৃঙ্খলার মধ্যে। সালাহর হাতে অনেক সময় দেখা যায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন। বিমান ভ্রমণ সময়ের সময় নিয়মিত কুরআন পাঠ করেন তিনি। নিয়মিত নামাজও পড়েন।
গত ২০১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ছিলো রমজান মাসের মধ্যে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহ ফাইনাল খেলতে নামবেন রোজা রেখেই। পরে ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোজা কাজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণে তার খেলায় অবনতি হয়েছে তা নয় বরং ফুটবলের সবচে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ব্যালন ডি’অরের জন্য চলতি ২০১৮/১৯ মৌসুমসহ বিগত কয়েকবছরের ফিফার সংক্ষিপ্ত তালিকায় মোহাম্মাদ সালাহর নাম ছিলো।
২৭ বছর বয়সী মোহাম্মাদ সালাহ ১৯৯২ সালের ১৫ জুন মিশরের গারবিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে তিনি ম্যাগি নামের এক রমণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, যার নাম মক্কা, তার জন্ম ২০১৪ সালে।
ইসলামের সবচেয়ে পবিত্রতম শহর মক্কা'র নাম অনুসারে কন্যার নাম রেখেছেন মোহাম্মাদ সালাহ। সিজদা প্রদানের মাধ্যমে গোল উদযাপন করা এ ফুটবলার নিজ মাতৃভাষা আরবির সঙ্গে ইংরেজী এবং ইটালিয়ান ভাষায়ও কথা বলতে পারেন।
-এটি