মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ।।
একটি ইঁদুর মরলো আমার কামরায়। কখন, কীভাবে মরলো জানি না। কোনো বেড়াল কিংবা মানুষ মারেনি। হয়তো স্বাভাবিকভাবেই মরেছে। আমি জানতাম, ইঁদুর বেঁচে থাকলেই সমস্যা। বই -খাতা এবং মূল্যবান পাণ্ডুলিপির বড় শত্রু জীবন্ত ইঁদুর, কিন্তু এখানে আমার কামরায় সমস্যা হলো ইঁদুরের মৃত্যুতে।
ইঁদুরটি মরলো কখন, কীভাবে জানি না। যখন পচলো এবং দূর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলো তখন বুঝলাম, ইঁদুর মরেছে। দূর্গন্ধে ঘরে থাকা দায় হলো। খু্ঁজে খু্ঁজে শেষ পর্যন্ত মরা ও পচা ইঁদুরটি বের করা হলো এবং দূরে নিয়ে ফেলে দেয়া হলো, যেভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয় মরা ইঁদুর। কামরায় তারপরো দুর্গন্ধ ছিলো অনেক্ষণ।
আমি যেমন মরা ইঁদুরের দুর্গন্ধ পেলাম এবং কষ্ট পেলাম, আমার ঘরে, আমার কামরায় ফিরেশতারা কি দুর্গন্ধ পায়! রহমতের ফিরেশতারা কি আসতে পারে আমার কামরায়! আমার আমলের দুর্গন্ধ কি ঐ মরা ইঁদুরটিরর চেয়ে কম! মরা ইঁদুর ছুঁড়ে ফেলে দিলাম দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু আমার আমলের দুর্গন্ধ থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় কি?
উপায় আছে। আমার মাওলা খুব সহজ উপায় বলেছেন। আমাকে শুধু তাওবা করতে হবে,অনুতপ্ত হৃদয়ে অশ্রুধোয়া তাওবা।
মরা ইঁদুর পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়; জীবিত ইঁদুর পাণ্ডুলিপি কেটে ফেলে, তবে দুর্গন্ধ ছড়ায় না। আর জীবিত মানুষ পাণ্ডুলিপি তৈরি করে এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। মানুষ নিজে, এমনকি অনেক সময় তার তৈরি পাণ্ডুলিপি এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় যে, হাজারটা ইঁদুর মরে পচেও এতটা দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে না।
এতদিন শিক্ষা পেয়েছি তাজা ফুলের সুবাস থেকে, আজ শিক্ষা পেলাম মরা ইঁদুরের দুর্গন্ধ থেকে। আমি, তুমি, আমরা ফুলের সুবাস ছড়াতে যদি নাও পারি, মরা ইঁদুরের দুর্গন্ধ যেন না ছড়াই, কাজে, কথায় এবং লেখায়।
লেখক: শিক্ষক, আরবী ভাষা ও সাহিত্য, মাদরাসাতুল মদীনাহ, কামরাঙ্গীচর, ঢাকা।
(পুষ্পসমগ্র থেকে সংগৃহীত)
আরএম/