শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কুরবানিতে শরিকদার কেমন হওয়া চাই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তানভীর সিরাজ ♦

জীবনের প্রতিটা ধাপেধাপে নির্বাচন শব্দটি আমাদের সাথে বেশ পরিচিত। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন আর রাষ্ট্রিক জীবন - এমনকি ইবাদত বন্দেগিতেও একই কথা।

কুরবানিতে শরিকদার নির্বাচন করতেও খুব সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে আর না হয় আমার কুরবানিও আল্লাহ্‌ কবুল করবেন না। শরিকদার সুন্দর না মিলতে কুরবানিটাও যে শুদ্ধ হচ্ছে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেছেন, সমস্ত আমলের প্রতিদান আমলি ব্যক্তির নিয়তের উপর নির্ভর করে। (বুখারি-মুসলিম) তাই আমাকে আপনাকে কুরবানিতে শরিকদার নির্বাচনে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

আপনাকে দেখতে হবে শরিকদারের উপার্জন হালাল, নাকি হারাম। সুতরাং যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম তাকে শরিক করে কুরবানি করলে অন্যান্য শরিকদারের কুরবানিও শুদ্ধ হবে না। তাই ‘কুরবানিতে কেমন শরিকদার নির্বাচন করবো’ তা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

১। লজ্জায় পড়ে কুরবানি করা

আমি সমাজের মান্যগণ্য মানুষ। সমাজে আমার একটা সামাজিকভাবে অবস্থানও আছে। এখন আমি যদি কুরবানি না করি লোকে আমাকে কী বলবে! তাই আমি বাধ্য হয়ে কুরবানি করি। আমাকে কুরবানি করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল এমন ব্যক্তি যদি শরিকি কুরবানি করে তাহলে বাকি শরিকদারের কুরবানির কী হুকুম?

উত্তর: সহজ উত্তর হল এমন শরীকদারের সাথে কারোই কুরবানি হবে না (বাদায়েউস সানায়ে,খ,৪, পৃ:২০৮, কাযীখান, খ. ৩, পৃ : ৩৪৯)

প্রসঙ্গকথা: একটা গরুতে সাতভাগ হিসেবে সাতজনের নিয়তই থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ। তবে একজনের নিয়ত যদি হয়ে থাকে লজ্জায় পড়ে কুরবানিতে ভাগ, তা হলে অন্যদেরও কুরবানি হবে না যেহেতু একটি ভাগ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় নি যদিওবা বাকি ছয়ভাগ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়ে থাকে।

২। সুদি টাকার কুরবানি

কুরবানির পশুতে যদি কোনো শরিকদারের সুদের সাথে লেনদেন আছে - এখন দেখতে হবে সে যদি সুদি টাকা দিয়েই কুরবানিতে ভাগ দেয় তাহলে বাকিদের কুরবানিও শুদ্ধ না। #দেখুন কুরবানির বিধান, আহসানুল ফাতওয়া, খণ্ড: ৫।

আল্লাহ্‌ বলেন:  احل الله البيع و حرم الربا  আমি ব্যবসায়কে হালাল করেছি এবং সুদকে করেছি হারাম।’ (সূরা বাক্বারাহ: ২৭৫)

সুদকে যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা হারম করেছেন সেখানে আমি আপনি কীভাবে হালাল বলে তার অর্থ দিয়ে কুরবানি করব ? সেটি মীমাংসিত বিষয়। রাসূল (সঃ) বলেছেন, ‘এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ৩৬ বার ব্যভিচার করার চাইতে অধিক গুনাহের কাজ।’ -মুসনাদে আহমাদ, ৫/২২৫, হা/২১৯৫৭; সিলসিলা ছহীহাহ,১০৩৩; মিশকাত,২৮২৫।

৩। অনুপস্থিত ব্যক্তির কুরবানি

যদি অনুপস্থিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার অনুমতি ছাড়া কেউ কুরবানি করে তাহলে সেই কুরবানি শুদ্ধ হবে না। - বেহেশতি জেওর, পৃ. ২০৭।

৪। অনুমতি ছাড়া কুরবানি

যদি কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কুরবানির পশুর মধ্যে তার অংশ নির্ধারণ করা হয় তাহলে অবশিষ্ট শরিকদারের কুরবানি সহী হবে না। -বেহেশতি জেওর,পৃ. ২০৭।

৫। শুধুই গোশত খাওয়া

শরিকদারের মধ্যে কোনো শরিকদারের নিয়ত যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকে, থাকে শুধু গোশত খাওয়া, তাহলে অবশিষ্ট শরিকদের কুরবানি সহি হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯।

৬। সপ্তমাংশের কম 

একজন শরিকদারের অংশও যদি সপ্তমাংশের কম হয় তাহলে অবশিষ্ট শরিকদের কুরবানি সহী হবে না। অবশ্য এক অংশ পরিপূর্ণ করার পর পারা যায়। যেমন- দু'জন ব্যক্তি মিলে একটি গরু কুরবানি করলে একজন সাড়ে ৩ ভাগ। অথবা দুঃজন ব্যক্তি মিলে ৩ ভাগ করা ইত্যাদি। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭।

কিংবা কারো আধা ভাগ, এমন হলে কোনো শরিকের কুরবানিই সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭, কুরবানির বিধান, বেহেশতি জেওর,পৃ. ২০৫)

৭। ১টি ছাগলে দুই ব্যক্তির কুরবানি, ১ট গরু, মহিষ আর উটে সাতজনের বেশি ব্যক্তি শরিক হয়ে কুরবানি করলে কারও কুরবানি শুদ্ধ হবে না, কারণ কুরবানি সর্বনিম্ন ১ ভাগ হতে হয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭, কুরবানির বিধান, বেহেশতি জেওর, পৃ. ২০৫)

৮। ব্যাংকার শরিকদার

যদি কোনো শরিকদার ব্যাংকে চাকরি করেন তাহলে সুদমিশ্রিত টাকার কারণে অন্য শরিকদারের হালাল টাকার কুরবানিও শুদ্ধ হবে না। -মুসনাদে আহমাদ, ৫/২২৫, হা/২১৯৫৭; সিলসিলা ছহীহাহ,১০৩৩; মিশকাত,২৮২৫।

কুরবানি এমন একটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক ইবাদত যার সুচিন্তিত ও সুন্দর পরিকল্পনা আমাদের জীবনে আনতে পারে সচ্ছলতা ও সৌহার্দতা। সুদি টাকা দিয়ে কুরবানি করা বৈধ নয় বলে সওয়াবের স্থানে গোনাহ হয়। তাই লাভের চে' ক্ষতি বেশি হয় আর জান্নাত না পেয়ে জাহান্নাম পেতে হয়।

আমরা যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি না করি, তাহলে কুরবানি সহিহ হবে না। খালি গোশত খাওয়ার জন্য, বা লৌকিকতা, কিংবা লজ্জায় পড়ে কুরবানি করা গোনাহের কাজ। আল্লাহ্‌ আমাদের সঠিক আমলের তাওফিক দেন। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ