বেলায়েত হুসাইন: আরবি ভাষার সঙ্গে নূন্যতম সম্পর্ক রাখে অথচ 'ওকাজ মেলা'র কথা পড়েনি-এমন লোক শূন্যের কোঠায়। ইসলামপূর্ব জাহেলিযুগ ছিল কাব্যরসে সাহিত্যচর্চা করার প্রধান সময়। বংশের বীরত্বগাঁথা, ভিন্নবংশের কাপুরুষতা বর্ণনা করা, এমনকি স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভালো কাজকে মন্দ বানানো ও মন্দকে খারাপ সাব্যস্ত করা-এর সবই হতো কাব্যের মাধ্যমে।
আরবদের কাব্যের মেলা জমতো এবং প্রতিযোগিতা হতো। আরবদের কাছে উপস্থিত কাব্য রচনা করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যুদ্ধবিজয়ের চেয়ে কম মর্যাদার ছিল না তখন। এর জন্য সবচে প্রিয় জায়গা ছিল 'ওকাজমেলা', এখানেই জাহেলি কবিদের কাব্যের আড্ডা জমতো। বলা যায়, শুরা এবং সূরের পরশে কাব্য আসর জমে ক্ষীর হয়ে উঠত।
ইসলাম এসে কাব্যচর্চার অন্ধকার যুগের অবসান ঘটায়। তবে কাব্য রয়ে যায় তার আপন মহিমায়। আরবরা কাব্যচর্চা এবং কাব্যপ্রেম ভুলতে পারেনি আজও। এজন্য এখনো কাব্যচর্চার বিভিন্ন আসর বসে আরবের অলিগলিতে।
কিন্তু স্থানীয় আরবি ভাষার মিশেলে তাদের কাব্য সময় বিশেষ বুঝতে খুব দুর্বোধ্য ঠেকে। তাই বিশুদ্ধ ভাষার সাহিত্যধারার প্রচলন ও ফসীহ কাব্যচর্চার ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে 'দুর্বোধ্যভাষার কাব্যচর্চা' যেন শেষ হয়, সেজন্য আরবদের নানারকম অনুশীলনের অন্ত নেই।
এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল গবেষণা ও ইসলামি শিক্ষা ইনিস্টিটিউট প্রতিবছর আয়োজন করে মাসব্যাপী বিশুদ্ধ আরবিভাষায় কাব্য প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক একটি আসর। বিখ্যাত ওকাজমেলার ঐতিহ্যকে স্মরণ করে এই আসর অনুষ্ঠিত হয় তায়েফ নগরীর ওকাজ বাজারে।
চলমান ১৪৪০ হিজরি বর্ষের আগামী ১লা আগস্টে প্রতিযোগিতার ত্রয়োদশ আসর শুরু হয়ে চলবে টানা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। আয়োজন সহযোগিতায় থাকবে সৌদি সরকারের পর্যটন ও ঐতিহ্যরক্ষা বিষয়ক জাতীয় বোর্ড।
আগস্টে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় 'ওকাজমেলা' সেরা প্রতিযোগীদেরকে প্রদান করা হবে প্রায় বিশ লক্ষ সৌদি-রিয়াল সমপরিমাণ উপঢৌকন সামগ্রী।
এ প্রতিযোগিতা আসরকে মনোরম ও আরো বেগবান করতে আরবসহ বিশ্বের আরবি কবিদেররকে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়েছেন বাদশাহ ফয়সাল গবেষণা ও ইসলামি শিক্ষা ইনিস্টিটিউট এর প্রধান পরিচালক ডক্টর সাউদ সারহান।
আগামীকাল রবিবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সময় পাবেন সাহিত্যসেবী কবিগণ।
অনলাইনেও আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। লিংকটি অনুস্মরণ করুন- http://soukokaz.sa.
প্রসঙ্গত, ওকাজের এই প্রতিযোগিতাকে আখ্যা দেয়া হয় সৌদি ও আরববিশ্বের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে। কেননা, এই কাব্যানুষ্ঠান আরব উদ্ভাবক, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক এবং জ্ঞানীদের একসঙ্গে হাজির করে।
সূত্র: আল আরাবিয়া ডটনেট
আরএম/