মুফতি আবদুুল্লাহ তামিম ♦
সম্প্রতি জার্মানের এক গবেষণায় ওঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে সুখি হলেন মুসলিমরা। কারণ তারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। আল্লাহ ও তার রাসুল সা. মানুষকে পৃথিবীতে চলা বলা ও জীবন যাপন করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। যারা এগুলো মানবে তারাই সুখি হবে।
আর তাইতো পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধুর্য চরিত্রের অধিকারী ছিলেন আমাদের নবি মুহাম্মদ সা.। মানব জাতির প্রত্যেক বিষয়ের উপযোগী শিক্ষা ও সমাধান দিয়েছেন তিনি।
তিনি উত্তম আদর্শের বাতিঘর। জাতি সভ্যতার সেরা শিক্ষক। বিশুদ্ধ অন্তর গড়ার কারিগর। তাঁর শিক্ষা সংস্কৃতিতে নিহিত আছে মানব ভব্যতার পাঠ। তিনি অনুসরণীয়। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে পরিবার পরিচালনা পর্যন্ত।
ঘুমাতে হয় কিভাবে সেটাও তিনি শিখিয়েছেন আমাদের। রাতে ঘুমানোর আগে প্রিয় নবি সা.-এর বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অজু করে ঘুমানো। হজরত বারাআ ইবনু আজিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে।
তারপর ডান পাশে শুয়ে বলবে (সঠিক আরবি উচ্চারণ কোনো আলেম থেকে অবশ্যই শিখে নিতে হবে) : ‘আল্লাহুম্মা আসলামতু ওয়াজহিয়া ইলাইকা, ওয়া ফাউওয়াদতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আলজা’তু জহরি ইলাইকা, রুগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালজাআ ওয়া লা মানজা মিংকা ইল্লা ইলাইকা। আল্লাহুম্মা আমাংতু বিকিতাবিকাল্লাজি আংজালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাজি আরসালতা।’
‘হে আল্লাহ, আমার জীবন তোমার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সব কাজ তোমার কাছে অর্পণ করলাম এবং আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলাম তোমার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোনো আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণের স্থান নেই। হে আল্লাহ, আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের ওপর এবং তোমার প্রেরিত নবীর প্রতি।’
যদি সে রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ইসলামের ওপর তোমার মৃত্যু হবে। এ কথাগুলো তোমার সর্বশেষ কথায় পরিণত করো। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭) প্রিয় নবি (সা.) আমাদের ঘুমানোর আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে।
এক. ঘুম অনেকটা মৃত্যুর মতোই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু দেন এবং দিনে তোমরা যা কামাই করো তিনি তা জানেন। তারপর তিনি তোমাদের দিনে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন, যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।
তারপর তোমরা যা করতে তিনি তোমাদের সে বিষয়ে অবহিত করবেন। (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬০) তাই ঘুমানোর আগে পবিত্রতা অর্জন করে নেওয়া জরুরি। কেননা কোনো কোনো হাদিসে এমনও এসেছে যে অজু অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে।
যদিও ঘুমানোর আগে মুমিনের নিয়ত থাকে শুধু রাসুল সা.-এর সুন্নতের অনুসরণ, তবে এর কিছু পার্থিব উপকারিতাও রয়েছে; যেমন—অজুর মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভূত হয়, ফলে হতাশা দূর হয়ে যায়, যা সাধারণত ঘুমাতে গেলেই মানুষকে চেপে ধরার চেষ্টা করে। অজু আমাদের মুখের তৈলাক্ততা দূর করে। অজুর মাধ্যমে মুখে জমে থাকা ছত্রাকগুলো দূর হয়ে যায়।
ফলে ঘুমানোর আগে অজু আমাদের ত্বকের জন্যও ভালো। বিউটি এক্সপার্টরা ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অজুর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সালামত আজিজ বলেন, অজু হৃদরোগ আরোগ্য হওয়ার একটি উত্তম উপায়। পাশ্চাত্যের মনস্তত্ত্ববিদরা প্রতিদিন অজুর মতো করে কয়েকবার দেহে পানি লাগানোর পরামর্শ দেন। (পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানে মুহাম্মদ (সা.), পৃ. ১১২)
-এটি