সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

সূরা কাহফে বর্ণিত চারটি ঘটনা ও শিক্ষা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ: সূরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ একটি সুরা। কুরআন শরিফের ১৮ নম্বর সূরা এটি। আয়াত সংখ্যা ১১০, রুকু ১২। এটি ১৫ নম্বর পারার দ্বিতীয় সূরা। এ সূরায় আল্লাহ তা’আলা অতীতের চারটি উল্লেখযোগ্য সত্য ঘটনা উল্লেখ করেছেন আমাদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য।  ঘটনাগুলো ও তার শিক্ষা পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো।

গুহাবাসীদের বিশ্বাসের গল্প

আসহাবে কাহাফের ঘটনা আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। কয়েকজন যুবক আল্লাহর তায়ালার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনার পর তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।  তারা যখন একটি গুহার নিকট পৌঁছালেন, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাদের সবাইকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।

যখন তারা জেগে উঠলো পরস্পর বলাবলি করছিল যে তারা হয়ত একদিন কিংবা অর্ধ দিন ঘুমিয়েছে। তাদের একজনকে যখন খাবার ক্রয়ের জন্য শহরে পাঠানো হল সে ভেবেছিল লোকেরা হয়ত তাকে চিনে ফেলবে এবং তার ক্ষতি করবে। কিন্তু সে তাদের মাঝে একজন অপরিচিত আগন্তুক হিসেবেই নিজেকে খুঁজে পেল। শহরের লোকেরা তাকে এবং তার ব্যবহৃত পুরাতন মুদ্রা দেখে বিস্মিত হল।

মূলত এ ঘটনাতে দেখানো হয়েছে, আল্লাহ তার উপর ভরসাকারী বান্দাদেরকে কি করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন। এটা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, আল্লাহ তায়ালার ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের সবসময় হেফাজত করে থাকে।

দুই বাগানের মালিকের সম্পদের গল্প

গল্পটি এমন এক ব্যক্তির যার দুটি সুন্দর বাগান ছিল, কিন্তু এ কারণে সে অহংকারী হয়ে তার বন্ধুকে বলেছিল “আমি তোমার থেকে উত্তম কেননা তোমার থেকে আমার বেশি সম্পদ, কর্মচারী ও সন্তান রয়েছে। (১৮ঃ৩৪)

লোকটি অহংকার বশত আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভূলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহ তার বাগানগুলোকে ধ্বংস করে দিলেন। এখানে দেখা যায়, আল্লাহ সেই দুই বন্ধুর একজনকে এমন দুটি বাগান দিয়েছিলেন যেগুলো ছিল খেজুর গাছ দিয়ে পরিবেষ্টিত, সর্বদা ফলদানকারী, দুয়ের মাঝে ছিল শস্যক্ষেত্র আর জলাশয়।

অর্থাৎ সবদিক দিয়েই এই বাগান দুটি ছিল একজন কৃষকের জন্য স্বপ্নতুল্য। এই বিরাট নিয়ামত পেয়ে অহংকারী বন্ধুটি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শুরু করলয়। প্রথমে সে দাবী করল এই দুনিয়াবী সম্পদ অবিনশ্বর, এরপর সরাসরি পরকালকেই অস্বীকার করে বসলো। আল্লাহ আমাদেরকে এমন সম্পদ থেকে রক্ষা করুন যা আমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয়।

গল্পটি তাদের জন্য যারা দুনিয়ার মোহে পরে থাকে আর আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিতে পারেন।

মুসা ও খিজির আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্ঞানের গল্প

রাসুল সা. বলেছেন, একবার মুসা আ. বনি ইসরাইলিদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। একজন তার কাছে জানতে চাইল, মানুষের মাঝে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি জবাব দিলেন আমি। আল্লাহ মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  জানিয়ে দিলেন তিনি (আল্লাহ) তাকে সকল জ্ঞানের অধীকারী বানাননি। আল্লাহ তাকে বললেন, “দুই সাগরের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা আছে যে তোমার চাইতেও অধিক জ্ঞানী।

মুসা আ. আরজ করলেন হে আল্লাহ! আমি তার দেখা কি করে পাব? আল্লাহ মুসা আ. কে সে মানুষটিকে খুঁজে পাওয়ার উপায় বলে দিলেন যিনি খিজির (চীর সবুজ) নামে পরিচিত ছিলেন।

হজরত মুসা আ. খিজির আ. এর সাথে সফর করলেন এবং বুঝতে পারলেন আল্লাহ যাকে খুশি তাকেই জ্ঞান দান করেন। যেহেতু সকল জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তাই কারো জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা উচিৎ নয়। খিজির আ. নিজেও বলেছেন, আমি আমার ইচ্ছায় কিছুই করিনি।। (১৮:৮২)

ন্যায়পরায়ণ বাদশা জুলকারনাইনের ক্ষমতার গল্প

জুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ বাদশাহ, তিনি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেছিলেন। এ সফরের কথা কুরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে। তার শেষ সফরে তিনি দুই পর্বতের মাঝে এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পেলেন। তারা তার কাছে ইয়াজুজ ও মাজুজের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি দেওয়াল নির্মাণের আবেদন জানালো। জুলকারনাইন কাজটি করে দিতে সম্মত হলেন।

জুলকারনাইন তার কাজ নিয়ে গর্ব করেননি। দেওয়াল নির্মানের পর তার দেওয়া ভাষণ কুরআনে এসেছে, সে (জুলকারনাইন) বলল, এগুলো আমার মালিকের অনুগ্রহ, কিন্তু যখন আমার মালিকের নির্ধারিত সময় আসবে তিনি এগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন, আর আমার প্রভুর ওয়াদাই চূড়ান্ত সত্য। (১৮:৯৮)

রাসূল সা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহাফ পড়বে, আল্লাহ দুই জুমআর মধ্যবর্তী সময়ে তার উপর আলো দান করবেন। (বায়হাকী)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর হবে।

আল্লাহ সূরা কাহাফের শিক্ষাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশে রূপান্তরের তৌফিক দিন। আমিন।

সূত্র:ইলমফিড

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ