আব্দুল্লাহ আফফান: হজ আর্থিক ও শারীরিক সামর্থবানদের জন্য ফরজ। যারা হজের সফরের জন্য রওয়ানা হবেন, তার আগেই মাসাধিককালের দীর্ঘ সফরের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। যেন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক সফরকারী সঠিক ও সুন্দরভাবে হজের কাজগুলো যথাযথ সম্পাদন করতে পারে। শারীরিক ও মানসিকভাবে থাকতে পারে সুস্থ ও সবল থাকতে পারে।
হজের জন্য নিয়তকে বিশুদ্ধ করুন: হজ আর্থিক, শারীরিক ও আত্মিক ইবাদত। সম্পদশালীদের জন্য ইসলামের অন্যতম রোকন। এ ইবাদত পালনে প্রথমেই নিয়তের পরিশুদ্ধতা প্রয়োজন। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া হজ হবে না। কেননা মানুষের প্রতিটি আমলই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।
ইসলামের অন্যতম রোকন তথা হজের বিশুদ্ধতার জন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতায় বিশ্বনবির এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ুন এবং হজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নিন- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাজিহি হাজ্জাতান লা রিয়াআন ওয়ালা সুমআহ।’ অর্থ: হে আল্লাহ! এ হজকে এমন হজ হিসেবে কবুল করুন, যেখানে কোনো প্রদর্শন ও খ্যাতি অর্জনের ইচ্ছা না থাকে।
লোক দেখানো বা শোনানোর ইচ্ছে থাকলে, প্রদর্শন বা খ্যাতির নিয়ত থাকলে তা মন থেকে এখনই ঝেড়ে ফেলুন। হজ সহ সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করুন। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা কারো ইবাদত কবুল করবেন না।
হজের আহকাম পালনে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা: আর্থিক, শারীরিক ও আত্মিক ইবাদত হজ। এতে রয়েছে অনেক কষ্টকর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন ও বিধান। ইহরাম, ইহরামের কাপড় পরিধান, তাওয়াফ ও সাঈ’র নিয়ম জেনে নেয়া। মক্কা, মিনা, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ঘুরে মিনায় অবস্থান, কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানির যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা।
তালবিয়া শিখে নেয়া: হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশহলো তালবিয়া পাঠ। ইহরামের পর থেকে তালবিয়া পাঠে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। তাছাড়া তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় পঠিত গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ ও দোয়া। এগুলো শিখে নেয়া আবশ্যক।
মুয়াল্লিমের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া: হজের সফরে মুয়াল্লিম সব কিছু দেখিয়ে দেবে কিংবা পড়িয়ে-শিখিয়ে দেবে এমনটি না ভেবে নিজে নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ ও না জানা বিষয়গুলো জেনে নেয়া জরুরি। কোন কারণে মুয়াল্লিম যদি হজের সফরে সহযোগিতা করতে না পারে, সে সময় যেন হজের গুরুত্বপূর্ণ রোকনগুলো ছুটে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।
হজের আগেই দায়মুক্ত হওয়া: ঋণ পরিশোধ করা হজ পালনেচ্ছু প্রত্যেকের জন্য জরুরি। কারো কাছে কোনো বিষয়ে দায়বদ্ধতা থাকলে তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারো সঙ্গে কোনো ধরনের অন্যায় সংগঠিত হয়ে তা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। কোনো অসিয়ত থাকতে তা হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই সম্পাদন করা জরুরি।
পরিবারের প্রতি নসিহত: হজের সফরে যাওয়ার আগে নিজ পরিবার-পরিপজনকে ঈমান, ইসলাম, ইখলাস ও তাকওয়া অবলম্বনের ব্যাপারে নসিহত করা জরুরি। সর্বোপরি দ্বীন ও ঈমানি জিন্দেগি যাপনের নির্দেশ দেয়া। তার অর্জিত কোনো সম্পদ যেন অন্যায় পথে ব্যয় না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করে যাওয়া।
ডাক্তার পরামর্শ গ্রহণ: হজের সফরে যাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার সঙ্গে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং ওষুধ সংগ্রহ করে নেয়া। হজের এ দীর্ঘ সফরে কী সমস্যা হতে পারে। সমস্যা হলে প্রাথমিকভাবে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সে পরামর্শও গ্রহণ করা জরুরি।
ওষুধ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা জরুরি। ওষুধ বহনে ডাক্তারে প্রেসক্রিপশন অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। যেসব ওষুধ খুবই জরুরি, সেসব ওষুধের ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। হজের সফরে গিয়ে মক্কা কিংবা মদিনা থেকে ওষুধ সংগ্রহ করা যাবে এরকম সিদ্ধান্ত না নেয়া।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা: হজের সফরের আগে নিজের খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। হজের সফর সুন্দর ও আরামদায়ক করতে হলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার বিকল্প নেই। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা হবে সফরের জন্য সহায়ক।
আল্লাহর সাহায্য কামনা করা: হজের মাসাধিককাল সফরে সুষ্ঠু ও নিরাপদ থাকতে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। যেমনিভাবে রমজান লাভে রজব ও শাবান মাস থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন সেভাবে সঠিক ও সুস্থভাবে সহজে হজ সম্পাদনে আল্লাহর একান্ত সাহায্য লাভে দোয়া করা। বিশেষ করে হজ কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
মনে রাখতে হবে, হজের সফর দোয়া ও জিকিরে ভরপুর। এ সফরে যে যতবেশি আল্লাহর কাছে চাইতে পারবে, সে ততবেশি নেয়ামত লাভ করবে। এ সফরের সব কাজের প্রায় ৩ ভাগই দোয়া, তাসবিহ-তহলিলে ভরপুর। হাদিসে পাকে, ইহরাম থেকে শুরু করে কাবা শরিফ দেখা, মসজিদে হারামে প্রবেশ, তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফায় অবস্থান করে শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া, তাওবা-ইসতেগফার ও জিকির আজকারের কথাই বলা হয়েছে।
তাই মুয়াল্লিম হজ করিয়ে দেবে আবার দোয়াও পড়িয়ে দেবে এমনটি যেন না হয়। হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই হজের নিয়ম-কানুন, বিধানাবলী ও দোয়াগুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া এবং শিখে নেয়া।
-এএ