সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

মৃত্যুর আগে শেষ বক্তব্যে যা বলেছিলেন হাফেজ মুরসি রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম

হাফেজ মুহাম্মাদ মুরসি ইসা আল-আইয়াত। একটি জীবন্ত ইতিহাসের নাম। তিনি ২০ অগাস্ট ১৯৫১ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একই সঙ্গে ছিলেন একজন মিশরীয় রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী ও পঞ্চম রাষ্ট্রপতি।

হাফেজ মুরসি রহ. ২০০০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত মিশরের সংসদে বহাল ছিলেন। এ সময়ে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

২০১১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে মুরসী তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। মিশরের দুই পর্বের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যেটি ২০১২ সালের মে ও জুনে অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনে মুরসী এফজেপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। উভয় পর্বেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

হাফেজ মুরসি গতকাল ১৭ জুন সোমবার মিসরের একটি আদালতের এজলাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর আগে তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার অনুবাদ আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরের টুইটার থেকে এ বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

মিসরের একটি আদালতের এজলাসে গতকাল সোমবার মৃত্যুর আগ মুহুর্তের বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি আদালতের কাছ থেকে বেশি সময় নিবো না। আমি আপনাদের সামনে উস্তাদ আল কামেল মানদুর একটি কথা উপস্থাপন করতে চাই।

আমি স্পষ্ট করতে চাই, আদালতের বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতার অভাবের কারণে মামলার অযোগ্যতা নিয়ে তিনি বহু আগে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, এ দেশ বিপ্লব করেছে, একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বহু সময় পার করে এসেছে।

এটি অস্বীকার করবে না কেউ। আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বলছি, এ দেশ এখনো আইনের দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তারপরও আমাদের কিছুই করার নেই।

দ্বিতীয়ত, আমি বলতে চাই, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে মামলার বিষয়ে জনাব কামেলের কথা বিবেচনা করা উচিত। আমি আদালতে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি ব্যক্তিগত অধিবেশনে একসাথে বসব। কিন্তু সে অস্বীকার করে। আমি আজ কারাগার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছি না, তারপরও আমি বলবো আমি নির্দোষ। আমার উপর যে রাষ্ট্রীয় মামলা ঝুলিয়ে দিয়েছে আমি তার সুরাহা করতে পারবো না।

আমি বলতে চাই, আমার আন্দোলনের পিছনে অনেক কিছু আছে, আমি বলতে পারি না মুখ খুলে সবকিছ। এখন যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেক গোপন বিষয় আছে যা আমি জানি। কিন্তু এ বিষয়ে আমি মুখ খুলতে পারি না।

আজ আমি এমন এক জুলুম আর নির্যাতনের মুখে আছি। আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে রেখেছে। আর আদালত আমার জন্য এমন একজন আত্মরক্ষামূলক আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে রেখেঝে, যার সঙ্গে আমি সরাসরি কোনোদিন কথা বলতে পর্যন্ত পারিনি।

তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা বলতে হয়। এভাবে আমি আমাকে কোনো দিনও নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো না। আমি সব কিছুই প্রকাশ করেছিলাম আদালতে, কিন্তু আমার কাছে এ বন্দী অবস্থায় প্রমাণ আসবে কোথা থেকে।

তিনি তার বিরুদ্ধে মামলার কথা বলে বলেন, কায়রোর আদালতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ভিত্তিতে আমার ‍উপর মামলা করা হয়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, দেশের মাটিকে ভালোবাসি। আমি আমার দেশের কোনো ক্ষতি করতে পারি না। তিনি একটি শের পাঠ করেন।

আমি আমার দেশে আমার পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি,  তারপরও আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, সম্মান করি। আমার দেশ আমাকে নিয়ে যদিও তামাশায় লিপ্ত থাকে, তারপরও আমি আমার আমার দেশকে নিয়ে গর্ব করি।

তৃতীয়ত আমি বলবো, নদীতে অনেক পানি আছে, নদীর পানি প্রবাহিত হবে। বিচারক তার পরিবেশ ও আদেশ মেনে কাজ করবে। সংবিধান ও আইন তাদের মত করে চলবে। কিন্তু আমরা কোনো দিন আর মুক্তির চেহারা দেখবো না। কারণ আমরা তো অসাংবিধানিক হয়ে গেছি।

প্রজাতন্ত্রের নামে যে রাষ্ট্রপতি হয়। তারা অত্যাচার নির্যাতন করতে পছন্দ করেন তাদের শত্রুদের। আমি আশ্চর্য হই, সংবিধান পড়া একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রের সংবিধান কিভাবে ঘুরিয়ে দেয়, বাতিল করে দেয়!

আজ তাদের অবস্থান সম্পর্কে কুরআনের আয়াতের সঙ্গে বলতে হয়- তাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ্বালালো এবং তার চারদিককার সবকিছুকে যখন আগুন স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে, তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। সুরা বাকারা-১৭-১৮।

আমি সত্যের পক্ষে ছিলাম আছি থাকবো। আমার মুখ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমার জন্য যারা মুখ খুলেছেন আল্লাহ তায়ালা তাদের জাযা দান করুন।

জানা যায়, হাফেজ মুরসি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, এ কারাগারে তারা আমাকে কুরআন দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু তারা জানে না আল্লাহ তায়ালা আমার হৃদয়ে অনেক আগেই কুরআন ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমি শুধু কুরআন কে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ